পিট্টু

ভারতীয় উপমহাদেশের একটি খেলা

পিট্টু বা সাতচাড়া (এটি বিভিন্ন নামেও পরিচিত) ভারতীয় উপমহাদেশের একটি খেলা। খেলাটি খেলতে একটি বল ও কিছু ইট বা পাথরের টুকরো লাগে। এই খেলাটি সাধারণত বড় মাঠে দুটি দলের মধ্যে খেলা হয়। এই খেলাটি গ্রামাঞ্চলে বেশি খেলা হয়।[][]

পিট্টু
সাতচাড়া
ঘুঁটি সাজানোর সময়কালএক মিনিটেরও কম
খেলার সময়৩ মিনিট
দৈবসুযোগকম
প্রয়োজনীয় দক্ষতাদৌড়, পর্যবেক্ষণ, গতি, শক্তি, নিক্ষেপ এবং একাগ্রতা
সাতচাড়া খেলা
ব্যাঙ্গালোরের রাস্তায় শিশুরা লাগোরি খেলছে

ইতিহাস

সম্পাদনা

পিট্টু বা সাতচাড়া, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন খেলা, যার উল্লেখ ভাগবত পুরাণে পাওয়া যায়। ভাগবত পুরাণ একটি হিন্দু ধর্মীয় পাঠ যা ৫০০০ বছর আগে রচিত বলে দাবি করা হয়। এতে উল্লেখ আছে যে ভগবান কৃষ্ণ তাঁর বন্ধুদের সাথে খেলাটি খেলেছিলেন। এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি সর্বশেষ ৫ সহস্রাব্দ ধরে খেলা হচ্ছে। ধারণা করা হয় এটি ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ অংশে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশকে এটি ভারত ও পাকিস্তানে খেলা অন্যতম ক্রীড়া ছিল। তবে এখন খুব কম লোকই এই খেলাটি খেলে যার ফলেবিলুপ্তপ্রায়।

খেলার নিয়ম

সম্পাদনা

একটি দলের একজন সদস্য একটি পাথর বা ছড়ার স্তুপে একটি বল ছুড়ে মারে। তারপর, প্রতিপক্ষ দল পাথরের স্তুপটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে যেন তারা নিজেদেরকে বিপক্ষ দল থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। আঘাতকারীদের (অর্থাৎ যে দলটি বলটি ছুড়ে ছিল তাঁদের) উদ্দেশ্যটি হল বিপক্ষ দলটি পাথরের স্তুপটি গঠন পুনঃসম্পূর্ণ করার আগেই তাদের সদস্যদের গায়ে বল ছুড়ে স্পর্শ করা। যদি বলটি কোনও সদস্যকে স্পর্শ করে, তবে সে সদস্য খেলে থেকে বাইরে চলে যায়। একজন সন্ধানকারী তার নিজের গায়ে বল লাগার আগে, বিপক্ষ দলের কাউকে ছুয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।

অতিরিক্ত বিধি

সম্পাদনা
  • উভয় দল পাথরের স্তুপটির কাছাকাছি আসতে পারবে না। উভয় দলের সামনে একটি করে রেখা কিংবা দাগ টানা বা আঁকা থাকবে, যার বাইরে গিয়ে তারা পাথরের স্তুপটিতে বল নিক্ষেপ করতে পারবে না।
  • যে ব্যাক্তি তিন বার চেষ্টা করার পরও পাথরের স্তুপটিতে বল লাগাতে পারবে না, সে ব্যক্তি বাদ হিসেবে গণ্য হবে।
  • যদি কোনো ব্যাক্তি প্রথম বার চেষ্টা করে পাথরের স্তুপটিতে বল লাগাতে না পারে এবং দ্বিতীয় বার বল নিক্ষেপের সময় যদি বিপক্ষের কোনো সদস্য নিক্ষেপৃত বলটি ধরে ফেলে, তবে যে ব্যাক্তি বলটি নিক্ষেপ করেছিল সে খেলা হতে বের হয়ে যাবে।
  • প্রতিটি দলে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় আবশ্যক।
  • পাথরের স্তূপটিতে ৭ বা ৫ টি পাথর থাকবে।
  • নিক্ষেপকারী বল হাতে নিয়ে দৌড়িয়ে সন্ধানকারীর দিকে বল ছুড়তে পারবে না। তাঁকে জায়গায় দাঁড়িয়ে তা করতে হবে।
  • সন্ধানকারী, পাথরের স্তূপটির গঠন পুনঃসম্পূর্ণ করার পরে, 'সাতচাড়া' উচ্চস্বরে বলে খেলা শেষ করবে।

বর্তমান সময়ে

সম্পাদনা

আগে, সারা দেশের বাচ্চারা মাঠে একসাথে অতি আরগ্রহের সাথে খেলতে আসত। ফুটবল এবং ক্রিকেট সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হলেও, তখনও তারা অনেক প্রাচীন খেলা যেমন কাবাডি, খো-খো এবং গিলি দন্ডের মতো খেলাগুলো খেলত।

সময়ের সাথে সাথে, এই ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর বেশিরভাগ বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে এবং খুব কমই মানুষই এইসব খেলা এখন খেলে বা সম্পর্কে জানে। অন্যদিকে উদাহরণস্বরূপ, কাবাডি যা বেশকিছু বছর আগেও এতটা জনপ্রিয় ছিল না বা খেলা হতো না। আজ থেকে ৭ বছর আগে যদি, কোনো শিশুকে কাবাডি সম্পর্কে বলা হতো তখন শুধু শিশু নয়, তাদের পিতা মাতাও এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না। কিন্তূ কাবাডি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলায় পরিণত হওয়ায়, আবার এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি সকলে খেলার জন্য ইচ্ছা পোষণ শুরু করে। ফলে, এখন গ্রামের অনেক অঞ্চলে এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি খেলতে দেখা যায়।

বর্তমানে, লেগোরি বা পিট্টু বা সাতচড়া বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৩০টিরও বেশি জাতি খেলেছে। খেলাটি ধীরে ধীরে বৈশ্বিক খ্যাতি অর্জন করেছে। তবে, ভারত হল একটি বড় প্ল্যাটফর্ম এবং খেলাটির বিকাশের কেন্দ্রস্থল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতের অপেশাদার লাগরি ফেডারেশন দ্বারা আয়োজিত, ইন্ডিয়ান লাগোরি প্রিমিয়ার লিগ সারা দেশ জুড়ে দুর্দান্ত সুনাম কুড়ায়। তারা এই খেলাকে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলিতেও জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় লাগরি বিশ্বকাপ (২০১৫ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল) ওই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে ভারত, ভুটান হংকং, ব্রাজিল, টার্কিট, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, এবং নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ মুখোমুখি হয়েছিল।

প্রাচীনকাল থেকে এই খেলার নিয়মগুলিতে খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি, তবে বর্তমানে খেলাটিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক লাগোরি ফাউন্ডেশন নিম্নলিখিত মৌলিক নিয়মগুলি জারি করে: প্রতিটি দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকবে এবং প্রতিটি সেট ৬ জন খেলোয়াড় থাকবে। একটি সেট ৩ মিনিট স্থায়ী হবে, তারপরে সেটের মধ্যে অর্ধ মিনিটের বিরতি দেয়া হবে। একটি ম্যাচে সাধারণত ৩টি সেট থাকবে এবং যে দলটি সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিতে পারবে সে দল বিজয়ী হিসেবে গণ্য হবে। এগুলো ব্যতীত, বাকি নিয়মগুলি আগের মতই ছিল।

গত কয়েক দশকে খেলাটি প্রায় ভুলে যাওয়া বা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খেলায় পরিণত হলেও, ২০১৫ সালের লাগোরি উদ্বোধনী বিশ্বকাপ একটি বিশাল সাফল্য ছিল।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Bennur, Shankar (২০১৫-০৪-১৫)। "Lagori league formed to popularise the traditional sport in State"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮ 
  2. "Taking You Back To the 90s: Do You Remember Playing Lagori?"Playo (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৮-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা