পার্থেনিয়াম
পার্থেনিয়াম (ইংরেজি: Parthenium) ডেজি পরিবারের মধ্যে সূর্যমুখী উপজাতিদের উত্তর আমেরিকান গুল্ম প্রজাতির একটি বংশধর।[৩][৪] শিরাযুক্ত, নরম কাণ্ডবিশিষ্ট একবর্ষজীবি, গুল্মজাতীয় আগাছাটির নাম পার্থেনিয়াম। নামটি গ্রিক শব্দ παρθένος (parthenos) থেকে উদ্ভূত হয়, অর্থ "কুমারী," বা παρθένιον (parthenion), এটি উদ্ভিদের একটি প্রাচীন নাম।[৫]
পার্থেনিয়াম ফিবারফিউ Guayule | |
---|---|
Parthenium hysterophorus | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
শ্রেণীবিহীন: | Angiosperms |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Asterids |
বর্গ: | Asterales |
পরিবার: | Asteraceae |
উপপরিবার: | Asteroideae |
গোত্র: | Heliantheae[১] |
গণ: | Parthenium L. |
আদর্শ প্রজাতি | |
Parthenium hysterophorus[২][৩] L. | |
প্রতিশব্দ[১] | |
|
এর আরও কয়েকটি নাম হল : কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী, হোয়াইট টপ ও স্টার উইড প্রভৃতি। উদ্ভিদ জগতে কম্পোসিটি পরিবারভুক্ত এর প্রজাতির সংখ্যা ১৬ টি। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য কয়েকটি হল –Parthenium argentatum, cineraceum, incanum,tementosum প্রভৃতি। আমাদের দেশে যে পার্থেনিয়াম দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম – Parthenium hysterophorus। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ১৬ টি প্রজাতির মধ্যে এটিই সবথেকে বিষাক্ত উদ্ভিদ।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাপত্র খাঁজযুক্ত, অনেকটা চন্দ্রমল্লিকা গাছের পাতার মতো। জন্মের মাসখানেকের মধ্যেই ফুল ধরে। ফুলগুলি সাদা ও ক্ষুদ্রকার। চার মাসের মধ্যে জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে। একটি গাছ থেকে ৪-৫ হাজার গাছ জন্মাতে পারে। এটাই পার্থেনিয়ামের দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণ। বীজ হালকা ও প্যারাসুটের মতো হওয়ার কারণে তা দ্রুতগতিতেই ছড়িয়ে পড়ে এবং এইভাবেই সে তার বংশবিস্তার করে দ্রুততার সাথে বিস্তার করে।
বংশবিস্তার
সম্পাদনাআদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এবং উত্তর-পূর্ব মেক্সিকো। কিন্তু ভারতবর্ষে এই আগাছা আসার ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে গৃহীত একটি আইনের নাম পিএল-৪৮০ অর্থাৎ পাবলিক ল -৪৮০। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে খাদ্যশস্য সাহায্যের জন্যই এই আইনের অধীনে ভারতবর্ষে পাঠানো হতো গম। সেটা ১৯৪৫ সালের কথা, এদেশ তখনও খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। এই আমদানিকৃত গমের মধ্যেই এদেশে প্রবেশ করে পার্থেনিয়াম। ১৯৫৫-৫৬ সালে মহারাষ্ট্রের পুনেতে অধ্যাপক এইচ. পি.পরাঞ্জপে প্রথম পার্থেনিয়াম গাছের দেখা পান। অবশ্য ইতিহাস বলছে ১৮৮৮ সালে দেরাদুনের বন গবেষণার অধ্যক্ষ ডি. ব্রান্ডিসের তৈরি হার্বেরিয়ামে পার্থেনিয়াম আগাছার দেখা পাওয়া গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এই আগাছা প্রথম দেখা যায় ডানকুনি রেলইয়ার্ডে ১৯৭৫ সালে। এখন বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের সর্বত্রই এই গাছ দেখা যায়। ভারতে একমাত্র রাজস্থান বাদে বাকী সবকটি রাজ্যেই এর প্রাদূর্ভাব আছে। এদেশে এই আগাছাটির অধিকৃত জমির পরিমাণ ৫০-৬০ লক্ষ হেক্টর।
ব্যবহারসমূহ
সম্পাদনাউত্তর আমেরিকায়, জিকারিলা আপাচি মানুষ ওষুধের জন্য পার্থেনিয়াম ইনক্যানাম ব্যবহার করত (ওপলার ১৯৫৬: ৮)। গুয়াউলের রস (পার্থেনিয়াম আর্জেন্টিতাম)।
অপকারিতা
সম্পাদনাএই পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফুলের রেনুতে অবস্থিত " সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন " (Sesquiter-pene Lactone বা SQL) জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ " পার্থেনিন "। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিকগুলি হল, -- ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড প্রভৃতি। ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগ হতে পারে। যেমন, -- Contact darmatitis, skin alargy, eczema ইত্যাদি। ফুলের রেনু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর হয়। গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়। এর পুষ্পরেনু বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরনের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে। পার্থেনিয়াম ভক্ষণে মোষ, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া ও ছাগলের মুখে ও পৌষ্টিকতন্ত্রে ঘা, যকৃতে পচন প্রভৃতি রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের অধিক সচেতন থাকতে হবে। কারণ তাদের চামড়ায় এই রস লাগালে, সেখানে ক্যান্সার হতে পারে।
দমন পদ্ধতি
সম্পাদনাহেক্টর প্রতি ১-১.৫ কেজি হারে আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করলে এই গাছ সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়। খাদ্য লবণের ১৫% দ্রবণে (১লিটার জল + ১৫০ গ্রাম লবণ) আগাছার উপর ছিটিয়ে দিলে আগাছা শুকিয়ে যায়। তারপর শুকনো গাছে আগুন ধরিয়ে দিলেই ধ্বংস করা যায় সহজেই।
সতর্কতা
সম্পাদনাতবে এই আগাছা দমন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা একান্তই জরুরী। সমস্তকিছু করতে হবে হাতে রাবারের গ্লাভস বা পলিথিন প্যাকেট জড়িয়ে ও মুখে পাতলা মাক্স পরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত। বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়েই এই আগাছায় হাত দেওয়া দরকার, না হলে অসুবিধে হতে পারে। আমাদের চারপাশে যেভাবে এর বিস্তার ঘটছে অনেকটাই অজ্ঞাতসারে।
শঙ্কা ও করণীয়
সম্পাদনাসমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে হু-হু করে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়ংকর আগাছা। অযাচিতভাবে উৎপন্ন লক্ষ - লক্ষ করে ছেয়ে যাচ্ছে ভারতবর্ষের ভূ-ভাগ। জনসাধারণকে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে চিকিৎসক, বিজ্ঞানকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে, একে কীভাবে নির্মূলকরন করা যায় সে বিষয়ে। এইসব যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গল। যেভাবে এই আগাছাটি দূর্বার গতিতে বিস্তার করছে তাতে আগামীদিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই ক্ষতিকর আগাছাটির সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে ও আগাছাটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
ওয়াইল্ড কুইনাইন (Parthenium integrifolium)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;a
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ lectotype designated by N.L. Britton & A. Brown, Ill. fl. n. U.S., ed. 2. 3: 464 (1913)
- ↑ ক খ Tropicos, Parthenium L.
- ↑ Linnaeus, Carl von. 1753. Species Plantarum 2: 988 in Latin
- ↑ Strother, John L.। "Parthenium Linnaeus, Sp. Pl. 2: 988. 1753; Gen. Pl. ed. 5, 426. 1754."। Flora of North America। eFloras.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-০৯।