পাক (প্রাকৃতিক উপগ্রহ)

ইউরেনাসের উপগ্রহ

পাক হল ইউরেনাসের একটি অভ্যন্তরীণ উপগ্রহ। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ভয়েজার ২ মহাকাশযানের মাধ্যমে এটি আবিষ্কৃত হয়।[] প্রচলিতরীতি অনুযায়ী উইলিয়াম শেকসপিয়রের গল্পের চরিত্রের নামে পাক-এর নামকরণ করা হয়। ইউরেনাসের প্রথম বড় চাঁদ মিরান্ডাইউরেনাসের বলয়ের মাঝামাঝি এর কক্ষপথ বিদ্যমান। এর ব্যাস প্রায় ১৬২ কিলোমিটার (১০১ মা) এবং দেখতে বর্তুলাকার (গোলাকার)।[] এর পৃষ্ঠতল গহ্বরযুক্ত এবং অত্যন্ত অন্ধকার; যেখানে বরফ বিদ্যমান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[১০]

পাক
১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে ভয়েজার ২ কতৃক চিত্রিত পাক। চিত্রে পাকের দক্ষিণ মেরু দৃশ্যমান। কম রেজোলিউশন থাকা সত্ত্বেও, উপরের ডানদিকে বোগল সহ বেশকয়েকটি খাদ চিহ্নিত করা হয়েছে।
আবিষ্কার[]
আবিষ্কারকস্টিফেন পি.সায়নট / ভয়েজার ২
আবিষ্কারের তারিখডিসেম্বর ৩০, ১৯৮৫
বিবরণ
উচ্চারণ/ˈpʌk/[]
বিশেষণপাকিয়ান[]
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য[]
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ৮৬০০৪.৪৪৪±০.০৬৪ কিমি
উৎকেন্দ্রিকতা০.০০০১২±০.০০০০৬১
কক্ষীয় পর্যায়কাল০.৭৬১৮৩২৮৭±০.০০০০০০০১৪ d
গড় কক্ষীয় দ্রুতি৮.২১ কিমি/সে[]
নতি০.৩১৯২১°±০.০২১° (ইউরেনাসের বিষুবরেখা)
যার উপগ্রহইউরেনাস
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
মাত্রাসমূহ১৬২ × ১৬২ × ১৬২ কিমি[][]
গড় ব্যাসার্ধ৮১±২ কিমি[]
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল৮২০০০ km2[]
আয়তন২২২৬১০০±৭.৮% km3[]
ভর(১.৯১±০.৬৪)×১০১৮ কিg[]
গড় ঘনত্ব~০.৮৫৮ গ্রা/সেমি৩[]
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ~০.০১৯ m/s2[]
মুক্তি বেগ~০.০৫৬ কিমি/সে[]
ঘূর্ণনকালসমলয় []
অক্ষীয় ঢালশূণ্য[]
প্রতিফলন অনুপাত
  • ০.১১±০.০১৫ (জ্যামিতিক)
  • ০.০৩৫±০.০০৬ (বন্ধন) ০.৫৫ μm[]
তাপমাত্রা~৬৫ K[]
আপাত মান২০.৫[]

আবিষ্কার ও নামকরণ

সম্পাদনা

পাক ইউরেনাসের অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়; যা ১৯৮৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভয়েজার ২ মহাকাশযান কর্তৃক গৃহীত ছবির মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়। এস/১৯৮৫ ইউ ১ নামেও কিছুদিন এটি পরিচিত ছিল।[১১]

পরবর্তীতে উইলিয়াম শেকসপিয়রের অ্যা মিডসামার নাইট'স ড্রিম গল্পের চরিত্র পাক (এক ছোটো পরী যে তার ডানার সাহায্যে রাতে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতো) অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়। গ্রিক পুরাণ ও ইংরেজি লোকজ্ঞান অনুযায়ী খ্রিষ্টানদের কাছে পাক মন্দ পিশাচ নামে পরিচিত।

এটি ইউরেনাস এক্সভি নামেও পরিচিত।[১২]

গাঠনিক বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

ইউরেনাসের অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে পাক, যার কক্ষপথ মিরান্ডার কক্ষপথের ভিতরে অবস্থিত। এর আকার পোর্শিয়া (দ্বিতীয় বড় অভ্যন্তরীণ চন্দ্র) এবং মিরান্ডা (পাঁচ বড় শাস্ত্রীয় চন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে ছোট) এর মাঝামাঝি। ইউরেনাসের বলয় এবং মিরান্ডার কক্ষপথের মাঝামাঝি পাক-এর কক্ষপথ অবস্থিত। পাক সম্পর্কে কক্ষপথের অবস্থান ছাড়া খুব অল্পকিছুই জানা সম্ভব হয়েছে।[] এর ব্যাসার্ধ ৮১ কিলোমিটার (৫০ মা) কিমি[] এবং দৃশ্যমান আলোর প্রতিফলন মাত্রা প্রায় ০.১১।[]

ভয়েজার ২ মহাকাশযানের আলোকচিত্র গ্রহণকারী দলের আলোকচিত্র দ্বারা যতগুলো চাঁদ আবিষ্কার করা হয়েছে তার মধ্যে পাক-এর আবিষ্কার এবং এর রহস্যভেদ দ্রুত করা সম্ভব হয়েছে।[] আলোকচিত্র থেকে বোঝা যায় যে এটির আকৃতি অনেকটাই বর্তুলাকার (অক্ষদ্বয়ের মধ্যবর্তী অনুপাত ০.৯৩-১)।[] এর পৃষ্ঠতল বেশ গহ্বরময়[] এবং ধূসর বর্ণের।[] এর পৃষ্ঠতলে তিন নামে খাদ রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ব্যাস ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মা)।[] হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের লার্জ টেরিস্ট্রিয়াল টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ দ্বারা এর মধ্যে বরফের অস্তিত্ব ধারণা করা হয়।[][১০]

পাকের আভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে তেমন কিছু এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। ধারণা করা হয় এটি বলয় এর অনুরূপ আলোহীন উপাদান এবং বরফের মিশ্রণ দ্বারা গঠিত।[১০] আলোহীন উপাদানগুলো সম্ভবত পাথর এবং তেজস্ক্রিয় জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত। খাদগুলোর মধ্যে উজ্জ্বল আলোক রশ্মির অনুপস্থিতি বোঝায় যে পাক এখনো পৃথককরণ হয় নি, অর্থাৎ বরফ এবং বরফ-ছাড়া পদার্থগুলো অভ্যন্তরে এখনোও একে অপরের সাথে লেগে আছে।[]

নামযুক্ত বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

পাক-এর বোগল, বাটজ এবং লব নামে তিনটি খাদ রয়েছে, যেগুলি যথাক্রমে স্কটিশ, জার্মান এবং ব্রিটিশ লোককাহিনীর খারাপ আত্মাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই খাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্তমানে অজানা।

 
পাকের নামকৃত খাদ্সমূহ
Crater স্থানাঙ্ক ব্যাস (কিমি) অনুমোদনের তারিখ যার নামে নামকরণ সূত্র
বোগল ~৪৭ কিমি[১৩] ১৯৮৮ বোগল (কেল্টীয়) ডাব্লুজিপিএসএন
বাটজ ১৯৮৮ বাটজ (জার্মান) ডাব্লুজিপিএসএন
লব ১৯৮৮ লব (ইংরেজি) ডাব্লুজিপিএসএন

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. অন্যান্য পরামিতিগুলির ভিত্তিতে গণনা করা হয়।
  2. মাত্র দুটি মাত্রা জানা যায়; তৃতীয় মাত্রাটি অন্য দুটির সমান বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. স্মিথ, সোডারব্লম ১৯৮৬
  2. "Puck"লেক্সিকো ইউকে ইংরেজি অভিধানঅক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। মার্চ ২, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. সেডগউইক (১৯৯৯) শেকসপিয়র অ্যান্ড দি ইয়ং রাইটার
  4. জ্যাকবসন ১৯৯৮
  5. কার্কোশকা, ভয়েজার ২০০১
  6. ফ্রেঞ্চ ২০২৪
  7. Jacobson (2023), as cited in French et al. (2024)[]
  8. কার্কোশকা, হাবল ২০০১
  9. থমাস, ভেভারকা 1987
  10. ডুমাস, স্মিথ ২০০৩
  11. IAUC 4159
  12. ইউএসজিএস: গ্রহ ও উপগ্রহের নাম এবং আবিষ্কারক
  13. কার্টরাইট ও অন্যান্য ২০২১
  • কার্টরাইট, রিচার্ড জে.; বেডিংফিল্ড, ক্লো বি.; নর্ডহাইম, টম এ.; ও অন্যান্য (জুন ২০২১)। "The Science Case for Spacecraft Exploration of the Uranian Satellites: Candidate Ocean Worlds in an Ice Giant System"। প্ল্যানেটারি সোসাইটি জার্নাল (৩): ১২০। arXiv:2105.01164 ডিওআই:10.3847/PSJ/abfe12 বিবকোড:2021PSJ.....2..120C 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা