পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ ছিলো ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। সর্বাধিনায়ক ছিলেন সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক, তার পদবি ছিলো পূর্ণ জেনারেল এবং এটি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদের অনুকরণে তৈরি ছিলো। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম দুইজন সর্বাধিনায়ক ইংরেজ ছিলেন। ১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম একজন স্থানীয় পাকিস্তানি এই সর্বাধিনায়কের পদ পান আর তিনি ছিলেন জেনারেল আইয়ুব খান।[২]:১০৫ এই সর্বাধিনায়ক পদটি ব্রিটিশরাই তৈরি করে যায়; ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাংশ হতে নবগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আসেন ইংরেজ সেনাপতি জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক মেসার্ভি যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ডিভিশন অধিনায়ক ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একেবারে শুরুতে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল-এর অনুমতি নিয়ে চলতো এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (পাকিস্তানের জনক হিসেবে পরিচিত) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়মকানুন প্রণয়নের জন্য ইংরেজদেরকেই নির্দেশ দিয়েছিলেন।[২] পাকিস্তান সেনাবাহিনী শুরুতে ফিল্ড কোর ফরমেশন নিয়ে যাত্রা শুরু না করলেও সর্বাধিনায়কের পদবি পূর্ণ জেনারেল রাখা হয় পাশের দেশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমপর্যায়ে।[৩]
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক | |
---|---|
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (পাকিস্তান) সেনা সচিবালয় -১ (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়)[১] | |
আসন | সেনাবাহিনী সদর দপ্তর, রাওয়ালপিন্ডি |
মনোনয়নদাতা | পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি |
নিয়োগকর্তা | পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি |
গঠন | ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ |
প্রথম | জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক মেসার্ভি |
সর্বশেষ | লেঃ জেনারেল গুল হাসান খান |
বিলুপ্ত | ৩ মার্চ ১৯৭২ |
পরবর্তী | সেনাবাহিনী প্রধান |
ডেপুটি | উপ সর্বাধিনায়ক/চীফ অব জেনারেল স্টাফ |
সর্বাধিনায়ক উপ সর্বাধিনায়ক বা চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) দ্বারা সহায়িত হতেন; ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত উপ সর্বাধিনায়ক পদটি চালু ছিলো। লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান খান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ সর্বাধিনায়ক যিনি ১৯৭২ সালে অবসরে গমন করেন আর একই বছর নবগঠিত সেনাবাহিনী প্রধান পদে বসেন জেনারেল টিক্কা খান। সর্বাধিনায়ক হিসেবে মাত্র ছয় জন জেনারেল নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং তাদের প্রথম দুইজন ছিলেন ইংরেজ; সর্বশেষ সর্বাধিনায়ক পূর্ণ জেনারেল ছিলেননা।
ইতিহাস
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রাওয়ালপিন্ডিতে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্থ-ওয়েস্ট কমান্ড-এর সদর দপ্তর ছিলো; ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল হেড কোয়ার্টার্স বা সেনাবাহিনী সদর দপ্তর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এই রাওয়ালপিন্ডির দপ্তরই।[৩] ভারতীয় সেনাবাহিনী গঠিত হবার পর হিন্দু কর্মকর্তা-সৈনিক ভারতে চলে যাওয়া শুরু করে আর ভারতে যেসকল মুসলিম সৈনিক-কর্মকর্তা ছিলো তারা পাকিস্তানে এসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া শুরু করে। আইয়ুব খান ১৯৪৭ সালে কর্নেল ছিলেন, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই রাতারাতি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং ১৯৪৮ সালে হন মেজর জেনারেল আর ১৯৫১ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবি ডিঙিয়ে আইয়ুবকে পূর্ণ জেনারেল পদবি দিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। আইয়ুবের সর্বাধিনায়ক পদ কত সাল পর্যন্ত হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা ছিলোনা, শুধু বলা ছিলো আইয়ুবের বয়স ৫৫ হলেই আইয়ুব সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাবেন, কিন্তু আইয়ুব ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান এবং তখন তার বয়স ছিলো ৫১ বছর, তিনি জেনারেল মুহাম্মদ মুসা খানকে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেন আর আইয়ুব ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিভিশন ফরমেশন থেকে ফিল্ড কোরে উন্নীত করেন। জেনারেল মুসা'র পরে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সর্বাধিনায়কের পদ পান ১৯৬৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে এবং তিনি ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগ করলে সামরিক আইন জারি করেন এবং জেনারেল আব্দুল হামিদ খানকে 'প্রধান সেনা স্টাফ কর্মকর্তা' হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৭১ সালের ২০শে ডিসেম্বর লেফটেনেন্ট জেনারেল গুল হাসান খানকে সর্বাধিনায়ক করা হয় এবং এই পদে বসা তিনিই ছিলেন সর্বশেষ জেনারেল।
সর্বাধিনায়কদের তালিকা
সম্পাদনানং | ছবি | সর্বাধিনায়ক | কার্যালয়ে বসার তারিখ | কার্যালয় ত্যাগের তারিখ | মেয়াদকাল | কমিশনপ্রাপ্তির রেজিমেন্ট |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ফ্র্যাঙ্ক মেসার্ভি (১৮৯৩–১৯৭৪) | জেনারেল১৪ আগস্ট ১৯৪৭ | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ | ১৭৯ দিন | ৯ম হডসন অশ্বারোহী সেনাদল | |
২ | ডগলাস গ্রেসি (১৮৯৪–১৯৬৪) | জেনারেল১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ | ১৭ জানুয়ারী ১৯৫১ | ২ বছর, ৩৩৯ দিন | ১ গোর্খা রাইফেলস রেজিমেন্ট | |
৩ | আইয়ুব খান (১৯০৭–১৯৭৪) | ফিল্ড মার্শাল১৭ জানুয়ারী ১৯৫১ | ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ | ৭ বছর, ২৮৪ দিন | পাঞ্জাব রেজিমেন্ট (ভারত) | |
৪ | মুহাম্মদ মুসা খান (১৯০৮–১৯৯১) | জেনারেল২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ | ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ | ৭ বছর, ৩২৫ দিন | ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট | |
৫ | ইয়াহিয়া খান (১৯১৭–১৯৮০) | জেনারেল১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ | ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ | ৫ বছর, ৯৩ দিন | বেলুচ রেজিমেন্ট | |
৬ | গুল হাসান খান (১৯২১–১৯৯৯) | লেফটেনান্ট জেনারেল২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ | ২ মার্চ ১৯৭২ | ৫ বছর, ৯৩ দিন | ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট |
১৯৬৫ এবং '৭১ সালের যুদ্ধের জেনারেলগণ
সম্পাদনাভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫-তে মাত্র দুইজন লেঃ জেনারেল ছিলেন, একজন ছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত (জেনারেল আলতাফ কাদের) আর আরেকজন ছিলেন ১ কোর-এর অধিনায়ক (জেনারেল বখতিয়ার রানা)। সর্বাধিনায়ক বাদে বাদবাকি সব জেনারেল মেজর জেনারেল ছিলেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১-তে লেঃ জেনারেলদের সংখ্যা ১৩ জন হয়ে যায়। এসকল জেনারেলদের মধ্যে চারজন ছিলেন সেনা সদরে, একজন তুরস্কে রাষ্ট্রদূত হিসেবে, চার জন ফিল্ড কোর অধিনায়ক হিসেবে এবং চারজন সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে (প্রাদেশিক প্রশাসক); অপরদিকে সক্রিয় পূর্ণ জেনারেল দুইজন ছিলো- ইয়াহিয়া খান এবং আব্দুল হামিদ খান, এই দুইজনের প্রথম জন ছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, দ্বিতীয় জন ছিলেন সেনা স্টাফ প্রধান বা কার্যত সেনা সর্বাধিনায়ক। লেঃ জেনারেল গুল হাসান খান ছিলেন সেনা সদরের চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) , লেঃ জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের অধিনায়ক, লেঃ জেনারেল টিক্কা খান ২য় কোর-এর অধিনায়ক, ৪ কোর-এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল বাহাদুর শের খান; জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন ছিলেন সেনা সদরে মাস্টার-জেনারেল অব অর্ডন্যান্স। সেনা সদরের অন্যান্য গুরুতপূর্ণ জেনারেল পদ-মেজর জেনারেলদের হাতে ছিলো।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ MoD, Ministry of Defence। "Organogram of MoD" (পিডিএফ)। Ministry of Defence (Pakistan)। Ministry of Defence Press। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৭।
- ↑ ক খ Bajwa, Kuldip Singh (২০০৩)। "Kashmir Valley saved"। Jammu and Kashmir War, 1947-1948: Political and Military Perspective (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। New Delhi, India: Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 320। আইএসবিএন 9788124109236। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ Cloughley, Brian (২০১৬)। A History of the Pakistan Army: Wars and Insurrections (ইংরেজি ভাষায়)। Skyhorse Publishing, Inc.। আইএসবিএন 9781631440397। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।