পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে:পবিপ্রবি) বাংলাদেশের একটি সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলাতে অবস্থিত। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়।[৩]
প্রাক্তন নাম | পটুয়াখালী কৃষি কলেজ |
---|---|
ধরন | সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থাপিত | ১৯৭২ ৮ জুলাই ২০০০ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে | কলেজ হিসাবে
অধিভুক্তি | বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ |
বাজেট | ৳১০২.৬৮ কোটি (২০২৪-২৫)[১] |
ইআইআইএন | ১৩৬৬২১ |
আচার্য | রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
উপাচার্য | অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম[২] |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ২০৯ |
শিক্ষার্থী | ৩,০০০ |
ঠিকানা | , , |
শিক্ষাঙ্গন | ১০৯.৯৭ একর |
ভাষা | ইংরেজি |
সংক্ষিপ্ত নাম | পবিপ্রবি |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
সম্পাদনাপটুয়াখালীর প্রবেশপথে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালীস্থ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ার থেকে ৫ কিলোমিটার পুবে দুমকি উপজেলা সদরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালী কৃষি কলেজ; যা ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের অধিভুক্ত হয়ে বেসরকারি কৃষি কলেজ হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০০ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কৃষি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ বিলুপ্ত করে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয় এবং ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাস্তব রূপ লাভ করে। প্রথমিকভাবে এর অবকাঠামো উন্নয়নে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।[৩]
প্রশাসন
সম্পাদনাবর্তমানে অধ্যাপক অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
উপাচার্য
সম্পাদনাএই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। |
নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন:
- অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন (২০০৮ - ২০১২)
- অধ্যাপক ড. শামস-উদ-দীন (২০১২ – ২০১৬)
- অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ (২০১৭ – ২০২১)
- অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত (২০২১ – ২০২৪)
- অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম (২০২৪ - বর্তমান)
ক্যাম্পাস
সম্পাদনা৯৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস; এর মধ্যে ৩৭ একর জমির ওপর বিশাল কৃষি গবেষণা খামার। মূল ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে বৃক্ষশোভিত সুদীর্ঘ একটি লেক রয়েছে। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ডিজাইনের পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল বিদ্যমান। একাডেমিক ভবন থেকে হোস্টেলে যাওয়ার পথেই মসজিদের অবস্থান। মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং এর উল্টো দিকে রয়েছে লাইব্রেরি ভবন। একটি প্রশস্ত রাস্তা ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে পুবের পীরতলা থেকে পশ্চিমের পটুয়াখালী-বাউফল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ সড়কের দক্ষিণ দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক কোয়ার্টার আর এর দক্ষিণে রয়েছে সৃজনী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মূল ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে পীরতলা বন্দর পেরুলেই ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে একটি আউট ক্যাম্পাস; যা বরিশাল জেলার খানপুরা বাবুগঞ্জে ১২.৯৭ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত।বহিঃস্থ ক্যাম্পাসটি বরিশাল জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত।। সাগর সৈকত কুয়াকাটায় ফিশারিজ ফ্যাকাল্টি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও ফরেস্টি বিজ্ঞানসহ তিনটি পৃথক অনুষদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।[৩]
শিক্ষা পদ্ধতি এবং অনুষদসমূহ
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৮টি অনুষদ এবং ৫২টি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান; অনুষদগুলো হলো:
- কৃষি অনুষদ
- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
- ব্যবসা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ
- এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ(ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন ও এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী)
- মৎসবিজ্ঞান অনুষদ
- পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ
- নিউট্রিশন ও ফুড ম্যানেজমেন্ট অনুষদ এবং
- ল এন্ড ল্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ
কৃষি অনুষদে ২০০ জন, এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ (ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এ ৬ ০জন ও এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী ৬০ জন) এবং বিবিএ ও সিএসই-তে ৭০ জন করে শিক্ষার্থী প্রতি সেশনে ভর্তির সুযোগ পায়। ২০১৫-১৬ সেশনে চালু করা হয় ব্যাচেলর অফ ল ইন ল এন্ড ল্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন প্রদানের মাধ্যমে একটি নতুন অনুষদ।[৩]
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকার কোর্স ক্রেডিট সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেমিস্টার পদ্ধতির এ শিক্ষা ব্যবস্থায় কোর্স যথাসময়ে শেষ হয় বিধায় কোনো সেশনজট থাকে না। আটটি সেমিস্টারে শিক্ষাপর্ব শেষ হয়। এ ছাড়াও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। হাতে-কলমে শিক্ষা দানের জন্য এখানে রয়েছে ১৪টি সমৃদ্ধ গবেষণাগার বা ল্যাবরেটরি, যা বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত একটি সুবৃহৎ কেন্দ্রীয় গবেষণাগারও রয়েছে চালুর অপেক্ষায়। কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য রয়েছে চারটি প্রদর্শনী খামার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ অর্থাৎ ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক; স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে হাতে-কলমে কাজ করাই এ ইন্টার্নিশিপের প্রধান লক্ষ্য। কৃষকদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ইন্টার্র্নিদের লব্ধ জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোই ইন্টার্নিশিপের প্রধান লক্ষ্য; ফলে স্থানীয় কৃষকরা মান্ধাতা আমলের কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।[৩]
আবাসন ব্যবস্থা
সম্পাদনাছাত্র হলসমূহ
সম্পাদনা- শের-ই-বাংলা হল-১
- শের-ই-বাংলা হল-২
- এম.কেরামত আলী হল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
- বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হল (বরিশাল ক্যাম্পাস)
- শহীদ আবু সাঈদ হল (নির্মাণাধীন)
ছাত্রী হলসমূহ
সম্পাদনা- কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল
- শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল (মেইন ক্যাম্পাস)
- শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল (বরিশাল ক্যাম্পাস)
- শেখ হাসিনা হল (নির্মাণাধীন)
এই আবাসিক হলে প্রায় ৩০০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অবস্থানের সুযোগ পায়। ভর্তির পর ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের দিন থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পায়। মাস্টার্সদের জন্য একটি এনেক্স ভবন নির্মিত হয়েছে।[৪]
লাইব্রেরি
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। দুইটি ব্লক এবং চার তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবনে ৪৫ হাজারেরও মত বিভিন্ন ধরনের একাডেমিক বই, ভলিউম, সাময়িকী রয়েছে। এই লাইব্রেরীর ভিতরে রয়েছেঃ পাঠকক্ষ, সংবাদপত্র জোন, ওপেন ডিসকাশন রুম, রেফারেন্স সেকশন, সাহিত্য কর্ণার (প্রস্তাবিত), থিসিস কর্ণার, ডিজিটাল রিসোর্স এক্সেস সেন্টার, সার্ক- এগ্রিকালচারাল বুক সেন্টার, সেমিনার রুম, জব কর্ণার(প্রস্তাবিত), বাইন্ডিং সেকশন, সার্কুলেশন সেকশন, লাইব্রেরি রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং মুজিব কর্ণার; যেখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক প্রায় ১০০ টির অধিক বই রয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার উদ্দ্যেশ্যে আসতে পারে এবং নিড়িবিলি পড়াশোনা করতে পারে। এখানকার সাইবার কেন্দ্রে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃস্থ ক্যাম্পাসে দুই তলা বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি রয়েছে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনা- সাংবাদিক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও সংবাদ সমূহ তুলে ধরার জন্য রয়েছে একটি সাংবাদিক সমিতি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন
সম্পাদনাএখানে ঘাসফুল বিদ্যালয়, আলোকতরী সাংস্কৃতিক সংগঠন, উদীচী, রংধনু, কৌনিক ব্যান্ড, টিউন ক্রাফট, ডিবেটিং সোসাইটি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ট্রাভেলার্স এসোসিয়েশন,বায়োস্কোপ, পাঠচক্র, বিজনেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ছাত্র-ছাত্রী কল্যান পরিষদ। পাঠচক্রের আয়োজনে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক দেয়াল পত্রিকা বের করা হয়। এছাড়াও সাম্প্রতিক নানা বিষয়ের ওপর আয়োজন করা হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার।[৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কে কত বাজেট পাচ্ছে"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৭।
- ↑ Shikder, Kiron (২০২৪-০৯-২৫)। "পবিপ্রবির নতুন উপাচার্য হলেন ড. কাজী রফিকুল ইসলাম"। Independent TV। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "দৈনিক যায়যায়দিন, ডিসেম্বর ২৩, ২০০৬; ফোকাস পাতা"। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০০৬।
- ↑ "পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়"। ১৭ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮।