পতিসর
পতিসর কাচারি বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় অবস্থিত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম পতিসর। এই কাচারি বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। যার পাশেই রয়েছে রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর।[১] ১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম পতিসরে আসেন।[২] তখন তিনি কালিগ্রাম স্টেটের জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। তখন পতিসর কালিগ্রাম স্টেটের কাচারি বাড়ি ছিল।
১৮৯১ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত অবস্থানকালীন সময়ে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও চিঠিপত্র লিখেছেন। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণে নাগর নদীর তীরে পতিসর কাছারি বাড়ি অবস্থিত।[৩]
বিবরণ
সম্পাদনাপতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ির স্থাপত্যশৈলী শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের কুঠিবাড়ির অনুরূপ। যদিও এর মূল ভবনসংলগ্ন ঘরগুলি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত। পতিসরের কুঠিবাড়ি ও পদ্মাবোটে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ নানা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছিন্নপত্রের অনেক চিঠি এবং বিদায় অভিশাপ কাব্যনাট্য রচনা করেন। এছাড়াও কবি পল্লীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থাপন করেন বহু পাঠশালা, রথীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, পতিসর কৃষিব্যাংক রয়েছে। এগুলো বেশিরভগই ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকাও তিনি পতিসর কৃষিব্যাংকে দিয়েছিলেন, যা আর ফেরত পান নি। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি পতিসরের মাঠে কলের লাঙ্গল চালিয়েছিলেন; গড়ে তুলেছিলেন কৃষি, তাঁত ও মৃৎশিল্পের সমবায় সংগঠন। [১][৩][৪]
ইতিহাস
সম্পাদনাজোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাচারি ছিল এই পতিসরে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এই জমিদারি ক্রয় করেন। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম পতিসরে আসেন। ১৯২১ সালে জমিদারি ভাগ হলে পতিসর রবীন্দ্রনাথের ভাগেই পড়ে, কিন্তু সাংসারিক নানা কারণে একদা পতিসরের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত সম্পর্কে ছেদ পড়ে। কবি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলে পতিসরের প্রজারা তাঁকে মানপত্র দিয়ে অভিনন্দন জানায় (১৯১৩)। প্রজাদের অনুরোধে পুণ্যাহ উপলক্ষে তিনি ১৯৩৭ সালে শেষবারের মতো পতিসর পরিদর্শন করেন।[৩][৪]
পতিসর এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু রবীন্দ্রভক্ত প্রতিবছর রবীন্দ্রস্পর্শধন্য এই পতিসর পরিদর্শনে আসেন। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে প্রতিবছর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবেও পতিসরে রবীন্দ্রজন্মোৎসব পালিত হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, এমনকি বিদেশ থেকেও রবীন্দ্রভক্ত এবং রবীন্দ্রগবেষকগণ এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।[৪]
জমিদারী
সম্পাদনারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি ১৮৩০ সালে কেনার পর ১৮৯১ সালের ১৩ জুন রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য এ অঞ্চলে আসেন।[২] এই কাচারীতে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু কাব্য, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন। এই স্থানটির চারপাশেই রবি ঠাকুরের পরিবার কর্তৃক স্থাপিত বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, একটি বিদ্যালয়(কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউশন), দাতব্য হাসপাতাল ও পুরাতন একটি কৃষি ব্যাংক যা ১৯০৫ সালে স্থাপিত হয়েছিল।[৩] এছাড়াও গড়ে তুলেছিলেন মৃৎশিল্প।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল প্রাপ্তির পর সর্বশেষ ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই পতিসরে আসেন।[২][৩][৫] বর্তমানে এখানে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "রবীন্দ্র ভুবনে পতিসর"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭।
- ↑ ক খ গ বাবুল আখতার রানা (৮ মে ২০১৯)। "নওগাঁর পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মোৎসব"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "নওগাঁর পতিসর কাছারিবাড়ী"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ পতিসর। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ ক খ "রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কাল পতিসরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি"। প্রথম আলো। ৭ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০২০।