পক প্রণালী
পক প্রণালী (তামিল ভাষায়: பாக்கு நீரிணை ; ইংরেজি ভাষায়: Palk Strait) ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ু ও দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী একটি সামুদ্রিক প্রণালী। এটি উত্তরপূর্বে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণে অবস্থিত মান্নার উপসাগরকে একসঙ্গে যুক্ত করেছে।[১] প্রণালীটি ৬৪-১৩৭ কিলোমিটার (৪০-৮৫ মাইল ) প্রশস্ত। বেশ কয়েকটি নদী এই প্রণালীতে পতিত হয়েছে; এদের মধ্যে তামিলনাড়ুর ভাইগাই নদী উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গভর্নর (১৭৫৫-১৭৬৩) রবার্ট পকের নামে এই প্রণালীর নামকরণ করা হয়েছে।
পক প্রণালী | |
---|---|
অবস্থান | ল্যাকডিসিব সাগর –বঙ্গোপসাগর |
স্থানাঙ্ক | ১০°০০′ উত্তর ৭৯°৪৫′ পূর্ব / ১০.০০০° উত্তর ৭৯.৭৫০° পূর্ব |
ধরন | প্রনালী |
স্থানীয় নাম | பாக்கு நீரிணை {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: প্যারামিটারের মান ত্রুটিপূর্ণ (সাহায্য) |
ব্যুৎপত্তি | রবার্ট পক |
যার অংশ | ভারত মহাসাগর |
অববাহিকার দেশসমূহ | ভারত, শ্রীলঙ্কা |
সর্বাধিক প্রস্থ | ৮২ কিলোমিটার (৫১ মা) |
অগভীর সমুদ্র ও ডুবোপাহাড়গুলি এই প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধাজনক। যদিও শতাব্দীর পর শতাব্দী জেলেদের নৌকা ও ছোটো ছোটো উপকূলীয় বাণিজ্যতরী অনায়াসেই এই প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করে এসেছে, বড় বড় জাহাজগুলি আসা-যাওয়া করেছে শ্রীলঙ্কা ঘুরেই। ১৮৬০ সালে ভারতের ব্রিটিশ সরকার প্রথম এই প্রণালী বরাবর একটি শিপিং ক্যানাল বা জাহাজপথ নির্মাণের প্রস্তাব রাখে। সেই থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত একাধিক কমিশন এই প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখেছেন। ২০০৪ সালে তামিলনাড়ু সরকার সেতুসমুদ্রম জাহাজপথ প্রকল্প বা সেতুসমদ্রম শিপিং ক্যানাল প্রজেক্ট নামে যে পর্যবেক্ষণটি চালিয়েছেন তা মূলত এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব ও প্রকৌশল সম্ভাবনার দিকটি খতিয়ে দেখেছে।
ইংলিশ চ্যানেলের মতো পক প্রণালীও লং-ডিস্টেন্স সুইমিং বা দূরপাল্লার সাঁতারে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে।
সেতু
সম্পাদনাএই প্রণালীর দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে আছে নিচু দ্বীপের একটি সারি এবং অসংখ্য ডুবোপাহাড় ও মগ্ন চড়া। এগুলিকে একত্রে বলা হয় অ্যাডামস ব্রিজ। ভারতীয় ভাষায় এর প্রকৃত নাম রামসেতু। এই দ্বীপের সারিটি তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের ধনুষ্কোডি ও শ্রীলঙ্কার মান্নারের তালাইমান্নারের মধ্যে প্রসারিত। রামেশ্বরম দ্বীপটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পাম্বান সেতু দ্বারা যুক্ত।
সংস্কৃত ভাষায় রচিত সহস্রাব্দ-প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য তথা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থ রামায়ণের বর্ণনা অনুসারে, রাম বানরসেনার সহায়তায় লঙ্কার রাক্ষসরাজ রাবণের প্রাসাদে বন্দিনী সীতাকে উদ্ধার করার জন্য সমুদ্রের উপর একটি পাথরের সেতু নির্মাণ করেছিলেন। সেই কারণে বর্তমানে এই জাতীয় জাহাজপথ নির্মাণের বিরোধিতায় শুরু হয়েছে রাম কর্মভূমি আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা নাসার একটি উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে প্রমাণ করতে চাইছেন, সেই রামসেতুর ভগ্নাংশ এখনও বিদ্যমান।
অ্যাডামস ব্রিজ বা অ্যাডামের সেতু কথাটি রামসেতুর অনেক পরে চালু হয়। এটি এমন একটি উপকথা থেকে উৎসারিত হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ ভারত বা শ্রীলঙ্কা বর্ণিত হয়েছে বাইবেলকথিত পার্থিব প্যারাডাইস বা স্বর্গোদ্যান বলে। এই উপকথা অনুসারে অ্যাডাম যখন স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন, তখন অ্যাডামস ব্রিজ নির্মিত হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ James Burgess (১৮৭১), The geography of India, India: T. Nelson and Sons