ন হন্যতে
ন হন্যতে বাঙ্গালী কথাসাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী লিখিত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়।[১] এটির জন্য লেখিকা ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।[২] রোমানীয় দার্শনিক মিরচা এলিয়েড লিখিত তাদের সম্পর্ক ভিত্তিক উপন্যাস লা নুই বেঙ্গলীর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এই উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবী নিজের বিবৃতি তুলে ধরেছেন। এটি ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেখা হয়।[৩]
লেখক | মৈত্রেয়ী দেবী |
---|---|
মূল শিরোনাম | ন হন্যতে |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | আত্মজীবনী |
ধরন | আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯৭৪ |
পুরস্কারসমূহ | সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার |
পটভূমি ও প্রকাশনা
সম্পাদনা১৯৩০ সালে কলকাতায় মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা, প্রফেসর সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর কাছে পড়তে আসেন রোমানিয় মিরচা এলিয়েড। মৈত্রেয়ী দেবীর তখন ১৬ বছর বয়স। মেয়ের বুদ্ধিমত্তায় গর্বিত মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ওনাকে সেই সময় অপেক্ষা সংস্কারমুক্ত শিক্ষার পরিবেশে বড় করেছিলেন। নিজের প্রিয় ছাত্র মিরচা এলিয়েডের সাথে মেয়েকে অধ্যয়ন করতেও উৎসাহিত করেন উনি। মৈত্রেয়ী দেবীর কথায় উনি এবং মিরচা এলিয়েড ছিলেন যেন ওনার বাবার যাদুঘরের দুই প্রিয় নমুনা। এরই মধ্যে মিরচা এবং মৈত্রেয়ী একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাদের গুপ্ত ভালবাসা সম্পর্কে অবহিত হবার পর মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা মিরচাকে তাঁদের বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলেন।[৩]
তাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে রোমানিয়নে লেখা মিরচার উপন্যাস মৈত্রেয়ী প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে।[৪] ১৯৫০ সালে লা নুই বেঙ্গলী নামে ফরাসি ভাষায় অনুদিত হওয়ার অব্যবহিত পড় বইটি চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে।[৫] ১৯৩৮-৩৯ সালে প্রফেসর দাশগুপ্ত ইউরোপ সফরে গিয়ে বইটি সম্পর্কে জানতে পারেন ও দেশে ফিরে মেয়েকে জানান। ১৯৫৩ সালে ইউরোপ সফরকালীন মৈত্রেয়ী দেবীর নাম শুনে কিছু রোমানিয় জানান তারা ওনার সম্বন্ধে বই পড়েছেন। কিন্তু তখনও বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিলনা। ১৯৭২ সালে এলিয়েডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেরগুই কলকাতায় থাকাকালীন তার কাছ থেকে মৈত্রেয়ী দেবী জানতে পারেন বইতে মিরচা তাঁদের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন। এক বন্ধুর সাহায্যে ফরাসি থেকে অনুবাদ করিয়ে উনি বইটি পড়েন ও গভীরভাবে মর্মাহত হন।[৪] ন হন্যতে লেখার মাধ্যমে মৈত্রেয়ী দেবী মিরচা এলিয়েডের কল্পনাপ্রসূত লেখার বিরোধিতা করে জীবনের ওই অধ্যায় সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।[৩]
১৯৭৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৈত্রেয়ী দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বলবার জন্য। উনি এই সময় না জানিয়ে মিরচা এলিয়েডের দপ্তরে হাজির হন। তিনি তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন যে দুই মাস মৈত্রেয়ী দেবী ওখানে ছিলেন, তার মধ্যে দুজনের একাধিকবার দেখা হয়। বইতে মিরচা তাদের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে যে মিথ্যাচারণ করেছেন তার কারণ জানতে চান উনি। মিরচা কথা দেন মৈত্রেয়ী দেবীর জীবিতকালে তাঁর বইয়ের ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশিত হবে না।[৪] ১৯৯০ সালে তাঁর মৃত্যুর চার বছর বাদে, ১৯৯৪ সালে বইটি বেঙ্গল নাইটস নামে ইংরাজিতে প্রকাশিত হয় ইউনিভারসিটি ওফ শিকাগো প্রেস থেকে।[৫]
জনপ্রিয় সংস্কৃতি
সম্পাদনামিরচা এলিয়েডের লা নুই বেঙ্গলীর উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে নিকোলাস ক্লতজ পরিচালিত দ্যা বেঙ্গলী নাইট চলচ্চিত্রে হিউগ গ্রান্ট ও সুপ্রিয়া পাঠক যথাক্রমে মিরচা এলিয়েড ও মৈত্রেয়ী দেবীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
সঞ্জয় লীলা বনশালি পরিচালিত ও সালমান খান, ঐশ্বর্যা রাই এবং অজয় দেবগন অভিনীত ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দিভাষী চলচ্চিত্র হাম দিল দে চুকে সনম ন হন্যতে থেকে আংশিক অনুপ্রাণিত। যদিও চলচ্চিত্রে তার ঋণস্বীকার করা হয়নি।[৬] এখানে ঐশ্বর্যা রাই মৈত্রেয়ী দেবীর ও সালমান খান মিরচা এলিয়েডের চরিত্রে অভিনয় করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দেবী, মৈত্রেয়ী (অক্টোবর ১৯৭৪)। ন হন্যতে। ৮৯ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলিকাতা - ৭০০০০৭: প্রাইমা পাব্লিকেশনস।
- ↑ "AKADEMI AWARDS (1955-2016)"। Sahitya Akademi। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৮।
- ↑ ক খ গ "It Does Not Die"। The University of Chicago Press Books। The University of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৮।
- ↑ ক খ গ Kamani, Ginu। "A Terrible Hurt: The Untold Story behind the Publishing of Maitreyi Devi"। Toronto Review। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৮।
- ↑ ক খ "Bengal Nights"। The University of Chicago Press Books। The University of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Gupta, Pratim D. (১৬ নভেম্বর ২০১৩)। "LUST IN THE TIME OF HATE"। ABP Pvt. Limited। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৮।