নূহ-উল-আলম লেনিন
নূহ-উল-আলম লেনিন (জন্ম ১৭ এপ্রিল ১৯৪৭) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, গবেষক, লেখক ও সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য[১] এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মুখপত্র মাসিক 'উত্তরণ' এর সম্পাদক ও প্রকাশক।[২] ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রত্নতাত্ত্বিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।[৩]
নূহ-উল-আলম লেনিন | |
---|---|
জন্ম | |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | রাজনীতিবিদ, সম্পাদক, লেখক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, সংগঠক, কবি, গবেষক |
পরিচিতির কারণ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিক্রমপুর জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা, মাসিক উত্তরণের প্রকাশক ও সম্পাদক, নাটেশ্বরের ও বিক্রমপুর বিহারের খনন প্রকল্পের উদ্যোক্তা |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ বঙ্গবন্ধু পুরস্কার অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানূহ-উল-আলম লেনিন ১৯৪৭ সালের ১৭ এপ্রিল ফেব্রুয়ারি বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার রাণীগাঁও জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা স্কুলশিক্ষক আবদুর রহমান মাস্টার ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মা মোমেনা খাতুন ছিলেন কৃষক আন্দোলনের কর্মী।[৪]
শিক্ষা জীবন
সম্পাদনানূহ-উল-আলম লেনিন ১৯৬৫ সালে লৌহজং এর ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন এবং ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তার গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ‘বাঙালি সমাজ ও বাংলা সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ: মূল প্রবণতা, পুনঃপাঠ ও পুনর্মূল্যায়ন’ যা পরে বাংলা একাডেমি থেকে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়।[৫]
মুক্তিযুদ্ধে যোগদান
সম্পাদনা১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তিনি স্বাধীনতার পক্ষে সংগঠিত করতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন।[৬] এবং বিভিন্ন ছদ্মবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে ২নং সেক্টরের নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নবাবগঞ্জ, আড়িয়াল বিলে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন।[৭]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাতিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং অবিভক্ত সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য।
নূহ-উল-আলম লেনিন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে তিনি তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, পরের কাউন্সিলে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ২০১৬ সালের কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মুখপত্র ‘উত্তরণ’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন।[৮]
সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবদান
সম্পাদনা১৯৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন- এর প্রতিষ্ঠা করেন নূহ-উল-আলম লেনিন। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিক্রমপুর জাদুঘর, বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর ও জ্ঞানপীঠ স্বদেশ গবেষণা কেন্দ্র। সংরক্ষণ করেছেন বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি।
তাঁর উদ্যোগে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও উৎখননে বিক্রমপুরে আবিস্কৃত হয়েছে নবম-দশম শতাব্দীর বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু প্রত্নত্ত্বাতিক নিদেশন।[৯] বেরিয়ে এসেছে বিক্রমপুর বিহার, নাটেশ্বর বৌদ্ধ বিহার, বল্লাল বাড়ি।[১০] তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান- ঐতিহ্য অন্বেষণ-এরও অন্যতম ট্রাস্টি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ
সম্পাদনা- বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ
- দুই খণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল
- মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু
- শেখ মুজিবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতা জীবন
- বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বপ্ন
- বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: প্রতিবাদের প্রথম বছর
- আওয়ামী লীগ বদলালে বাংলাদেশ বদলাবে
- মুজিব যখন খোকা ছিলেন
- একটি অখণ্ড পৃথিবীর জন্য
- পোড়া মাঠে চৈত্রের ফসল
- স্বপ্ন করপুটে
- অনেকদূর যেতে হবে
- ভালবাসা হিসেব জানেনা
- আকাশের সিঁড়ি
উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত গ্রন্থ
সম্পাদনা- ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু
- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ও বাঙালির কলঙ্কমোচন
- দুই খণ্ডে জননেত্রী শেখ হাসিনার ১০০ নির্বাচিত ভাষণ
- সমুখে শান্তি পারাবার, তেভাগা সংগ্রাম
- দুঃশাসনের চার বছর : সংকট ও উত্তরণের পথ
- বাংলাদেশের নগরায়ন ও পরিবর্তনশীল গ্রামজীবন
পুরস্কার
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা :: দৈনিক ইত্তেফাক"। archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ "বিক্রমপুর খবর"। নাসির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল।
- ↑ "কেন্দ্রীয় পর্ষদ তালিকা (২০২০-২০২৩)"। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এর ৭৫তম জন্মদিন আজ"।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "নূহ-উল-আলম লেনিনের পিএইচডি ডিগ্রি লাভ"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে তিন ভাই"। সমকাল। ২০২১-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধের অনেক কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে : নূহ-উল-আলম লেনিন"। www.bhorerkagoj.com। ২০২১-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ "'পাকিস্তান জন্মের দিনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন'"।
- ↑ "বাংলাদেশে প্রথম সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মাটি খুঁড়ে বল্লাল সেনের বাড়ি"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি পেলেন বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।
- ↑ "৭ জন পেলেন অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৯।