নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (এনআরএসএমসি এবং এইচ), যা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা নামেও পরিচিত হলো কলকাতা শহরে অবস্থিত একটি সর্বজনীন চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানহাসপাতাল। এটি কলকাতার প্রাণকেন্দ্র শিয়ালদহে অবস্থিত।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (এনআরএসএমসি এবং এইচ)
প্রাক্তন নামসমূহ
শিয়ালদহ মেডিক্যাল স্কুল, ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল[]
নীতিবাক্যविश्व नी अस्वु भैषज्ञन (সংস্কৃত)
ধরনচিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানহাসপাতাল
স্থাপিত১ ডিসেম্বর ১৮৭৩; ১৫০ বছর আগে (1873-12-01)
অধ্যক্ষঅধ্যাপক ডাঃ শৈবাল মুখোপাধ্যায়
শিক্ষার্থীমোট:
  • এমবিবিএস - ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী
  • এমডি+এম.এস - ১২২ জন ছাত্রছাত্রী
  • ডিএম - ১৬ জন ছাত্রছাত্রী
  • এম.সিএইচ - ১৫ জন ছাত্রছাত্রী
ঠিকানা
২২°৩৩′৫৫″ উত্তর ৮৮°২২′০৯″ পূর্ব / ২২.৫৬৫২° উত্তর ৮৮.৩৬৯১° পূর্ব / 22.5652; 88.3691
শিক্ষাঙ্গনশহরাঞ্চল
অধিভুক্তিপশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটnrsmc.edu.in
মানচিত্র

পূর্ব-ভারতের এই অত্যন্ত নামী দামী ও প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটি ১লা ডিসেম্বর ১৮৭৩ সনে শিয়ালদহ মেডিক্যাল স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ইতিহাস ও নামকরণ

সম্পাদনা

১৮৬৪ সালে, বিভিন্ন মহামারী, শ্রেণি সংগ্রাম তথা সদ্য সংঘটিত সিপাহী বিদ্রোহের জেরে সৃষ্ট নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের কারণে ব্রিটিশ সরকার একটি হাসপাতাল খুলতে বাধ্য হয়েছিল। এই জরুরি প্রয়োজনটি বিবেচনা করে, সেন্ট্রাল হলে অবস্থিত শিয়ালদহ মার্কেট বিল্ডিংটি একটি হাসপাতালে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এইভাবেই জন্ম নেয় শিয়ালদহ পৌর হাসপাতাল

১৮৭৩ সালের ১লা ডিসেম্বর শিয়ালদহ মেডিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়ে বেশ কয়েকটিবার এর নাম পরিবর্তন করা হয়। ১৮৮৪ সালে, এর নামকরণ করা হয় ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল তথা ১৮৯৪ সালে এর নাম হয়ে যায় ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজ। ১৯৫০ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তিতে, কলেজটির নাম শেষবারের মতো পরিবর্তিত হয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ রাখা হয়, ভারতের স্বাধীনতা বিপ্লবী এবং কলেজের অন্যতম প্রাক্তনী, চিকিৎসক স্যার নীলরতন সরকারের নামানুসারে। এনআরএস, নতুন দিল্লিতে অবস্থিত ভারতীয় চিকিৎসা পরিষদের অধীনে স্বীকৃত তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা পরিচালিত। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত এই কলেজটি বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয়ই পড়াশোনা প্রদান করে।[]

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এনআরএস-এর অবদানসমূহ

সম্পাদনা

সারা ইতিহাস জুড়ে, শিয়ালদার এই শিক্ষা প্রথিষ্ঠান ও হাসপাতালটিতে প্রচুর আবিষ্কার ও চিকিৎসা করা হয়েছেঃ

  1. ১৯২১ সালে ডাঃ কেদারনাথ দাস বেঙ্গল ফোর্সেপ্স এর উদ্ভাবন করেছিলেন যা এশীয় ও বাঙালি মহিলাদের শ্রোণীভল বাঁক তথা একটি শিশুর মাথার আকারের সাথে একই আকার বজায় রাখে।
  2. ১৯২২ সালে ডাঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালা জ্বর নিরাময়ের জন্য ইউরিয়া স্টাইবামিন আবিষ্কার করেছিলেন যা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী কাজ হিসাবে বিবেচিত করা হয়।
  3. কলেরা টক্সিনকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডাঃ শম্ভুনাথ দে আবিষ্কার করেছিলেন। এটি ছিল চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগের এক বিরাট সাফল্য-অর্জন।
  4. ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন নিয়ে কাজ করা ও ভারতবর্ষের প্রথম নল-জাত শিশুর সৃষ্টিকর্তা ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় চিকিৎসা সূত্রে কর্মরত ছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। এখানে বসে চিকিৎসার উন্নতির জন্য তিনি রাতদিন এক করে গবেষণা করতেন।[]
  5. ডাঃ প্রদীপ মুখোপাধ্যায় চারটি সংযুক্ত জোড়া যমজকে আলাদা করেছিলেন, যার মধ্যে প্রথম শল্যচিকিৎসাটি ১৯৯৯ সালে হয়েছিল।
  6. প্রাকৃতিক ভালভ প্রতিস্থাপন এবং করোনারি বাইপাস নিয়ে ডাঃ শৈবাল গুপ্তের কাজ।[]
  7. ডাঃ ডি.পি. বকশি কর্তৃক কনুই প্রস্থেসিস্ এর তৈরী।
 
এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা ভবনের পাখির চোখের দর্শন

কেন্দ্রীয় পাঠাগার

সম্পাদনা

এন.আর.এস. মেডিকেল কলেজ পাঠাগারটি একাডেমিক ভবনের তিন তলার গোটা জায়গা জুড়ে জুড়ে বিস্তীর্ণ। এটি আয়তন প্রায় ৪০০০ বর্গমিটার। এমসিআইয়ের নির্দেশক অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াইশজন আন্ডারগ্রাজুয়েট ভর্তির অনুসারে পাঠাগাররের বসার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ার স্থানটি আভ্যন্তরীণ এবং বহিরঙ্গন পাঠকক্ষে পৃথক করা হয় এবং উভয় কক্ষেই ২৫০ জনের বসার ক্ষমতা রয়েছে। ৫০ জনের বসার ক্ষমতা থাকা অধ্যাপকগণ, পিজি এবং পিডিটি শিক্ষার্থীদের পড়ার স্থানগুলিকে পাঠাগারের দক্ষিণ দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। গ্রন্থাগারের বেশিরভাগ জায়গাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নতুন কম্পিউটার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে পাঠাগারের ডিজিটাল লাইব্রেরিটি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এন.আর.এস. মেডিকেল কলেজ গ্রন্থাগারটি ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির, কলকাতার প্রাতিষ্ঠানিক সদস্যদের একটি। ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তাহাদের এনএমইইসিটি মিশনের আওতায় আইআইটি খড়গপুরকে ভারতের জাতীয় ডিজিটাল লাইব্রেরি (এনডিএল) স্থাপন, সমন্বিত ও গঠন করার দায়িত্ব দিয়েছে।

বিভাগগুলি

সম্পাদনা
ক. প্রাক-রোগশয্যাসম্বন্ধীয়
  1. অঙ্গব্যবচ্ছেদ-বিদ্যা
  2. শারীরবৃত্তি
  3. প্রাণরসায়ন
খ. প্যারা-রোগশয্যাসম্বন্ধীয়
  1. রোগবিদ্যা
  2. ঔষধসংক্রান্ত বিদ্যা
  3. জীবার্ণুবিদ্যা
  4. ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি
  5. কমিউনিটি মেডিসিন
  6. শারীরিক ওষুধ ও রিহ্যাবিলিটেশন
গ. রোগশয্যাসম্বন্ধীয়
  1. সাধারণ মেডিসিন
  2. সাধারণ শল্যচিকিৎসা
  3. প্রসূতি & স্ত্রীরোগবিদ্যা
  4. শিশুরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত বিদ্যা
  5. চক্ষুবিদ্যা
  6. ই.এন.টি
  7. অ্যানাস্থেসিওলজি
  8. ত্বক-বিদ্যা
  9. রেডিওলজি
  10. মনোরোগবিদ্যা
  11. অস্থি চিকিৎসাবিদ ও পিএমআর
ঘ. সাবস্পেশালিটি
  1. হৃদবিদ্যা
  2. স্নায়ুবিদ্যা
  3. নেফ্রোলজি
  4. এন্ডোক্রিনোলজি
  5. কার্ডিও থোরাসিক ভাস্কুলার সার্জারি (Cসিটিভিএস)
  6. পেডিয়াট্রিক সার্জারি
  7. নিউরোসার্জারি
  8. ট্রান্সফিউশন মেডিসিন ও ব্লাড ব্যাঙ্ক
  9. বুকের চিকিৎসাবিদ্যা (পালমোনোলজি)
  10. অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি
  11. প্লাস্টিক সার্জারি
  12. মূত্রব্যবস্থা-বিজ্ঞান

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তনীগণ

সম্পাদনা

গ্যালারী

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "কালাজ্বরের যুগান্তকারী প্রতিষেধক আবিষ্কার, ৫০ লক্ষের প্রাণ বাঁচিয়েও নোবেল পাননি এই বঙ্গসন্তান"TheWall (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ অক্টোবর ২০১৯। ৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০২১ 
  2. "রোগীদের 'জীবন্ত ঈশ্বর' নীলরতন সরকার"www.anandabazar.com। ৩০ নভেম্বর ২০১৯। 
  3. Desk, National (২০ জুন ২০১৯)। "এনআরএসের এই বিখ্যাত চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক রয়েছে আজও"Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০২১ 
  4. "CAREER DATA OF DR. SAIBAL GUPTA"Research Gate 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা