নিষ্কামকর্ম
নিষ্কামকর্ম (সংস্কৃত: निष्कामकर्म) হলো অহংমুক্ত বা আকাঙ্ক্ষাহীন কর্ম, কোনো ফলের প্রত্যাশা ছাড়াই সম্পাদিত কর্ম, এবং মুক্তির কর্মযোগ পথের কেন্দ্রীয় নীতি। ধারণাটির আধুনিক প্রবক্তারা যোগের নীতি অনুসরণ করে সাফল্য অর্জনের উপর চাপ দেয়,[১] এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও কার্যাবলী অতিক্রম করার সময় অধিকতর ভালোর জন্য অনুসরণ করে।[২][৩][৪] এটি ভগবদ্গীতার কেন্দ্রীয় বার্তা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।[৫]
ভারতীয় দর্শনে, কর্ম তাদের সহজাত গুণ অনুসারে তিনভাগে বিভক্ত — নিষ্কামকর্ম প্রথম শ্রেণীর অন্তর্গত এবং সত্ত্ব গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত যা প্রশান্তি যোগ করে; সকামকর্ম (অহং-যুক্ত কর্ম) দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত এবং রজঃ গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত, এবং বিকর্ম (চরম মন্দ-কর্ম) তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত এবং তমঃ গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত, এবং সকামকর্ম ও বিকর্ম অন্ধকার বা জড়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত।[৬]
ভগবদ্গীতায় নিষ্কামকর্ম
সম্পাদনামহাভারতের কেন্দ্রীয় পাঠ্য ভগবদ্গীতায় নিষ্কামকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে,[৭] যেখানে ভগবান কৃষ্ণ 'নিষ্কামকর্মযোগ' (নিঃস্বার্থ কর্মের যোগ) কে সত্য উপলব্ধি করার আদর্শ পথ হিসাবে সমর্থন করেন।[৮] উদ্দেশ্য বা ফলাফলের প্রত্যাশা ছাড়া কর্ম ব্যক্তির মনকে শুদ্ধকরে এবং ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে কর্ম ত্যাগ করার সুবিধাগুলি উপলব্ধি করার জন্য উপযুক্ত করে তোলে। নিম্নলিখিত শ্লোকগুলোতে এই ধারণাগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে:
শুধুমাত্র কর্ম করার জন্য আপনার অধিকার আছে এবং এর ফলের জন্য কখনোই নয়; কর্মের ফল আপনার উদ্দেশ্য হতে দিন না; আপনার মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার প্রতি কোন আসক্তি থাকবে না।
— শ্লোক ২. ৪৭[৯][১০]যোগে স্থির হয়ে, হে সম্পদের বিজয়ী (অর্জুন), তোমার কাজ কর, আসক্তি ত্যাগ করে, সাফল্য-ব্যর্থতায় সমান চিত্তে, কারণ মনের সমতাকে যোগ বলে।
— শ্লোক ২.৪৮[১১]শরীর দিয়ে, মন দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, এমনকী নিছক ইন্দ্রিয় দিয়ে, যোগীরা আসক্তি ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির জন্য কাজ করে। যিনি যোগে শৃঙ্খলাবদ্ধ, কর্মফল ত্যাগ করে, তিনি স্থির শান্তি লাভ করেন...।
— শ্লোক ৫.১১[১২]— ভগবদ্গীতা, দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kriyananda, Swami (৩ আগস্ট ২০০৫)। "Material Success Through Principles of Yoga"। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Goyal, Malini (২০ আগস্ট ২০০৭)। "'Get over that mindset of networking with an agenda'"। The Economic Times। IndiaTimes। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Das, Gurcharan (১২ ডিসেম্বর ২০০৪)। "A small matter of the ego"। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Ambani, Anil (৪ ডিসেম্বর ২০০৪)। ""THE SPEAKING TREE: Father, Lead Me from Sakam to Nishkam""। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Langar, R. K. (৬ জানুয়ারি ২০০৪)। "Gita's Emphasis on Good of the World"। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Tripathi, G. S. (২৮ জুলাই ২০০৮)। "Relaxation, a must for better mind power"। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Critical Perspectives on the Mahābhārata, By Arjunsinh K. Parmar. Published by Sarup & Sons, 2002. আইএসবিএন ৮১-৭৬২৫-২৭৩-৫. Page 111.
- ↑ Ritu, S. (১৯ জুলাই ২০১৬)। "Karma Sutra: Understanding the concept of 'nishkama karma'"। The Indian Express। New Delhi: Express Publications। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ verse 47, Chapter 2-Samkhya theory and Yoga practise, The Bhagavadgita - Radhakrishnan
- ↑ Essence of Maharishi Patanjali's Ashtang Yoga, by J.M. Mehta, Published by Pustak Mahal, 2006. আইএসবিএন ৮১-২২৩-০৯২১-৬. Page 23.
- ↑ verse 48, Chapter 2-Samkhya theory and Yoga practise, The Bhagavadgita - Radhakrishnan
- ↑ A. C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada। "Bhaktivedanta VedaBase: Bhagavad-gita As It Is, Verse 5.11"। Bhaktivedanta VedaBase Network (ISKCON)। ২০০৭-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৪।