নারী বিদ্বেষ (ইংরেজি: Misogyny) হল মহিলা বা নারীর প্রতি ঘৃণা বা তীব্র বিরাগ।[] এর থেকেই জন্ম নেয় যৌন নিপীড়নের মত বিকৃত মানসিকতা। অর্থাৎ কোনো নারী পুরুষটির নির্বাচনে সহমত পোষণ করলে তিনি যথাযোগ্য সম্মানের অধিকারিণী অন্যথায় সেই নারীই চরম অপমান ও অসম্মান ও শাস্তির যোগ্য প্রাপক। নারীবিদ্বেষ সমাজে তৈরি করে যৌন বৈষম্য, শত্রুতা, পুরুষ আধিপত্যবাদী ধারণা, মর্যাদাহানি, সহিংসতা, এবং নারীর আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তাকে ভোগ করার বাসনা।[]

লিঙ্গ ব্যবধান পূরণ করা

স্ত্রী-বিদ্বেষের প্রমাণ ইতিহাস ঘাঁটলেও পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসে নারীবিদ্বেষকে একটি অসুখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রাচ্যের কিছু প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ এবং পাশ্চাত্যের কিছু দর্শনের গ্রন্থেও এই নারীবিদ্বেষের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।

বিভিন্ন পুরাণ সংক্রান্ত প্রাচীন গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও উল্লেখ যে কিছু প্রভাবশালী পশ্চিমী দার্শনিক ও চিন্তাবিদ গনের এ সম্পর্কে কথিত মতবাদ পাওয়া যায়। নারীবিদ্বেষের বিপরীত মতবাদ হচ্ছে পুরুষবিদ্বেষ নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে সহিংস অপরাধগুলো যেগুলো প্রধাণত বা কেবলই নারী বা বালিকাদের উপরেই করা হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই ঘৃণাপূর্বক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়,[১] যা নারী বা বালিকাদের উপর করা হয় কেননা তারা নারী। নারীর প্রতি সহিংসতার খুব লম্বা ইতিহাস রয়েছে, যদিও এরকম সহিংসতার মাত্রা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছিল, এমনকি আজও বিভিন্ন সমাজে এগুলোর মাত্রা ও ঘটনার ধরন বিভিন্ন হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই নারীকে সমাজে বা আন্তঃব্যক্তি সম্পর্কে অধীনস্থ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি তার অধিকারপ্রাপ্তির বোধ, উচ্চস্থানের বোধ, নারীবিদ্বেষ, বা নিজের সহিংস প্রকৃতির জন্য নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করতে পারেন।

জাতিসংঘের ডেকলারেশন অন দ্য ডেকলারেশন অফ ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন থেকে বলা হয়, "সহিংসতা হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নারী ও পুরুষের মধ্যকার ঐতিহাসিক অসম ক্ষমতা সম্পর্কের প্রকাশ" এবং "নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে প্রধান সামাজিক কৌশলগুলোর মধ্যে একটি যার দ্বারা নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় অধীনস্থ অবস্থানে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়।"[২]

জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান ২০০৬ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ফর উইমেন (UNIFEM)-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছিলেন:

নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি পৃথিবীব্যাপি বিরাজমান সমস্যা। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তিন জন নারীর অন্তত একজনকে মারা হয়েছে, জোরপূর্বক যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করা হয়েছে, বা অন্য কোনভাবে তার জীবনে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে যেখানে নির্যাতনকারী কোনভাবে তার পরিচিত ছিল।[৩]

নারীর প্রতি সহিংসতাকে কয়েকটি বৃহৎ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলোর মধ্যে "ব্যক্তির" দ্বারা সহিংসতা ও "রাষ্ট্রের" দ্বারা সহিংসতা উভয়ই রয়েছে।। সহিংসতার কোন কোন ধরন আছে যা ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যথা - ধর্ষণ, গৃহ নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রজননগত জোর-জবরদস্তি, কণ্যা শিশুহত্যা, লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত, প্রসবকালীন সহিংসতা, উচ্ছৃঙ্খলা জনতার দ্বারা সহিংসতা বা দাঙ্গা, রীতি বা আচারগত চর্চা যেমন সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনর কিলিং, যৌতুক সহিংসতা বা পণ মৃত্যু, নারী খৎনা, অপহরণপূর্বক বিবাহ বা জোরপূর্বক বিবাহ। আবার কিছু কিছু ধরনের সহিংসতার কর্তা হচ্ছে রাষ্ট্র, যেমন - যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা, সংঘর্ষের সময় যৌন সহিংসতা এবং যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক নির্বীজন, জোরপূর্বক গর্ভপাত, পুলিশ ও কর্তৃত্বকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা সহিংসতা, পাথর ছুড়ে হত্যা বা চাবুক মারা। আবার অনেক ধরনের যৌন সহিংসতা সংঘটিত সংগঠিত অপরাধ চক্রের দ্বারা, যেমন - নারী পাচার এবং জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি।[৪]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নারীর জন্ম থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সকল পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।[৫]

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে যেখানে বিভিন্ন সম্মেলন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন ডিরেক্টিভ এর সাহায্যে আন্তর্জাতিক মাত্রায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাচ্ছে, যেমন যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ, মানব পাচারের বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ।[৬][৭] উল্লেখ্য, এখানে ডিরেক্টিভ বলতে কোন আন্তর্জাতিক সংঘের একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা লক্ষ্যমাত্রাকে বোঝানো হয় যেখানে সংঘটির সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে সেই লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করতে হয়, কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের উপায় সেখানে বলে দেয়া থাকে না।

সংজ্ঞা

সম্পাদনা

সমাজবিজ্ঞানী অ্যালান জি জনসন মতে, "স্ত্রী-বিদ্বেষ নারীর জন্য ঘৃণার একটি সাংস্কৃতিক মনোভাব কারণ তারা মহিলা। জনসন যুক্তি দেন যে: স্ত্রী-বিদ্বেষ যৌন বিষয়ক কুসংস্কার ও মতাদর্শের একটি কেন্দ্রীয় অংশ যেমন, পুরুষ-শাসিত সমাজে নারী নিপীড়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরী হয় না। স্ত্রী-বিদ্বেষ বিভিন্ন উপায়ে উদ্ভাসিত হয়।[] ২০০২ সালে ম্যাকুয়ার অভিধান (যা অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ডের ইংরেজি নথি) স্ত্রী বিদ্বেষ এর একটি বিষদ সংজ্ঞা প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছে এটি শুধু মাত্র মহিলাদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ই প্রকাশ করেনা সেই সাথে তাদের প্রতি কুসংস্কার ও জড়িত করে।

ঐতিহাসিক প্রচলন

সম্পাদনা
 
ইউরিপিডিস
 
মারকাস তুলিয়াস ছিকেরো

ধর্মীয় দৃষ্টিভজ্ঞি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Code, Lorraine (২০০০)। Encyclopedia of Feminist Theories (1st সংস্করণ)। London: Routledge। পৃষ্ঠা 346। আইএসবিএন 0-415-13274-6 
  2. Kramarae, Cheris (২০০০)। Routledge International Encyclopedia of Women। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 1374–1377। আইএসবিএন 0-415-92088-4 
  3. Johnson, Allan G (২০০০)। "The Blackwell dictionary of sociology: A user's guide to sociological language"আইএসবিএন 978-0-631-21681-0। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২১, ২০১১ , ("ideology" in all small capitals in original).