নানাজী দেশমুখ
এই নিবন্ধ অথবা অনুচ্ছেদটি নানাজি দেশমুখ নিবন্ধের সাথে একত্রিত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। (আলোচনা করুন) |
নানাজি দেশমুখ বা চন্ডিকাদাস অমৃতরাও দেশমুখ (১১ অক্টোবর ১৯১৬ - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০) ছিলেন ভারতের একজন সমাজকর্মী, প্রথম গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, ভারতীয় জনসংঘের প্রথম দিকের নেতাদের অন্যতম এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক। ভারতের প্রথম অ-কংগ্রেসী সরকারের স্থপতিদের একজন ছিলেন তিনি। ভারত সরকার ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের নানাজিকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করে। তবে এর পূর্বে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।[২][৩]
ভারতরত্ন রাষ্ট্র ঋষি নানাজী দেশমুখ | |
---|---|
সংসদ সদস্য, লোকসভা | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭৭ – ১৯৭৯[১] | |
পূর্বসূরী | চন্দ্র ভাল মণি তিওয়ারী |
উত্তরসূরী | চন্দ্র ভাল মণি তিওয়ারী |
নির্বাচনী এলাকা | বলরামপুর, উত্তরপ্রদেশ |
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা | |
কাজের মেয়াদ ২২ নভেম্বর ১৯৯৯ – ২১ নভেম্বর ২০০৪ | |
নির্বাচনী এলাকা | মনোনীত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | চন্ডিকাদাস অমৃতরাও দেশমুখ ১১ অক্টোবর ১৯১৬ কাদোলি, পবমণী জেলা, হায়দ্রাবাদ রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে কাদোলি, হিঙ্গোলি জেলা, মহারাষ্ট্র, ভারত) |
মৃত্যু | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ চিত্রকূট, সাতনা জেলা মধ্যপ্রদেশ, ভারত | (বয়স ৯৩)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনসংঘ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স, পিলানি |
পুরস্কার | ভারতরত্ন ( ২০১৯) (মরণোত্তর) পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাচন্ডিকাদাস অমৃতরাও দেশমুখের জন্ম ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অধুনা মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার কাদোলি গ্রামের এক দেশস্থ ঋগ্বেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে। পিতা রাজাভাই অমৃতরাও দেশমুখ। তাদের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। তার ডাকনাম ছিল 'নানাজী' বা 'নানা ভাই'। পড়াশোনার জন্য তাকে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে। নানাজীর মহারাষ্ট্রে জন্ম হলেও তার শিক্ষা ও কর্মকাণ্ড ছিল রাজস্থানে ও উত্তর প্রদেশে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার সঙ্গে হেডগেওয়ারের সাক্ষাৎ হয়। তারপর থেকেই তিনি সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন।[৪] পরে তিনি রাজস্থানের সিকারের এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সিকারের রাও রাজার বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে তিনি পিলানি'র বিড়লা কলেজে অধুনা বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স'-এ পড়াশোনা করেন। তৎকালীন সঙ্ঘ প্রধান গোলওয়ালকর নানাজীকে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে পাঠান।
নানাজী দেশমুখ বাল গঙ্গাধর তিলক ও তার জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সেই সঙ্গে হেডগেওয়ারের ঘনিষ্ঠতায় সমাজসেবা ও কর্মকাণ্ডে নিবিড় ভাবে যুক্ত হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে হেডগেওয়ারের মৃত্যুর পর নানাজী আরএসএসের স্বয়ংসেবক হিসাবে জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। মহারাষ্ট্রের বহু যুবককে অনুপ্রাণিত করে তাদের আরএসএসে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। আগ্রায় দীনদয়াল উপাধ্যায়ের সঙ্গে নানাজীর প্রথম সাক্ষাৎ হয়। নানাজীর গোরক্ষপুরে স্বয়ংসেবকের তিন বৎসরের কাজে ২৫০ শাখার কাজ শুরু করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন সরস্বতী শিশু মন্দির। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে আরএসএস 'রাষ্ট্রধর্ম' ও 'পাঞ্চজন্য' নামের দুটি মুখপত্র এবং 'স্বদেশ' নামের একটি সংবাদপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলে, অটলবিহারী বাজপেয়ী সম্পাদক, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গদর্শক এবং নানাজী পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শুরুর দিকে তাঁর উপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর আরএসএসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলেও, নানাজী অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যেও পত্র-পত্রিকার প্রকাশনা জারি রাখেন। নানাজী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিচারধারায় বদল এনেছিলেন। তাঁর মত ছিল— আমি নিজের নয়, নিজের লোকের জন্য। [৪]
রাজনীতি
সম্পাদনাআরএসএসের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ভারতীয় জনসংঘ গঠিত হলে, গোলওয়ালকরের পরামর্শে নানাজী উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনসংঘের সম্পাদক হন। উত্তরপ্রদেশে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি, অটলবিহারীর বাগ্মীতা এবং সর্বোপরি নানাজীর সাংগঠনিক দক্ষতায় ভারতীয় জনসংঘ প্রভাব বিস্তার করে। পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতা রামমনোহর লোহিয়া ও নানাজী দেশমুখের ভারতীয় জনসংঘের জোটে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে প্রথম অ-কংগ্রেসী সরকার গঠিত হয়েছিল। নানাজী বিনোবা ভাবের ভূদান আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মোরারজি দেশাইয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে তাকে জনতা দলের সরকারে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেন নি। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের পরের নির্বাচনে তিনি উত্তরপ্রদেশের বলরামপুর লোকসভা কেন্দ্র হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সামাজিক কাজ
সম্পাদনা১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজনীতির অঙ্গণ পরিত্যাগ করে সামাজিক কাজকর্মে মনোনিবেশ করেন। কৃষি ও কুটির শিল্প, গ্রামীণ স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দারিদ্র্য বিরোধী এবং মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন কর্মসূচির জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেন। প্রসঙ্গত তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তার গড়া দীনদয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সে কাজে ব্রতী হন। অবশেষে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে নানাজী রামের তপস্যার ক্ষেত্র চিত্রকূটকে নিজের কর্মভূমি হিসাবে বেছে নেন। তার বক্তব্য ছিল- রামচন্দ্র চিত্রকূটে গিয়ে দলিত ও আদিবাসীদের সঙ্গে ছিলেন। তিনিও সেই পথ অনুসরণ করে একজন প্রকৃত সমাজকর্মীর লক্ষ্যেই তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চিত্রকূটেই অতিবাহিত করেন। তার মূললক্ষ্য ছিল - হর হাথ কো দেঙ্গে কাম, হর খেত কো দেঙ্গে পানি।
তিনি চিত্রকূটে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রথম গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় - 'চিত্রকূট গ্রমোদয় বিশ্ববিদ্যালয়' যা বর্তমানে মহাত্মা গান্ধী চিত্রকূট গ্রামোদয় বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। তিনি প্রতিষ্ঠানটির আচার্য ছিলেন।
সম্মাননা
সম্পাদনা- সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারত সরকার ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ প্রদান করে [৫] এবং এই বছরেই কেন্দ্রীয় সরকার তাকে রাজ্যসভার সদস্যপদে মনোনীত করে।
- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন মরণোত্তর ভূষিত হন।
জীবনাবসান
সম্পাদনানানাজী দেশমুখ জেরিয়াট্রিক সমস্যার কারণে তিনি কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে যেতে চাইতেন না। শেষে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রয়াত হন এবং তার ইচ্ছানুসারে নতুন দিল্লির দধিচি দেহদান সংস্থার মাধ্যমে তার দেহ চিকিৎসা গবেষণার জন্য অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে পাঠানো হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Lok Sabha condoles Nanaji Deshmukh's death। The Hindustantimes। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০।
- ↑ "Bharat Ratna for Pranab Mukherjee, Nanaji Deshmukh and Bhupen Hazarika"। Times Now। ২৫ জানুয়ারি ২০১৯। ৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "Who was Nanaji Deshmukh?"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ ক খ "ভারতরত্ন নানাজি দেশমুখ বদলে দিয়েছিলেন আরএসএসের বিচারধারা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২০।
- ↑ Utilise human resources judiciously: Kalam. Times of India. 19 October 2001