নাগিনী কন্যার কাহিনী
নাগিনী কন্যার কাহিনী হল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির বেদে সমাজের ধর্মবিশ্বাস, সংস্কার, প্রথা ও জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে শিরবেদের শাসন ও বিষহরির সেবায় উৎসর্গিতা এক নাগিনী কন্যার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। গবেষক শিশিরকুমার দাশের মতে, "ইতিহাস জ্ঞান ও আখ্যান রচনার প্রতিভার সমন্বিত রূপ এই উপন্যাস।"[১]
লেখক | তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় |
---|---|
প্রচ্ছদ শিল্পী | রঞ্জন দত্ত |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | আঞ্চলিক উপন্যাস |
প্রকাশিত | ১৯৫২ |
প্রকাশক | করুণা প্রকাশনী, কলকাতা |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১৬৮ |
আইএসবিএন | ৯৭৮-৮১-৯৪২১১৬-৩-১ |
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, নাগিনী কন্যার কাহিনী তারাশঙ্করের উপন্যাস রচনার তৃতীয় পর্বের অন্তর্গত। তারাশঙ্করের উপন্যাসের সমৃদ্ধতম এই পর্বের অন্যান্য কয়েকটি উপন্যাসের (যেমন হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, তামস তপস্যা ও পঞ্চপুত্তলি) মতো নাগিনী কন্যার কাহিনী-তেও তারাশঙ্কর তুলে এনেছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জীবনসংগ্রামের কাহিনি।[২]
নাগিনী কন্যার কাহিনী উপন্যাসে তারাশঙ্কর বাংলার বিষবেদে সম্প্রদায়ের উদ্ভব থেকে শুরু করে তাদের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরেছেন এবং বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন এই সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে নাগিনী কন্যা হওয়ার প্রথাটির উপর। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিকাশকান্তি মিদ্যার মতে, "বিষবেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে নাগিনী কন্যা হওয়ার প্রথা আদৌ আছে বা ছিল কিনা সে বিষয়ে তর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু তারাশঙ্কর এ উপন্যাসে মঙ্গলকাব্যের মিথকে কাজে লাগিয়ে এমন এক জগৎ গড়ে তুলেছেন, যা বিশ্বাস না করে উপায় নেই।"[৩] উপন্যাসটির মধ্যে বাস্তব ও কল্পনার এক মিশ্রণ ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবের কাছে কল্পনা বা সংস্কার আত্মসমর্পণ করেছে। শিরবেদের পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য ও অন্যদিকে নাগিনী কন্যার ধর্ম-প্রতিপালন – এই দুইয়ের মাঝে উপন্যাসটির মধ্যে ফুটে উঠেছে বিষবেদে সমাজের একটি জীবনচিত্র। সেই সঙ্গে বিষবেদে সম্প্রদায়ের লৌকিক জীবনের বিবরণ, উপকথা, ইতিহাস, মন্ত্র, গান, ঔষধ, তাবিজ-কবচ ইত্যাদি মিথ, জাদুবিদ্যা ও বিশ্বাস-সংস্কারের বিচিত্র রূপটিকেও তারাশঙ্কর বিশদভাবে তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সংকলন ও সম্পাদনা: শিশিরকুমার দাশ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৩, পৃ. ১১৪
- ↑ কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৬-৩৭
- ↑ ক খ "বাংলা কথাসাহিত্যে লৌকিক উপাদান", বিকাশকান্তি মিদ্যা, প্রবন্ধ সঞ্চয়ন, সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬ সংস্করণ, পৃ. ১৭৯৭-৯৮