ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ (১৯৪৭ – ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮) গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনারে সম্মানিত, কমিশন অন ইকোসিস্টেমের কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিশিষ্ট উপদেষ্টা এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) তথা প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সভাপতি ছিলেন।[১][২][৩][৪] তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল— সারা জীবনের প্রচেষ্টায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির সংরক্ষণের বিষয়টি এবং কার্যকরী জৈব নিকাশী ব্যবস্থাপনা।ফলে ওই জলাভূমিটি বিশ্বের একমাত্র বড় প্রাকৃতিক জলশোধক হিসাবে স্থান করে নিতে পেরেছে।[৩][৫][৬]
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ | |
|---|---|
 ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ (ভান দিকে) অন্য দুই জনের সাথে | |
| জন্ম | ১৯৪৭ ১৯৪৭ |
| মৃত্যু | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ (বয়স ৭০–৭১) |
| পেশা | ইঞ্জিনিয়ার ,ইকোলজিস্ট |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাধ্রুবজ্যোতি ঘোষের জন্ম কলকাতায়। পড়াশোনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর তিনিই প্রথম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্যানিটেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। কলকাতা শহরের তরল বর্জ্য ও সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থাপনায় তিনিই প্রথম কলকাতার জলাভূমি প্রসঙ্গ জনসমক্ষে আনেন।[১][৩]
ক্রিয়াকলাপ
সম্পাদনাধ্রুবজ্যোতি ঘোষ দেখালেন যে, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে পূর্ব কলকাতার জলাভূমিকে নিখরচায় নর্দমার কাজ, উর্বর জলজ উদ্যান, মৎস্য চাষ এবং পরিবেশের সামান্যতম ক্ষতি না করে বন্যা প্রতিরোধ সম্ভব। তাই কলকাতা শহরের পুর্বপ্রান্তের বিশাল জলাভূমিকে সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী।[৩]
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কলকাতা শহরের তরল বর্জ্যের পরিণতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এক ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন -
"বর্জ্যজল আসলে কিছুই না, ৯৫% জল এবং ৫% জীবাণু। এই বিশাল জলাভূমিতে ওই বর্জ্যজলের জীবাণু জলজ বাস্তুতন্ত্রে শৈবাল ও মাছের খাদ্যে পরিণত হয়। ফলে স্রেফ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রেই সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে ও সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় পুরো জল পরিশুদ্ধ অবস্থায় চলে আসে, বিপুল মাছের ভাণ্ডার তৈরি করে—পুরোটাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে—বিন্দুমাত্রও শোধন করাতে হয় না।"
তিনি ৭৫০ মিলিয়ন লিটার তরল বর্জ্য সূর্যালোকের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মির ব্যবহার করে জলাভূমিতে আগত ক্যানালগুলির জল শোধনের ব্যবস্থা করেন।
তিনি রামসার কনভেনশন অফ ওয়েটল্যান্ডস এর অঙ্গীকার বা চুক্তি অবলম্বন করে পূর্ব কলকাতার এই জলাভূমিকে রামসার সাইটে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন।[৩][৩][৫] এই জলাভূমিতে এখন যথেচ্ছ প্রোমোটিং, জলাভূমি ভরাট ও নগরায়ণের ফলে নজিরবিহীন সংকটের মুখে। পূর্ব কলকাতার এই জলাভূমি নিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন আমৃত্যু চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।[৪][৫]
তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তরের প্রধান ছিলেন। এছাড়া তিনি ভারতের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় জলাভূমি কমিটির সদস্য সহ ভারত সরকারের পক্ষে তিনি রামসার কনভেনশনের পরিচালক বোর্ডে একজন সদস্য ছিলেন।[৩] ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনারে সম্মানিত হন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসাবে লুক হফম্যান পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতায় পরলোক গমন করেন[৩]
অন্যান্য অর্জন
সম্পাদনা- 2005 - Ecology and Traditional Wetland Practice: Lessons from Wastewater Utilization in the East Kolkata Wetlands বইটি প্রকাশিত। এতে তিনি "জ্ঞানীয় বর্ণবাদ" শব্দটি তৈরি করেছিলেন, যার অর্থ এলিটদের দ্বারা দরিদ্রদের জ্ঞানের পদ্ধতিগতভাবে বর্জন।আইএসবিএন ৯৭৮৮১৯০১২৮১৫৫[৭][৮]
- আগস্ট 2016 - প্রথম ভারতীয় লুক হফম্যান অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী, পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে তার কাজের জন্য কৃতিত্ব।[২][৩][৬]
- 2017 - পূর্ব কলকাতার প্রান্তে একটি ডাম্প সাইটে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জীবন অন্বেষণ করে দ্য ট্র্যাশ ডিগার্স বইটি প্রকাশিত হয়েছে।আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৯৪৭৪১৪১আইএসবিএন 9780199474141[৩][৯]
- অশোক ফেলো হিসেবে স্বীকৃত।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Dhrubajyoti Ghosh (1947-2018): He found wealth in waste"। The Indian Express। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ Ghosh, Dhrubajyoti। "Dhrubajyoti Ghosh"। LinkedIn।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Ghosh" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট "Obituary: Dr Dhrubjyoti Ghosh, pioneer of wetland conservation in Eastern India"। iucn.org। ৫ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ Majumdar, Arkamoy Dutta (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "Dhrubajyoti Ghosh, wetlands warrior of Kolkata, is dead"। Mint। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ "Dhrubajyoti Ghosh - Civil Society Magazine"। civilsocietyonline.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ "Dhrubajyoti Ghosh to receive Luc Hoffmann Award for work on wise use of wetlands in Kolkata"। Ramsar News। ১৭ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Teachings of the East Calcutta Wetlands"। indiawaterportal.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Dhrubajyoti Ghosh, saviour of the East Kolkata Wetlands, believed in people and not policies"। Scroll.in। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ Ghosh, Dhrubajyoti (২০১৭)। The Trash Diggers। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-947414-1।