ধর্মের বিবর্তনীয় উৎস
ধর্মের বিবর্তনীয় উৎস এবং ধর্মীয় স্বভাব নিয়ে যে গবেষণা; তার সাথে বিবর্তনীয় মনস্তত্ত্ব, ভাষা এবং পুরানের উৎস, ধর্মের নৃবিদ্যার সাংস্কৃতিক তুলনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। কিছু বিষয় নব্য প্রস্তর যুগে ধর্ম, পুরা প্রস্তর যুগে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতার প্রমাণ এবং প্রাচীন বানরের স্বভাব নিয়ে গবেষণা করে।
মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীতে ধর্মীয় মনোভাব
সম্পাদনামানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় হলো শিম্পাঞ্জি এবং বনবো।[১][২] এই প্রাইমেট এবং মানুষদের সাধারণ পূর্বপুরুষ ৬০ থেকে ৮০ লক্ষ বছর আগে বসবাস করত। এইজন্য বলা হয় সেই প্রাচীনতম পূর্বপুরুষের অন্যতম প্রতিনিধি হলো এই শিম্পাঞ্জি এবং বনবো। বারবারা কিং যুক্তি দিয়ে বলেন যদিও প্রাইমেটরা ধর্মানুসারী নয় কিন্তু এমন কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে যা ধর্মের বিবর্তন হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। এই বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে আছে উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন বৈশিষ্ট্য, সাঙ্কেতিক যোগাযোগ, অলিখিত সামাজিক নিয়মকে মেনে চলার চেতনা।[৩][৪] অপর্যাপ্ত বেশ কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় হোমো নিয়ান্ডারথাল তাদের সদস্যদের মৃতদেহকে কবর দিত, যা প্রথা ব্যবহারের উদাহরণ। কবর দেওয়ার প্রথাকে ধর্মীয় ক্রিয়ার উদাহরণস্বরুপ প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। মানুষের ব্যবহারে আধুনিকতা দেখার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের ইতিহাসে ধর্মের অস্তিত্বের কোনো উদাহরণ নেই।[৫] অন্যান্য প্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে হোমো নিয়ান্ডারথালের সদস্যরা গুহাচিত্র তৈরী করত; যা ভাবনাকে সঙ্কেতের মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম ও ধর্ম ধারণের নিকটবর্তী ভাবনা ছিল।[৬]
হাতি তাদের সদস্যের মৃতদেহের চারপাশে কিছু প্রথা প্রদর্শন করে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে মৃতদেহের চারপাশে নীরব থেকে অবস্থান করে এবং আর্তনাদের মতো শব্দ করে এবং মৃতদেহের কাছে বারবার ফিরে এসে তাকে আদর করতে থাকে।[৭][৮] কিছু প্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে যে, অনেক প্রজাতি তাদের সদস্যদের মৃত্যুতে বা সদস্যদের হারানোর শোকে মুহ্যমান হয় এবং উচ্চ শব্দে ক্রন্দন করে। [৯]
মানব ধর্মের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পাদনামস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি
সম্পাদনাএই তত্ত্ব অনুসারে ধর্মীয় মনন গঠনের সম্ভাবনা নির্ভর করে মস্তিষ্কের উপর। ধর্মীয় এবং দার্শনিক ধারণা কে ধারণ করার জন্য মানুষের মস্তিষ্ক যথেষ্ট বড়।[১০] ৫ লক্ষ বছর আগে মানুষের বিবর্তনের সময় হোমিনিড মস্তিষ্ক আকারে ৩ গুণ হয়ে গিয়েছিল। নিওকর্টেক্স এলাকায় মস্তিষ্ক সম্প্রসারণের বেশিরভাগ কাজ সংগঠিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এই সেরেব্রাল নিওকর্টেক্স জটিল ঘটনা যেমন উপলব্ধি, ভাবনা, ভাষা, মনোযোগ, স্ব-ইচ্ছাকৃত চলন, প্রাসঙ্গিক স্মৃতিকে ধারণের মত ব্যাপারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।[১১] ডানবারের তত্ত্ব অনুযায়ী প্রজাতিতে নিওকর্টেক্সের আকারের সাথে সামাজিক জটিল আচরণ বুঝার এবং প্রদর্শন করার বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত।[১২] নিওকর্টেক্সের আকারের সাথে সামাজিক ব্যাপারগুলোর শ্রেণিবিভাগ যেমন প্রত্যেকের দল কত বড় হবে বা যৌন আচরণ কিরূপ হবে সেসব বিষয় নির্ভর করে।[১৩] শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কের ৫০ শতাংশ নিউরোকর্টেক্স, আর আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ জায়গা নিউরোকর্টেক্স।[১৪]
রবিন ডানবার যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রজাত্যায়নের মাধ্যমে ৫ লক্ষ বছর আগে প্রাচীন মানুষের নিউরোকর্টেক্সে বিবর্তন ঘটে। তার গবেষণার মুখ্য বিষয় ছিল প্রজাত্যায়নের পর ভাষা এবং ধর্মের মত জটিল সামাজিক বিষয়গুলোকে প্রক্রিয়াকরণকারী নিওকর্টেক্স এর উপর। এই গবেষণা বিলুপ্ত এবং বর্তমানে বাস করা হোমিনিডদের নিওকর্টেক্সের আকার নিয়ে বিশ্লেষণ (রিগেশন এনালাইসিস) করে দেখাতে চেয়েছে, কী পরিমাণ সামাজিক আচার আচরণ সুপ্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কালে পরিলক্ষিত হয়।[১৫]
স্টিফেন জে গুল্ড এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিবর্তনীয় পটভূমিকায় যখন বৃহত্তর মস্তিষ্ক গড়ে উঠে; যার ফলে হোমিনিডের সদস্যরা মৃত্যুতে সবকিছুর সমাপ্তি এবিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভাবতে সক্ষম হয়, ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে একতাবদ্ধ থাকার যে প্রয়োজনীয়তা তা সাভানার শিকারীরা অনুভব করে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ধর্মের উদ্ভব ঘটে।[১৬]
যন্ত্রের ব্যবহার
সম্পাদনালিউইস উলপার্ট এর মতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বিশ্বাসের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যার ফলে কার্যকারণ গত বিশ্বাসের উদ্ভব ঘটেছে। প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত নয় এমন যন্ত্রপাতি হাতে তৈরী করতে গেলে প্রথমেই একটা চিত্র কল্পনা করে নিতে হয়। উপরন্তু কীভাবে যন্ত্রগুলো কাজ করবে অর্থাৎ যন্ত্রের কার্যকারণ-ফলাফল সম্পর্কে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই পূর্ব থেকে বুঝতে হয়। [১৭] পাথরের হাতিয়ারের উৎকর্ষতার স্তর বিবেচনা করলে বুঝা যায়, যারা পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে পারে তাদের মধ্যে "বিশ্বাস করার হেতু কারণ" এর জন্ম হতে পারে।[১৮] উলপার্ট যুক্তি দেন হস্তনির্মিত কুঠারের মতো যন্ত্রপাতি তৈরীতে একাধিক উপাদানকে সমন্বিত করতে হয়। প্রাচীনকালে যারা এসব উপাদানকে সমন্বিত করে যন্ত্রপাতি তৈরি করত, তারা নিশ্চয়ই সচেতনভাবে একটার পর একটা উপাদানকে সমন্নিত করত। আর এ সমন্বিত করার পূর্বে তারা কল্পনা করতে সমর্থ ছিল; এ যন্ত্র দেখতে কীরূপ হবে এবং এ দিয়ে ঠিক কী কাজ করা যাবে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যারা এ সমস্ত অস্ত্রপাতি তৈরি করতে পারত তাদের মধ্যে "কারণ এবং ফলাফল" এর মত বোধিজ্ঞান উদ্ভব হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, সাম্প্রতিক সময়ের অন্যান্য প্রাইমেটেদের উপর করা গবেষণা গুলো থেকে জানা যায়, এই বোধিজ্ঞানকে ধারণের ক্ষমতা একচেটিয়া মানুষের নেই। উদাহরণস্বরূপ, শিম্পাঞ্জি খাঁচা থেকে পালিয়ে যাবার জন্য গাছের ভাঙা অংশকে মই হিসেবে ব্যবহার করেছে; এমন ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ, গাছের ডালকে মই হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে তারা যে পালিয়ে যেতে সমর্থ হবে, এমনটা শিম্পাঞ্জি পূর্ব থেকেই অনুমান করতে পেরেছিল। শিম্পাঞ্জি তার প্রজাতির সদস্যদের মৃতদেহকে ঘিরে শোক করার জন্য বহুল পরিচিত। শুধু তাই না, সূর্যাস্তের মতো নান্দনিক দৃশ্য শিম্পাঞ্জিকে অবলোকন করতে দেখা যায়। এসব কিছুই ধর্ম অথবা আধ্যাত্মিকতাকে অনুভব করার অন্যতম সূচক।[১৯] মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির কার্যকারণ নিয়ে বোধের গভীরতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রাণীতে ধী/বোধের গভীরতার বিষয়টি নির্ভর করে তার প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের আকারের উপরে। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের আকার যত বড়, বোধের গভীরতা তত বেশি।[২০]
ভাষার ক্রমবিকাশ
সম্পাদনাএকজন থেকে অপরজনে প্রেরিত হয় ধর্মের ন্যায় এরূপ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ভাষার মত কিছু প্রতীক বিশিষ্ট ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। ফিলিপ লাইবারম্যানের মতে "মানব ধর্মের ভাবনা এবং নৈতিক চেতনা সম্পুর্ণভাবে ভাষাগত-বোধের উপর নির্ভরশীল।"[২১] এই পূর্বানুমান থেকে বিজ্ঞান লেখক নিকোলাস ওয়াড উদ্ধৃতি দেন:
- "বিশ্বের সকল সমাজে দেখা যাওয়া আচার আচরণের একটি হলো ধর্মাচরণ; যা ৫০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে মানুষ যখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরছিল, তার পূর্ব থেকে এখনো বিদ্যমান। যদিও ধর্মীয় প্রথায় নৃত্য এবং সুরের ব্যবহার লক্ষণীয় কিন্তু পবিত্র বাণীকে উদ্ধৃত করার জন্য ধর্মকে অনেক বেশি বাচনিক হতে হয়। যদি তাই হয়, তবে ধর্মের যে আধুনিক রূপ আমরা দেখি, ভাষার উদ্ভবের পূর্বে এ ধর্মের অস্তিত্ব থাকা কখনো সম্ভব না। বিভিন্ন অনুকল্প থেকে ধারণা করা হয়, মানুষ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পরার পূর্বেই আধুনিক ভাষার রূপরেখা সংক্ষিপ্ত পরিসরে অর্জিত হয়ে গিয়েছিল। যদি ধর্ম আধুনিক সুষ্পষ্টভাবে উচ্চারিত ভাষার বিবর্তনের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে ৫০ হাজার বছর পূর্বেই সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও আধুনিক ধর্মেরও উদ্ভব ঘটেছিল।"[২২]
আরেকটি ধারণা আছে যা একক ধর্মবিশ্বাস ও গোষ্ঠীগত ধর্মবিশ্বাসের মধ্য পার্থক্য করে৷ ধর্ম তার সূচনালগ্নে ভাষার উদ্ভবের উপর নির্ভরশীল না হলেও পরবর্তীতে নির্ভরশীল হয়ে পরে৷ একক মানুষের মস্তিষ্ক কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যার জন্য পূর্বে তা বর্ণনা এবং বোঝার চেষ্টা করে। এই প্রবণতা ভাষার উদ্ভবের আগে থেকেই চলে আসছে, আর হয়ত ভাষার উদ্ভবের পেছনে কারণও এটিই। প্রাকৃতিক কোনো ঘটনা (যেমন: বজ্রপাত, তুষারপাত, অগ্ন্যুৎপাত) দেখলে ব্যক্তি মানুষ মাত্রই তা বুঝতে চাইবে। ধারণা হলোঃ সুপ্রাচীনকালে যেহেতু জ্ঞানের স্বল্পতা ছিল, তাই ব্যক্তি নিজে নিজে বুঝতে গিয়ে অবচেতনভাবেই অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসকে আনয়ন করত। এই ধারণাগুলো অন্যদের সাথে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা থেকে সামগ্রিক ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে বলে মনে করা হয়। সামাজিকভাবে গৃহীত একটা ভ্রান্ত ধারণা সামাজিকতার বাধ্যবাধকতার কারণে প্রশ্নাতীত মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
নৈতিকতা এবং সংঘবদ্ধভাবে বসবাস
সম্পাদনাফ্রান্স ডি ওয়াল এবং বারবারা কিং উভয়ই মানব নৈতিকতাকে প্রাইমেট সামাজিকতার উন্নত রূপ বলে মনে করেন। অনেক সামাজিক প্রাণী যেমন প্রাইমেট, ডলফিন এবং তিমি অনেক বৈশিষ্ট্য দেখায় যেগুলোকে মাইকেল শারমার "নৈতিক অনুভূতির" পূর্বোক্ত অবস্থা হিসেবে অভিহিত করেছেন। শারমারের মতে, নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো একই সাথে মানুষ এবং অন্যান্য সামাজিক প্রাণী বিশেষ করে গ্রেট এপদের মধ্যে দেখা যায়:
আসক্তি এবং বন্ধন (attachment and bonding), সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সহায়তা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া (direct and indirect reciprocity), পরার্থপরতা এবং পারষ্পরিক পরার্থপরতা, সংঘাতের সমাধান এবং শান্তিস্থাপন (conflict resolution and peacemaking), প্রতারণা এবং প্রতারণা সনাক্তকরণ, সমাজ নিয়ে সচেতনতা এবং অন্যেরা নিজের সম্পর্কে কি ভাবছে তা নিয়ে ভাবা, গোষ্ঠীর সামাজিক নিয়ম সংক্রান্ত সচেতনতা এবং সাড়াদান।[২৩]
ডি ওয়াল যুক্তি দেখান, সকল সামাজিক প্রাণীকে দলবদ্ধভাবে বসবাস করার উপযোগী হতে গিয়ে নিজের আচরণকে পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং ব্যবহারকে সংযত করতে হয়েছে। নিজেদের স্বার্থপরতাকে সংবৃত করতে এবং সহযোগিতামূলক দল গঠন করতে গিয়ে প্রাইমেট সমাজেই প্রাক-নৈতিক অনুভূতির (নৈতিকতার পূর্ব অবস্থা) বিবর্তন ঘটেছে। যেকোনো সামাজিক প্রজাতিতে, সহযোগিতামূলক দলের সদস্য হলে দলের প্রত্যেক সদস্য এককভাবে সুবিধা পায়। উদাহরণস্বরূপ, দলের মধ্যে না থেকে কেও একা একা ঘুরে বেড়ালে বহিরাগত দ্বারা সে আক্রান্ত হতে পারে। দলের সদস্য হলে খাবার খুঁজে পাবার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। প্রাণীদের মধ্যে এটা স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে যে, যদি তারা দলগতভাবে শিকার করে, তবে বড় এবং বিপজ্জনক শিকারকেও কাবু করে নিজেদের খাদ্যের সংস্থান করতে পারে।
শিম্পাঞ্জি ৫০ জনের সম্মিলন-বিভাজন দল (fission-fusion group) গঠন করে বাস করে। সম্মিলন-বিভাজন সমাজ বলতে সেই ধরনের সমাজ বোঝানো হয় যেখানে সদস্যগণ কোনকোন সময় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয় (যেমন দিনে খাদ্য সংগ্রহ বা শিকার ধরার জন্য) এবং কখনও আবার ছোট ছোট দলগুলো একত্রে মিলিত হয় (যেমন রাতে ঘুমানোর সময়)। সম্ভবত, মানুষের প্রাথমিক পূর্বপুরুষগণ ঠিক একই আকারের ছোট আকারের দল গঠন করে বসবাস করত। বর্তমান শিকারি-সংগ্রাহক (hunter gatherer) সমাজগুলোর আকারের ভিত্তিতে বলা যায়, আমাদের নিকট অতীতের প্রস্তরযুগীয় হোমিনিডরাও কয়েক শত মানুষের দল গঠন করে বাস করত। মানব বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সমাজের আকার বড় হতে থাকলে সামাজিক সংঘবদ্ধতা বজায় রাখার জন্য নতুন ধারার শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজন দেখা যায়। ১০০ থেকে ২০০ জন মানুষের এই গোষ্ঠীতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ (social control), সংঘাত সমাধান (conflict resolution) এবং দলীয় সংহতি বজায় রাখার (group solidarity) জন্য সমাজে নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ডঃ ডে ওয়ালের মতে, মানব নৈতিকতায় দুটো নতুন স্তর দেখা যায়; যা অন্যান্য প্রাইমেট সমাজে পরিলক্ষিত হয় না। মানুষ সমাজ নির্ধারিত নৈতিকতাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বাধ্য করার জন্য পুরস্কার এবং না করলে ফলস্বরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। ব্যক্তির পুরস্কার অথবা শাস্তি পাওয়ার মাধ্যমে তার সামাজিক মর্যাদার নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও মানুষ যুক্তি দিয়ে কিছু বিশ্লেষণ করা এবং বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে; যা প্রাণীজগতের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
মনস্তত্ত্ববিদ ম্যাট জে. রোজানো বিশদ গবেষণা করে বলেন যে, নৈতিকতার পরে এবং নৈতিকতার উপর ভিত্তি করেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। ধর্মে ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব, আত্মা এবং স্রষ্টাকে প্রবেশ করানোর পরে মানুষ বুঝতে পারে, এই ধর্মের ভয় দেখিয়ে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে স্বার্থপরতা রহিত করা যাবে এবং দলবদ্ধভাবে বাস করতে গেলে একে অপরের সাথে আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধি করা যাবে। যা কোনো জীবের প্রতিযোগিতামুলক পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য খুবই জরুরী।[২৪] ধর্মের উৎপত্তি এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তার পরিবর্তন সমাজবদ্ধ মানুষের টিকে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছিল।[২৫][২৬]
ধর্ম সম্পর্কিত বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞান
সম্পাদনাবোধিগত বিজ্ঞানীরা জীবনের ইতিহাসের প্রাথমিক হোমো গণে ধর্মের প্রভাব দেখা যাওয়াকে মস্তিষ্কের গঠনের ফলাফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যাইহোক, কীভাবে ধর্মীয় মনন গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতৈনক্য আছে। ধর্মের উদ্ভবের দুইটি প্রধান মতের একটি অনুসারে ধর্ম প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং এর নির্বাচিত উপযোগিতা আছে এবং অপরটি অনুসারে ধর্ম শুধুমাত্র মনের অন্যান্য অভিযোজন এর মত একটি সহজাত প্রথা হিসেবে ধর্ম গড়ে উঠেছে।[২৭] জীববিজ্ঞানে স্পান্ড্রেলের এর বাংলা অর্থ হচ্ছে পরোক্ষ অভিযোজন। বিবর্তনের কারণে কোনো বৈশিষ্ট্য অভিযোজিত হওয়ার সময়, তার কোনো বাইপ্রোডাক্ট উদ্ভব হলে তাকে স্পান্ড্রেল বলা হয় এবং এক্সাপ্টেশনের অর্থ হলো, বিবর্তনের দরুণ কোনো বিশেষ কার্যসমাধাতে উদ্ভব হলেও ভিন্ন ধারার কাজ করা। স্টিফেন জে গুল্ড বিশ্বাস করেন ধর্ম একটি এক্সাপ্টেশন অথবা স্পান্ড্রেল। সহজ ভাষায় ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে কোনো মনস্তাত্ত্বিক মেকানিজমের উপজাত হিসেবে। আর সে মনস্তাত্ত্বিক মেকানিজমের বিবর্তন হয়েছে অন্য কোনো কারণে।[২৮][২৯][৩০]
ধর্ম গড়ে উঠার পেছনের কৌশল হিসেবে তিনটি আলাদা কারণ এর সমন্বয়কে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো সত্তা শনাক্তকরণ: কোনো সত্তা যে ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারে তাকে চেনার প্রয়োজনীয়তা থেকে গড়ে উঠা মনমানসিকতাই সত্তা সনাক্তকরন; অপরটি হলো নিদানবিদ্যা: সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনার পিছনে কোন কারণ আছে এমন চিন্তা থেকে গড়ে ওঠা নিদেন বিদ্যা এবং সর্বশেষটি হলো মানস তত্ত্ব। সেখানে নিজস্ব বিশ্বাস, চাহিদা এবং অভিলাষ কে প্রতিমূর্তকরণ হচ্ছে মনের তত্ত্ব। এই তিনটি আলাদা আলাদা চিন্তাভাবনা থেকে মানুষ বিবেচনা করেছে, প্রকৃতিতে ঘটে থাকা বিভিন্ন ঘটনার (যেমনঃ ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি) পিছনে কেউ একজন আছে যে চাইলেই ক্ষতি করতে পারে। তাই সে সত্তাকে আলাদা করার প্রয়োজনীয়তার নিরীখে গড়ে উঠা সনাক্তকরণ ও নিজের মনের চিন্তাকে প্রতিমূর্রকরণের মাধ্যমে ধর্ম গড়ে উঠেছে।[৩১] সামষ্টিক ধর্মীয় বিশ্বাস একত্রীকরণ করে সত্তাকে দৈব রূপ দেওয়ার মাধ্যমেই ধর্ম প্রকৃত রূপ পায়।[৩২]
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন ধর্মের উদ্ভব এর পিছনে জৈবিক কারণ বিদ্যমান। একটি বিতর্কিত মতামত অনুসারে মানুষের ঈশ্বর জিন আছে। ভিএমএটি২ জিনের কিছু প্রকরণ মানুষের আধ্যাত্মিকতা তৈরীতে ভূমিকা রাখে।[৩৩]
পল ডি ম্যাকলিনের একটি মত অনুসারে ধর্মের মুল কারণ ট্রিউন মস্তিষ্ক: সরীসৃপ মস্তিষ্ক, লিম্বিক তন্ত্র এবং নিউরোকর্টেক্স এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। সামষ্টিক ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের আবেগ যেমন ভালোবাসা, ভয় এবং সঙ্গ লাভের ইচ্ছার উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে এবং বিভিন্ন জৈব-সামাজিক নিয়ম এবং প্রতিষ্ঠিত সামাজিকতা হিসেবে লিম্বিক সিস্টেমের মধ্য স্থাপন করে দেয়। ব্যক্তির একক বিশ্বাস সব সময়ই নিওকর্টেক্সের কিছু যৌক্তিকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত যা কিনা সামষ্টিক বিশ্বাস থেকে বেশীরভাগ সময়ই একেবারে ভিন্ন হয়৷
অন্য আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারে যারা ধর্ম পালন করে, তারা নিজেদের মধ্যে শান্তি অনুভব করে এবং তা যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়। তাই যারা ধর্মে বিশ্বাস করে, জিনগত ভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধার্মিকরাই নির্বাচিত হয়। বিশেষ করে যে ধর্মীয় দলগুলো প্রথার প্রতি আস্থাশীল এবং সামাজিক যোগাযোগে থাকত, তাদের সদস্যদের মন শান্ত, দুশ্চিন্তা দূরীভূত, অনাগত ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে স্রষ্টার উপর অর্পিত করেই নিশ্চিন্ত থাকত। যার ফলে চাপের মধ্যে থেকেও তারা নিজেদের কাজ চমৎকারভাবে করতে পারত।[৩৪] ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে যোদ্ধাদের জন্য ধর্ম অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে থাকে। এমটি যদি সত্য হয় এজন্যই হয়তোবা আধুনিক ধর্মগুলো উর্বরতা এবং পরিবার তন্ত্রের প্রতি অধিক জোর দিয়েছে।
এফ.এইচ প্রিভিকের আরেকটি মতামত অনুসারে, ডোপামিনের ফাংশনের বৃদ্ধির সাথে মানুষের বুদ্ধিমত্তার বৃদ্ধি হয়েছে; যার দরুণ ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে।[৩৫][৩৬][৩৭] ডোপামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, দূরবর্তী স্থান এবং সময়কে ভালোভাবে অনুধাবন করা। আর এবিষয়গুলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের জন্য অন্যতম নিয়ামক।[৩৮] পূর্বের শামনিক গুহা থেকে প্রাপ্ত চিত্রটি খুদিত হয়েছে পাথরে এবং আঁকা হয়েছে গিরিমাটি ব্যবহার করে। এ থেকে বুঝা যায় চিত্রটি ৪০ হাজার বছর পূর্বের এবং ৮০ হাজার বছর পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলীয় এলাকায় প্রাপ্ত চিত্রগুলো পরিষ্কার ভাবে প্রমাণ করে; তৎকালীন সময়ে মানুষের মননে বিমূর্ত ভাবনার বিকাশ ঘটেছিল।
ধর্ম উদ্ভবের প্রাগৈতিহাসিক প্রমাণ
সম্পাদনাঠিক কোন সময় থেকে মানুষ ধর্মানুসারী হয়ে উঠতে শুরু করেছে, তা অজানাই রয়ে গেছে। যাইহোক বিবর্তনীয় পুরাতত্ত্ব অনুসারে ধর্মীয় প্রথাসমূহ মধ্য পুরাপ্রস্তর যুগের (৪৫ থেকে ২০০ হাজার বছর পূর্বে) আশেপাশে সময়ে প্রবর্তিত হয়েছে।[৩৯]
পুরাপ্রস্তরযুগের কবর
সম্পাদনাধর্মের অস্তিত্বের প্রাচীনতম যে প্রমাণকে চিন্তা করা হয় সে প্রাচীনতম প্রমাণ হলো সদস্যদের মৃত্যুতে সেই প্রজাতির অন্য সদস্যরা যখন সে মৃতদেহ কে ঘিরে কোন প্রথা পালন করে তখন ধরা হয় ধর্মের সূত্রপাত হয়েছে। বেশিরভাগ প্রাণী তাদের নিজেদের সদস্যের মৃত্যুর পর সে মৃতকে ঘিরে বড়জোর কিছুটা আগ্রহ দেখায়।[৪০] যখন মানুষ তার সদস্যদের মৃত্যুতে সেই মৃত দেহকে ঘিরে কিছু প্রথা পালন করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে; সেসময়টিকেই মানুষের স্বভাবের পরিবর্তনের একটি তাৎপর্যমন্ডিত চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। মৃতদেহ নিয়ে প্রথা পালন করাকে চিহ্নিত করা হয় মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে আগ্রহ এবং চিন্তা-ভাবনার ফসল হিসেবে। ফিলিপ লিবারম্যান বিবৃতিতে বলেন, "মৃতদেহকে কবর দেওয়ার সময় বিভিন্ন ভালো ভালো দ্রব্যাদি দিয়ে কবর দেওয়াকে (কবরজাত দ্রব্য) সুনির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় প্রথার চর্চা এবং মৃতের সাধারণ জীবন ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের চিন্তাকে বুঝায়।"[২১]
মৃতদেহ কে ঘিরে বিভিন্ন প্রথা পালন করার রীতি প্রথম নথিবদ্ধ করা হয় স্পেনে প্রাপ্ত সাইট আটাপুকারাতে। এই এলাকার একটি গর্তে ৩০ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রাক মানুষের মৃতদেহকে কবর দেওয়া হয়েছিল; যাদের হোমো হেইডেলবার্গেনেসিস এর সদস্য বলে অনুমান করা হয়।[৪১] নিয়াণ্ডারথাল হচ্ছে হোমিনিডের প্রথম প্রাচীনতম সদস্য যারা ইচ্ছাকৃতভাবে মৃতদেহকে কবর দিত। লাশের সাথে পাথরের অস্ত্র এবং প্রাণীর হাড় কে একত্রিত করে অগভীর কবরে তারা সমাহিত করত। এই সমস্ত কবরজাত দ্রব্যের লাশের সাথে থাকা, মৃতের সাথে আবেগপ্রবণতা এবং খুব সম্ভবত মৃত্যু পরবর্তী জীবন এর সাথে যোগসূত্রের বিশ্বাসের সাক্ষ্য দেয়। ইরাকের সানিদার, ক্রোয়েশিয়ার ক্রাপিনা এবং ইসরাইলের কেবারা গুহাতে নিয়ান্ডার্থালদের কবরের বিভিন্ন এলাকা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।[৪২][৪৩][৪৩][৪৪]
ইসরাইলের কাফজেতে আধুনিক মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন কবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর বয়স ১ লক্ষ বছরের পুরাতন। এই কঙ্কালটিতে লাল গিরি মাটি দ্বারা দাগ আঁকা ছিল। কঙ্কালের বাহুতে শুকরের ম্যাণ্ডিবুলের হাড় ছিল। এছাড়াও কঙ্কালটির সাথে কিছু আনুষঙ্গিক উপাদান (কবরজাত দ্রব্য) ছিল যা খুব সম্ভবত মৃতদেহকে সমাধিস্থ করার সময় পণ্যগুলো সহ কবর দেওয়া হয়েছিল।[৪৫] ফিলিপ লিবার ম্যান বলেছেন:
- আজ থেকে এক লক্ষ বছর পূর্বে আধুনিক হোমিনিডরা যখন আফ্রিকা থেকে পূর্ব মধ্য এলাকায় ছড়িয়ে পরতে থাকে তখন কবর দেওয়ার সাথে কবরে মৃতের সাথে দ্রব্য রাখার প্রথার উদ্ভব হয় "।[৪৫]
মেট রোজানো প্রস্তাবনায় বলেন, আশি হাজার বছর থেকে ষাট হাজার বছর পূর্বে মানুষ যখন লিভ্যাণ্ট থেকে আফ্রিকায় যায়, সে সময়টাই ছিল ধর্মের বিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়।[৪৬]
প্রতীকের ব্যবহার
সম্পাদনাধর্মে প্রতীকের ব্যবহার একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। পুরাতত্ত্ববিদ স্টিফেন মিথেন এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কন এবং প্রতীকের ব্যবহার ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আনুগত্য ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটায়। যেহেতু অতিপ্রাকৃত শক্তির কার্যাবলী প্রাকৃতিক সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়; তাই অন্য কারো সাথে অতিপ্রাকৃত শক্তির বিষয়ে আলোচনা করা বা অন্য কাউকে বুঝানো একটু দুরুহ। এক্ষেত্রে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করে বুঝানো সহজ হয়ে যায়।[৪৭] জীবাশ্ম রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকা প্রতীকের ব্যবহার দেখা গিয়েছে; যা ধর্ম এবং চিত্রের সংযোগের মাধ্যমে গঠিত এবং এ কাজ দেখে বুঝা যায় জীবাশ্মের মালিকের মন ধর্মীয় ভাবনা ভাবতে যে সক্ষম ছিল তা প্রমাণিত হয়। চিত্রশিল্প এবং প্রতীক বিমূর্ত ধারণাকে ভাবতে এবং কল্পনা করতে সক্ষম; এবিষয়টিকে ঈঙ্গিত করে। এ বিষয়গুলো প্রয়োজন মানব মনে ধর্মীয় ভাবনা গড়ে তোলার জন্য। অধ্যাপক ওয়েন্টজেল ভেন হাইস্টিন এবিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেছেন, অদৃশ্য অনেক বিষয়কে প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা জরুরী হয়ে পরে। যখন মানুষের পূর্বপুরুষরা প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা শিখে গেল, তখন থেকে তারা বিমূর্ত বিষয়ে বিশ্বাস রাখতেও সক্ষম হয়।[৪৮]
প্রাথমিক প্রমাণ সাপেক্ষে আফ্রিকার মধ্য পাথুরে যুগের সাথে প্রতীকের ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যায়। আজ থেকে ১ লক্ষ বছর পূর্বে লাল গিরিমাটিকে রঞ্জক হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। শিকারীরা একত্রিত হওয়ার জন্য এই লাল গিরিমাটিকে ব্যবহার করত। তাদের এই ব্যবহার থেকে লাল গিরিমাটি যে প্রতীক অথবা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা পালনের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হত; তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে যেসব শিকারী সংগ্রাহকরা এখনো বিদ্যমান তারা আজো লাল রংকে ধর্মীয় প্রথা পালনের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে। এটি ধারণা করা হয় মানব সভ্যতার সংস্কৃতিতে লাল রঙ সার্বজনীন ভাবে প্রথা পালনের অন্যতম আনুষঙ্গিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হত; কারণ লাল রং যৌনতা, রক্ত, জীবন এবং মৃত্যুর প্রতিনিধিত্ব করে।[৪৯]
যদিও লাল গিরিমাটি কে ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে চিন্তা করাকে রিচার্ড ক্লেইন এবং স্টিফেন মিথেন এর মত বিজ্ঞানীরা সমালোচনা করেছেন। কারণ উত্তর পুরাপ্রস্তর যুগে যেসব গুহাচিত্র গুলো পাওয়া গিয়েছে, সেখানে ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব কারী চিত্রগুলোকে সুষ্পষ্টভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপঃ শাবুতে যে গুহাশিল্পটি পাওয়া গিয়েছে, সে গুহাশিল্পটি দেখতে আধা মানুষ এবং আধা প্রাণীর মত। তাই তাদের মতে যেখানে পুরাপ্রস্তর যুগের মানুষ ধর্মকে সুষ্পষ্ট চিত্র দিয়ে প্রতীকায়িত করত সেখানে লাল মাটির ব্যবহার দেখেই তাকে ধর্মীয় প্রথা পালন ভাবার যুক্তি নেই; লাল মাটিকে ব্যবহারের অর্থ বহুরকম হতে পারে।
প্রতিষ্ঠিত বা সংগঠিত ধর্মের উদ্ভব
সম্পাদনাসময় বর্তমান থেকে …বছর পূর্বে | সমাজের অবস্থা | জনসংখ্যা |
---|---|---|
১০০,০০০–১০,০০০ | গোষ্ঠী | ১০–১০০ |
১০,০০০–৫,০০০ | উপজাত | ১০০–১,০০০ |
৫,০০০–৩,০০০ | সর্দারপ্রথা | ১,০০০–১০,০০০ |
৩,০০০–১,০০০ | রাজ্য | ১০,০০০–১০০,০০০ |
২,০০০*–বর্তমান | সাম্রাজ্য | ১০০০০০–১,০০০,০০০ |
১১০০০ বছর পূর্বে নব্যপ্রস্তরযুগের বিপ্লবের সময় পূর্বাঞ্চলের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠিত ধর্মের উদ্ভব ঘটে থাকলেও অনুমান করা হয়, একই সময় স্বাধীনভাবে অন্যান্য অঞ্চলেও ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল। কৃষিজ ব্যবস্থার আবিষ্কারের ফলে মানব সমাজ যাযাবরের শিকারী জীবন থেকে একজায়গায় থিতু হতে থাকে। নব্যপ্রস্তরযুগের বিপ্লবের দরুণ জনগোষ্ঠীতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। চারণ গোষ্ঠী থেকে রাজ্য এবং সাম্রাজ্য গঠন করার মাধ্যমে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মের বিশেষায়িত ক্রমবিকাশ প্রতিফলিত হয়। গোষ্ঠী এবং ছোট উপজাতি সমাজ অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস করলেও তারা কোনো কেন্দ্রীয় অথবা একক ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না বরং তারা সম্পদ এবং শান্তির জন্য বহু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত। এসমস্ত ঈশ্বর গুলো স্বতন্ত্রভাবে ভক্তের প্রার্থনায় সাড়া দিতেন।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদান করার জন্যে প্রতিষ্টিত ধর্মগুলোর নিম্নোক্ত উপায়ে উদ্ভব ঘটেছিলঃ
- কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে (সত্তা বা ঈশ্বর) ন্যায্যতা প্রদান করে তার নামে কর আদায় করার অধিকার গড়ে তোলা যায় এবং সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত সেবা প্রদানের জন্য সেই করকে কাজে লাগানো যায়।
- দল ও গোষ্ঠীসমূহ গঠিত হয় স্বল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে, যারা একে অপরের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। অথচ, রাষ্ট্র গঠিত হয় লক্ষাধিক মানুষদের নিয়ে, যাদের সবার মধ্যেই সম্পর্ক থাকে না। জ্যারেড ডায়মন্ডের মতে সাধারণত সম্পর্কহীন মানুষের মধ্যে শত্রু-প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সংগঠিত/প্রতিষ্ঠিত ধর্ম সম্পর্কহীন মানুষদের মধ্যে একটি বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাঁর বই "Guns, Germs, and Steel"-এ যুক্তি দেন শিকারি-সংগ্রাহী সমাজে মৃত্যুর মুখ্য কারণই ছিল নরহত্যা। [৫০]
- নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া ঈশ্বরদের কেন্দ্র করে ঘরে ওঠা ধর্মগুলি সম্ভবত বহুসংখ্যক সম্পর্কহীন মানুষদের মধ্যে বৃহৎ ও সমবায় গোষ্ঠীর উত্থানে সাহায্য করেছে।[৫১]
নব্যপ্রস্তরযুগের বিপ্লবের সময় প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার মত সৃষ্টি হওয়া রাজ্য গুলোতে রাজা, সম্রাট প্রধানের দ্বারা ধর্মতন্ত্র প্রচলিত ছিল। তারা একই সাথে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দ্বৈত ভূমিকা পালন করতেন।[২৩] নৃতাত্ত্বিকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে সমস্ত সমাজের রাজ্যগুলোর প্রধানরা ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করত।[২৩]
লেখার আবিষ্কার
সম্পাদনানব্যপ্রস্তরযুগের বিপ্লবের পরে, ৫০০০ বছর পূর্বে লেখার আবিষ্কারের কারণে প্রযুক্তিগত ক্রমবিকাশ (সাংস্কৃতিক বিপ্লব) এর অগ্রযাত্রা তীব্রতর হয়ে উঠে। বিভিন্ন প্রতীক গুলো শব্দে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফলপ্রসূ প্রভাব পরতে থাকে। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে মুদ্রণ ব্যবস্থা আবিষ্কার হওয়ার পরে ভাবনার আদান প্রদান করা সহজ হয়ে যাওয়ায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। ধারণা করা হয় সুমেরীয় অথবা প্রাচীন মিশরে হিসাব ভাবনাকে সংরক্ষণের জন্য লিখন ব্যবস্থার প্রথম উদ্ভব ঘটেছিল। এরপর পরই বিভিন্ন ধর্মীয় বাণীকে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য লিখন ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো শুরু হয়। ধর্মীয় বাণী লিখন দ্বারা সংরক্ষণকে ধর্মীয় ইতিহাস এর সূচনালগ্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরে পিরামিডে প্রাপ্ত ধর্মীয় লিখাগুলো অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উদ্ধৃতি হিসেবে পরিচিত; যা ২৪০০- ২৩০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে লিখিত হয়েছে। [৫২][৫৩][৫৪] প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো ছড়িয়ে পড়ার জন্য লিখন-ব্যবস্থা বিরাট একটি ভূমিকা পালন করেছিল। যে সময়টিতে লেখালেখির কোন চল ছিল না, সেসময়ে ধর্মগুলো এক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মৌখিকভাবে ছড়িয়ে পরত। ধর্মীয় পুরোহিতরা তা উচ্চারণ করতেন এবং সমাজের বাসিন্দারা ধর্মের কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় মনে রাখত। এরপর লেখালেখির প্রচলনের পর ধর্মীয় গ্রন্থে মানুষ তথ্য লিপিবদ্ধ করতে শুরু করে; যা যাজক সম্প্রদায় সংরক্ষণ করতে থাকে। এরপর থেকে মানুষ বিশাল বিশাল তথ্যগুলো ভুলে যাওয়ার ভয়ে লিখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে শুরু করেন। লেখনীর মাধ্যমে মানুষ ধর্মীয় বাণী গুলো মানুষ যেকোনো সময় আহরণ করতে পারতেন এবং ধর্মগুলো লিখন ব্যবস্থার কল্যাণে বিস্তৃত হতে থাকে।[৫৫] লিখনী আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান পরিমাপের একটি নৈর্ব্যক্তিক পর্যায় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ধরনের ভাবনাকে শব্দে পরিণত করা এবং তার বৈধতার মাধ্যমে মানুষ তার ভাবনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে মানুষের চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন আসতে থাকে। সমাজ কাঠামো, মানুষের চিন্তাজগতে পরিবর্তন আসার জন্য লিখন ব্যবস্থা এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মানুষের চিন্তাভাবনার, চেতনার পরিকাঠামোর নিরন্তর পরিবর্তনকে কার্ল পপার 'সত্যৌপম্য' (সত্য বলে প্রতীয়মান/আপাত সত্য) বলে অভিহিত করেন। এই আপাত সত্য বিষয়টি হলো সে পর্যায় যখন মানুষ প্রকৃত সত্যের পথে যাত্রা করে।[৫৬]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Gibbons, Ann (জুন ১৩, ২০১২)। "Bonobos Join Chimps as Closest Human Relatives" (ইংরেজি ভাষায়)। জুন ২০, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১৮।
- ↑ Ajit Varki; Daniel H. Geschwind; Evan E. Eichler (অক্টো ১, ২০০৮)। "Explaining human uniqueness: genome interactions with environment, behaviour and culture"। Nature Reviews Genetics (ইংরেজি ভাষায়)। 9,: 3, 51–54। পিএমআইডি 8802414। পিএমসি 2756412 ।
- ↑ King, Barbara (2007). Evolving God: A Provocative View on the Origins of Religion. Doubleday Publishing. আইএসবিএন ০-৩৮৫-৫২১৫৫-৩.
- ↑ Excerpted from Evolving God by Barbara J. King[সাল উল্লেখ প্রয়োজন।]
- ↑ Palmer, Douglas, Simon Lamb, Guerrero Angeles. Gavira, and Peter Frances. Prehistoric Life: the Definitive Visual History of Life on Earth. New York, N.Y.: DK Pub., 2009.
- ↑ D. L. Hoffmann. et al., U-Th dating of carbonate crusts reveals Neandertal origin of Iberian cave art. Sciencie, Vol. 359, Issue 6378, 912-915, 2018.
- ↑ Bhattacharya, Shaoni (২০০৫-১০-২৬)। "Elephants may pay homage to dead relatives"। Biology Letters। 2 (1): 26–28। ডিওআই:10.1098/rsbl.2005.0400। পিএমআইডি 17148317। পিএমসি 1617198 । সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-১১।
- ↑ McComb, K.; Baker, L.; Moss, C. (২০০৬-০৩-২২)। "African elephants show high levels of interest in the skulls and ivory of their own species"। Biology Letters। 2 (1): 26–28। ডিওআই:10.1098/rsbl.2005.0400। পিএমআইডি 17148317। পিএমসি 1617198 । সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-১১। অজানা প্যারামিটার
|1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Marc Bekoff, Grief in animals: It's arrogant to think we're the only animals who mourn 2009
- ↑ Ehrlich, Paul (২০০০)। Human Natures: Genes, Cultures, and the Human Prospect। Washington, D.C.: Island Press। পৃষ্ঠা 214। আইএসবিএন 978-1-55963-779-4।
Religious ideas can theoretically be traced to the evolution of brains large enough to make possible the kind of abstract thought necessary to formulate religious and philosophical ideas
- ↑ Molnár, Zoltán; Pollen, Alex (১ জানুয়ারি ২০১৪)। "How unique is the human neocortex?"। Development। 141 (1): 11–16। ডিওআই:10.1242/dev.101279। পিএমআইডি 24346696।
- ↑ Dávid-Barrett, T.; Dunbar, R. I. M. (২০১৩-০৮-২২)। "Processing power limits social group size: computational evidence for the cognitive costs of sociality"। Proceedings of the Royal Society of London B: Biological Sciences। 280 (1765): 20131151। আইএসএসএন 0962-8452। ডিওআই:10.1098/rspb.2013.1151। পিএমআইডি 23804623। পিএমসি 3712454 ।
- ↑ Dunbar, Robin I. M.; Shultz, Susanne (২০১০-০৬-০১)। "Bondedness and sociality"। Behaviour। 147 (7): 775–803। আইএসএসএন 1568-539X। ডিওআই:10.1163/000579510X501151।
- ↑ "9 Brainy Facts About the Neocortex"। mentalfloss.com। ১৭ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Dunbar, Robin (২০০৩)। "THE SOCIAL BRAIN: Mind, Language, and Society in Evolutionary Perspective" (পিডিএফ)। সেপ্টেম্বর ১১, ২০০৮ তারিখে মূল (– Scholar search) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Stephen Jay Gould; Paul McGarr; Steven Peter Russell Rose (২০০৭)। "Challenges to Neo-Darwinism and Their Meaning for a Revised View of Human Consciousness"। The richness of life: the essential Stephen Jay Gould। W. W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 232–233। আইএসবিএন 978-0-393-06498-8।
- ↑ Lewis Wolpert (২০০৬)। Six impossible things before breakfast, The evolutionary origins of belief। New York: Norton। আইএসবিএন 978-0-393-06449-0।
with regard to hafted tools, One would have to understand that the two pieces serve different purposes, and imagine how the tool could be used,
- ↑ Wolpert, Lewis (২০০৬)। Six impossible things before breakfast, The evolutionary origins of belief। New York: Norton। পৃষ্ঠা 82। আইএসবিএন 978-0-393-06449-0।
Belief in cause and effect has had the most enormous effect on human evolution, both physical and cultural. Tool use, with language, has transformed human evolution and let to what we now think of as belief
- ↑ Connor, Steve (আগস্ট ৫, ২০১১)। "Can an ape learn to be human?"। The Independent। London।[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Mohandas, E (২০০৮)। "Neurobiology of spirituality"। Mens Sana Monogr। 6 (1): 63–80। ডিওআই:10.4103/0973-1229.33001। পিএমআইডি 22013351। পিএমসি 3190564 । [অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ ক খ Lieberman (১৯৯১)। Uniquely Human। Cambridge, Mass.: Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-92183-2।
- ↑ *"Wade, Nicholas – Before The Dawn, Discovering the lost history of our ancestors. Penguin Books, London, 2006. p. 8 p. 165" আইএসবিএন ১-৫৯৪২০-০৭৯-৩
- ↑ ক খ গ ঘ Shermer, Michael (২০০৪)। "Why are we moral:The evolutionary origins of morality"। The Science of Good and Evil। New York: Times Books। আইএসবিএন 978-0-8050-7520-5।
- ↑ Rossano, Matt (২০০৭)। "Supernaturalizing Social Life: Religion and the Evolution of Human Cooperation" (পিডিএফ)। ৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ Nicholas Wade. Scientist Finds the Beginnings of Morality in Primate Behavior. New York Times. March 20, 2007.[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Matthew Rutherford. The Evolution of Morality. University of Glasgow. 2007. Retrieved June 6, 2008
- ↑ Evolutionary Religious Studies (ERS): A Beginner's Guide ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০১০ তারিখে[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ "Darwin's God"। The New York Times। ৪ মার্চ ২০০৭।
- ↑ Toward an evolutionary psychology of religion and personality ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Steven Pinker (২৯ অক্টোবর ২০০৪)। "The evolutionary psychology of religion"। harvard.edu। ২০০৮-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Atran, S; Norenzayan, A (২০০৪)। "Religion's evolutionary landscape: counterintuition, commitment, compassion, communion."। Behavioral and Brain Sciences। 27 (6): 713–30; discussion 730–70। ডিওআই:10.1017/s0140525x04000172। পিএমআইডি 16035401। সাইট সিয়ারX 10.1.1.687.8586 । ২০০৮-০৮-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Dávid-Barrett, Tamás; Carney, James (২০১৫-০৮-১৪)। "The deification of historical figures and the emergence of priesthoods as a solution to a network coordination problem"। Religion, Brain & Behavior। 0 (4): 1–11। আইএসএসএন 2153-599X। ডিওআই:10.1080/2153599X.2015.1063001।
- ↑ Kluger, Jeffrey; Jeff Chu; Broward Liston; Maggie Sieger; Daniel Williams (২০০৪-১০-২৫)। "Is God in our genes?"। TIME। Time Inc.। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৮।
- ↑ Lionel Tiger and Michael McGuire (২০১০)। God's Brain। Prometheus Books। আইএসবিএন 978-1-61614-164-6। see pages 202-204
- ↑ Previc, F.H. (2009). The dopaminergic mind in human evolution and history. New York: Cambridge University Press.
- ↑ Previc, F.H. (2011). Dopamine, altered consciousness, and distant space with special reference to shamanic ecstasy. In E. Cardona & M. Winkelman (eds.), Altering consciousness: Multidisciplinary perspectives (Vol. 1), pp. 43-60. Santa Barbara, CA: ABC-CLIO, LLC.
- ↑ Previc, Fred H (২০০৬)। "The role of the extrapersonal brain systems in religious activity."। Consciousness and Cognition। 15 (3): 500–39। ডিওআই:10.1016/j.concog.2005.09.009। পিএমআইডি 16439158।
- ↑ Previc, F. H. (২০০৬)। "The role of the extrapersoal brain systems in religious activity"। Consciousness and Cognition। 15 (3): 500–539। ডিওআই:10.1016/j.concog.2005.09.009। পিএমআইডি 16439158।
- ↑ Culotta, Elizabeth (৬ নভেম্বর ২০০৯)। "On the Origin of Religion"। Science। 326 (5954): 784–787। ডিওআই:10.1126/science.326_784। পিএমআইডি 19892955। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৮ – science.sciencemag.org-এর মাধ্যমে।
- ↑ Elephants may pay homage to the dead[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Greenspan, Stanley (২০০৬)। How Symbols, Language, and Intelligence Evolved from Early Primates to Modern Human। Cambridge, MA: Da Capo Press। আইএসবিএন 978-0-306-81449-5।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "The Neanderthal dead:exploring mortuary variability in Middle Palaeolithic Eurasia" (পিডিএফ)। ২০০৮-০৯-১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
- ↑ ক খ "FindArticles.com - CBSi"। findarticles.com। ২৮ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "BBC article on the Neanderthals"।
Neanderthals buried their dead, and one burial at Shanidar in Iraq was accompanied by grave goods in the form of plants. All of the plants are used in recent times for medicinal purposes, aind it seems likely that the Neanderthals also used them in this way and buried them with their dead for the same reason. Grave goods are an archaeological marker of belief in an afterlife, so Neanderthals may well have had some form of religious belief.
[অনির্ভরযোগ্য উৎস?] - ↑ ক খ . Uniquely Human page 163
- ↑ Rossano, Matt (২০০৯)। The African Interregnum: The "Where," "When," and "Why" of the Evolution of Religion (পিডিএফ)। The Frontiers Collection। পৃষ্ঠা 127–141। আইএসবিএন 978-3-642-00127-7। ডিওআই:10.1007/978-3-642-00128-4_9। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।
- ↑ Symbolism and the Supernatural[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ "Human Uniqueness and Symbolization"। ২০০৯-০৫-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৪।
This 'coding of the non-visible' through abstract, symbolic thought, enabled also our early human ancestors to argue and hold beliefs in abstract terms. In fact, the concept of God itself follows from the ability to abstract and conceive of 'person'
- ↑ Rossano, Matt (২০০৭)। "The Religious Mind and the Evolution of Religion" (পিডিএফ)। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।
- ↑ ক খ Diamond, Jared (১৯৯৭)। "Chapter 14, From Egalitarianism to Kleptocracy"। Guns Germs and Steel। New York, NY: Norton। পৃষ্ঠা 277। আইএসবিএন 978-0-393-03891-0।
- ↑ Norenzayan, A.; Shariff, A. F. (২০০৮)। "The origin and evolution of religious prosociality"। Science। 322 (5898): 58–62। ডিওআই:10.1126/science.1158757। পিএমআইডি 18832637। সাইট সিয়ারX 10.1.1.659.6887 ।
- ↑ Budge, Wallis (১৯৯৭)। An Introduction to Ancient Egyptian Literature। Mineola, N.Y.: Dover Publications। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 978-0-486-29502-2।
- ↑ Allen, James (২০০৭)। The Ancient Egyptian Pyramid Texts। Atlanta, Ga.: Scholars Press। আইএসবিএন 978-1-58983-182-7।
- ↑ The beginning of religion at the beginning of the Neolithic ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০১২ তারিখে[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
- ↑ Pyysiäinen, Ilkka (২০০৪)। "Holy Book:The Invention of writing and religious cognition"। Magic, Miracles, and Religion: A Scientist's Perspective। Walnut Creek, CA: AltMira Press। আইএসবিএন 978-0-7591-0663-5।
- ↑ Objective Knowledge: An Evolutionary Approach, 1972, Rev. ed., 1979, আইএসবিএন ০-১৯-৮৭৫০২৪-২
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Pascal Boyer, Religion Explained: The Evolutionary Origins of Religious Thought, New York: Basic Books 2001.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "Religion as an Evolutionary Organism" with David Sloan Wilson, The Religious Studies Project Podcast Series,
- Robert Wright´s "The Evolution of God"
- Evolutionary Religious Studies at Binghamton University, An introduction to the study of religion from an evolutionary perspective.
- A 1998 speech at Biota 2 by Douglas Adams on the ইউটিউবে Origin of God
- Wilhelm Schmidt and the origin of religion – an opposing viewpoint