দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা

(দ্রুত পরিবহন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা (ইংরেজি: Rapid transit) [টীকা ১] বলতে মূলত শহরাঞ্চলে প্রচলিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ও দ্রুতগামী বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী রেলব্যবস্থাকে বোঝায়।[][] দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার যানবাহন সাধারণত সড়কপথের সমতলে না থেকে ভূগর্ভস্থ পথে (পাতালরেল) বা ভূমি থেকে উঁচুতে নির্মিত রেলপথে (উড়ালরেল) চলে। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার রেলগাড়িগুলি অন্য যানবাহন (যেমন- সাধারণ রেলগাড়ি, গাড়ি, বাস, ট্রাম, ইত্যাদি) থেকে পৃথকভাবে নিজস্ব পথে চলাচল করে। সাধারণত শহরে বিদ্যমান সড়কের উপরে বা নিচে রেলপথ তৈরি করেই দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার কাজ চালানো হয়। নগরকেন্দ্রের বাইরে দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার রেলপথগুলি স্তর-পৃথকীকৃত ভূসমতলস্থিত পথের (Grade separated ground level track) উপর থাকে।

ক্ল্যাপহ্যাম কমন টিউব স্টেশন, লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড, লন্ডনের দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা
হেলসিঙ্কি মেট্রো দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার অভ্যন্তরভাগ
তাইপেই মেট্রো পরিবহন ব্যবস্থার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরভাগ
মন্ট্রিয়াল মেট্রোর স্কোয়ার-ভিক্টোরিয়া বিরতিস্থলে প্যারিস মেট্রোর অনুকরণে নির্মিত প্রবেশপথ

দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থাতে বৈদ্যুতিক রেলগাড়িগুলি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু চক্রপথ (বা লাইনের) এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে ও ফেরত আসতে থাকে এবং নির্দিষ্টসংখ্যক বিরতস্থল বা স্টেশনে স্বল্প সময়ের জন্য থামে; এ সময় যাত্রীরা রেলগাড়িতে ওঠা-নামা করেন। এই ব্যবস্থায় সাধারণত বৈদ্যুতিক বহু-এককবিশিষ্ট রেলগাড়ি (Electric Multiple Unit Train ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট ট্রেইন) ব্যবহৃত হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রবারের টায়ার, চৌম্বক উত্তোলন বা মনোরেলও ব্যবহৃত হয়। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার রেলগাড়িগুলি অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবস্থাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে। সাধারণত একটি গণপরিবহন পরিচালনা সংস্থা এই ব্যবস্থার পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার রেলগাড়িগুলি ট্রাম বা লাইট রেলের থেকে দ্রুতগামী ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু দুরপাল্লার যাত্রীবাহী সাধারণ রেলগাড়ির তুলনায় দ্রুতগামী নয়। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থায় খুব কম পরিমাণ জমি ব্যবহার করে অনেক বেশি পরিমাণে যাত্রী পরিবহন করা যায়। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্যান্য রূপগুলি হল পিপল মুভার, ছোটো আকারের হাল্কা মেট্রো ও যাত্রীবাহী রেল সংকর এস-বান (S-Bahn)।

বিশ্বের প্রথম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড চালু হয় ১৮৬৩ সালে। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রযুক্তিটি ইউরোপের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কয়েকটি উড়াল ব্যবস্থা চালু হয়। প্রথমে এই সব রেলপথে বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহৃত হত। পরে সর্বত্রই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার বৃহত্তম প্রসার ঘটেছে এশিয়াতে। চালকবিহীন রেলগাড়িও এই ব্যবস্থায় চালু আছে। মোট ১৬০টি শহরে দ্রুতগামী গণপরিবহন সেবা চালু রয়েছে; এগুলির মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ৮,০০০ কিলোমিটার (৪,৯০০ মাইল) এবং বিশ্বে মোট দ্রুতগামী গণপরিবহন বিরতিস্থলের সংখ্যা প্রায় ৭,০০০। এছাড়াও ২৫টি শহরে দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা নির্মীয়মান অবস্থায় রয়েছে। ভারতে কলকাতা শহরে প্রথম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থাটি চালু হয় ১৯৮৪ সালে যা কলকাতা মেট্রো বা কলকাতা পাতালরেল নামে পরিচিত।

রেলপথের দৈর্ঘ্য ও বিরতিস্থলের সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা হল নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে। যদিও লাইনের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম এরকম ব্যবস্থাগুলি হল লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডসাংহাই মেট্রো[] দৈনিক যাত্রীসংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের ব্যস্ততম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থাগুলি হল টোকিও মেট্রোমস্কো মেট্রো

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষাতে Mass rapid transit ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, Metro মেট্রো, Underground আন্ডারগ্রাউন্ড, Subway সাবওয়ে, Tube টিউব, ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Rapid transit"Merriam-Webster। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৭ ; "Metro"International Association of Public Transport। ২০১৩-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৭ 
  2. "Glossary of Transit Terminology"American Public Transportation Association। ২০১৩-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৭ 
  3. "Shanghai now the world's longest metro"। ৪ মে ২০১০। ১৯ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১০ 

রচনা ও গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা