দেবেশ রায়
দেবেশ রায় (১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ — ১৪ মে, ২০২০) একজন আন্তর্জাতিক বাঙালি ভারতীয় সাহিত্যিক। তিস্তা পারের বৃত্তান্ত উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৯০ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন।[১] বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন ছকভাঙা শ্রেষ্ঠতম আধুনিক ঔপন্যাসিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।[২]
দেবেশ রায় | |
---|---|
জন্ম | পাবনা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ১৭ ডিসেম্বর ১৯৩৬
মৃত্যু | ১৪ মে ২০২০ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৮৩)
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | তিস্তা পারের বৃত্তান্ত , সময় অসময়ের বৃত্তান্ত, তিস্তা পূরাণ, ইতিহাসের লোকজন, সাংবিধানিক এজলাস, খরার প্রতিবেদন, মফস্বলী বৃত্তান্ত, শরীরের সর্বস্বতা, বরিশালের যোগেন মন্ডল,স্বপ্নপুরষের খোঁজে জুলেখা ইত্যাদি আরও অনেক উপন্যাস ও অসাধারণ সব ছোটগল্গ সংগ্রহ এবং উপন্যাস নিয়ে, উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে, শিল্পের প্রত্যহে , উপন্যাসের সংকট, সময় সমকাল প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থের সংগ্রহ |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯০) |
দাম্পত্যসঙ্গী | কাকলি দেবী (স্ত্রী) |
সন্তান | দেবর্ষি রায় (পুত্র) |
জীবনী
সম্পাদনাদেবেশ রায়ের জন্ম ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলায়, অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। তার পিতার নাম ক্ষিতীশ রায় এবং মাতার নাম অপর্ণা রায়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তার পরিবার জলপাইগুড়ি চলে আসেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ এক দশক তিনি পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় প্রত্যক্ষ বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।[৩] রাজনীতির সূত্রে শিখেছিলেন রাজবংশী ভাষা। কলকাতা শহরেও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সে একজন গবেষণা সহকর্মী ছিলেন। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে জলার্ক পত্রিকায়। তার প্রথম উপন্যাস যযাতি। তার অর্ধ শতকের বেশি সাহিত্য জীবনে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হল: যযাতি, আপাতত শান্তিকল্যাণ হয়ে আছে, মানুষ খুন করে কেন (১৯৭৬), মফস্বলী বৃত্তান্ত (১৯৮০), সময় অসময়ের বৃত্তান্ত (১৯৯৩), তিস্তা পারের বৃত্তান্ত (১৯৮৮), তিস্তা পূরাণ, প্রতিবেদন, ইতিহাসের লোকজন, বরিশালের যোগেন মন্ডল, ইউসুফ জুলেখা , সাংবিধানিক এজলাস (২০১৯), লগন গান্ধার (১৯৯৫),[৪][৫] দেবেশ রায়ের কর্ম এবং জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস ছিল উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের তিস্তা নদী কেন্দ্রিক রাজবংশী সম্প্রদায়।[৬] তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তার তিস্তা পারের বৃত্তান্ত উপন্যাসের জন্যে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ভাষা সাহিত্য পরিষদ দ্বারা এবং ভুয়ালকা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।[৩] তার অনুুবাদ রোমিয়ো জুুুলিয়েট , ট্র্রয়ের মেয়েরা ।প্রধান প্রবন্ধের বই - আঠার শতকের বাংলা গদ্য ও উপনিবেশের সমাজ ও বাংলা সাংবাদিক গদ্য, বিপরীতের বাস্তব ও রবীন্দ্রনাথের গল্প , উপন্যাস নিয়ে , উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে , ব্যক্তিপুরূষেরা , রবীন্দ্রনাথ ও তার আদিগদ্য , উপন্যাসের বিবিধ সংকট । মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ 'সেতুবন্ধন ' পত্রিকা সম্পাদনার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
দেবেশ রায় ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে কাকলি দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[৭]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৪ মে ২০২০ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে দেবেশ রায়ের জীবনাবসান হয়।[৮] ইতিপূর্বেই ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে কাকলি রায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একমাত্র সন্তান দেবর্ষি রায় বেঙ্গালুরু শহরে কর্মরত।[৯]
গ্রন্থ তালিকা
সম্পাদনা- তিস্তাপারের বৃত্তান্ত (১৯৮৮)
- মফস্বলি বৃত্তান্ত (১৯৮৯)
- সময় অসময়ের বৃত্তান্ত (১৯৯৩)
- লগন গান্ধার (১৯৯৫)
- আত্মীয় বৃত্তান্ত
- শিল্পায়নের প্রতিবেদন
- দাঙ্গার প্রতিবেদন
- খরার প্রতিবেদন
- যযাতি
- তিস্তাপুরাণ
- আঙিনা
- ইতিহাসের লোকজন
- উচ্ছিন্ন উচ্চারণ
- একটি ইচ্ছা মৃত্যুর প্রতিবেদন
- চেতাকে নিয়ে চীবর
- জন্ম
- তারাশংকর:নিরন্তর দেশ
- নবেলজোড়
- বেঁছে বততে থাকা
- শিল্পায়নের প্রতিবেদন
- মার-বেতালের পুরান
- যুদ্ধের ভিতরে যুদ্ধ
- সহমরণ
- বরিশালের যোগেন মণ্ডল (২০১০) / সাংবিধানিক এজলাস (২০১৯)
- দেবেশ রায়ের গল্প (৬ খণ্ড) (১৯৬৯),
- দুই দশক (ছোটগল্প সংকলন) (১৯৮২),
- দেবেশ রায়ের ছোটগল্প (১৯৮৮),
- স্মৃতিহীন বিস্মৃতিহীন (ছোটগল্প সংকলন) (১৯৯১),
- রবীন্দ্রনাথ ও তার আদি গদ্য (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- সময় সমকাল (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- উপন্যাস নিয়ে (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- শিল্পের প্রত্যহে (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- উপনিবেশের সমাজ ও বাংলা সাংবাদিক গদ্য (প্রবন্ধগ্রন্থ)
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়: নিরন্তর মানুষ (প্রবন্ধগ্রন্থ)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সাহিত্যের ইয়ারবুক, ২০১০, জাহিরুল হাসান সম্পাদিত, পৃ. ১২২
- ↑ "দেবেশ রায়"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০।
- ↑ ক খ "Jalpaiguri episode in Debesh Roy'slife" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০।
- ↑ "Sahitya Akademi winner Debesh Roy no more"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। PTI। ২০২০-০৫-১৫। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৫।
- ↑ সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, শিশিরকুমার দাশ সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৩, পৃ.১০৩
- ↑ প্রতিবেদন, নিজস্ব। "তিস্তাপারের বৃত্তান্ত রেখে চলে গেলেন দেবেশ রায়"। anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৫।
- ↑ "07_chapter 2.pdf" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২০।
- ↑ "চলে গেলেন কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়, শোকের ছায়া সাহিত্যজগতে"। bengali.news18.com। ২০২০-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৪।
- ↑ "Details"। www.epaper.eisamay.com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]