দুবলহাটি রাজবাড়ী
দুবলহাটী রাজবাড়ী প্রায় দু’শ’ বছরের প্রাচীন স্থাপনা এবং তৎকালীন জামিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর সময়ে এই বাড়িটির ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়। দুবলহাটির জমিদারী ছিল সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারত এর কিছু অংশে।[১]
দুবলহাটি রাজবাড়ী | |
---|---|
বিকল্প নাম | দুবলহাটি জমিদার বাড়ি |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
ধরন | বাসস্থান |
অবস্থান | দুবলহাটি, নওগাঁ সদর উপজেলা,নওগাঁ |
ঠিকানা | নওগাঁ সদর উপজেলা |
শহর | নওগাঁ |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৪°৪৭′১১.৪″ উত্তর ৮৮°৫২′৫৯.০″ পূর্ব / ২৪.৭৮৬৫০০° উত্তর ৮৮.৮৮৩০৫৬° পূর্ব |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর |
কারিগরী বিবরণ | |
উপাদান | ইট, কাঁদা মাটি |
আকার | ৫ একর |
পরিচিতি | বলিহার জমিদারের বাসস্থান |
অবকাঠামো
সম্পাদনা৫ একর এলাকাজুড়ে বিশাল প্রাসাদ। আর প্রসাদের বাইরে ছিল দীঘি, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা।[২] রাজ প্রাসাদের সামনে রোমান স্টাইলের বড় বড় পিলার গুলো রাজাদের রুচির পরিচয় বহন করে। এছাড়াও দুবলহাটি রাজ প্রাসাদে সাড়ে ৩’শ ঘর ছিল। তার ছিল ৭টি আঙ্গিনা।[১] প্রাসাদের ভিতর কোনটি ৩ তলা আবার কোনটি ছিল ৪ তলা ভবন।[৩] ১টি গোল্ডেন সিলভার ও ১টি আইভরির তৈরি সিংহাসন ছিল। ব্রিটিশরা সিংহাসন দু’টি নিয়ে যায়। ১৮৬৪ সালে রাজ পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে স্কুলটি নামকরণ হয় রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতি বছর স্টেটের খরচে ৫ জন করে গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা ছিল এখানে।[৪][৫]
অবস্থান
সম্পাদনানওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ীর অবস্থান। বালুডাঙ্গা থেকে হাপানিয়া। হাপানিয়া থেকে ভ্যান বা অটো রিক্সায় দুবলহাটী রাজবাড়ী যাওয়া যায়। অথবা নওগাঁ গোস্তহাটীর মোড় হতে অটোরিক্সা যোগে দুবলহাটী রাজবাড়ী যাওয়া যায়।[৪][৬]
ইতিহাস
সম্পাদনাস্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে রঘুনাথ নামের এক ব্যক্তি এ এলাকায় লবণ ও গুড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি দীঘলি বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খয়রা নদী দিয়ে নৌকা যোগে দুবলহাটিতে ব্যবসার জন্য আসেন (বর্তমানে নদীর অসত্মিত্ব আর নেই)। তিনি প্রায় প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখতেন তাঁকে কে যেন বলছে, “তুই যেখানে নৌকা বেঁধেছিস সেখানে জলের নিচে রাজ রাজেশ্বরী দেবীর প্রতিমা আছে। সেখান থেকে তুলে স্থাপন কর।” রঘুনাথ একদিন ভোরবেলা জলে নেমে দেখলেন সত্যিই সেখানে রাজ রাজেশ্বরীর প্রতিমা আছে। তিনি প্রতিমাটি জল থেকে তুলে একটি মাটির বেদী তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করলেন। এরপর তার ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে।
অন্য আরেক ঐতিহাসিকদল মনে করেন, দুবলহাটি জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা জগতরাম একজন লবণ ব্যবসায়ী, বাণিজ্য উপলক্ষে দুবলহাটির কাছের গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন এবং বিল অঞ্চলের ইজারা পত্তন গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে তারা প্রচুর জমির মালিক হন। কথিত আছে যে, এই অঞ্চলে তেমন কোন ফসল উৎপন্ন না হওয়ায় ভুমা মহল অজুহাতে দুবলহাটির জমিদার কই মাছ দিয়ে কর পরিশোধ করতেন। মাত্র ২২ কাহন কই মাছ কর হিসেবে দিতেন। রঘুনাথের বিত্ত-বৈভবের খবর পৌঁছে যায় মোগল দরবারে। মোগল দরবারের নির্দেশে তাকে ডেকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ নবাবের দরবারে। নবাব তাকে রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ জারি করেন। তিনি নবাবকে জানান, তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে শুধু জল আর জল। কোন ফসল হয় না। তবে বড় বড় কৈ মাছ পাওয়া যায়। বিষয় বুঝতে পেরে নবাব তাকে প্রতি বছর রাজস্ব হিসাবে ২২ কাহন কৈ মাছ প্রদানের নির্দেশ দেন।[৬][৭]
১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দ এর দিকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর রাজা হরনাথ রায় সপরিবারে চলে যান ভারতে। রাজবংশের স্মৃতিস্বরূপ থেকে যায় বিশাল সুরম্য অট্টালিকা দুবলহাটি রাজবাড়ী। পরবর্তীতে এটি সরকারি সম্পদ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিজেদের অধীনে নেয়।[৪][৮]
শাসকগন
সম্পাদনা- রাজা হরনাথ
চিত্রশালা
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "দুবলহাটি রাজবাড়ি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ "নওগাঁর দুবলহাটি রাজবাড়ি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে"। সমকাল। ২০২০-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ "ধ্বংসের পথে ঐতিহাসিক দুবলহাটি রাজবাড়ি (ভিডিও)"। Ekushey TV। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ ক খ গ "দুবলহাটি রাজবাড়ি বাঁচান"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ "বিলুপ্তির পথে ২২৪ বছরের দুবলহাটি রাজবাড়ি"। Bangla Tribune। ২০২০-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ ক খ "ভেঙে পড়েছে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ীর একাংশ"। NTV Online। ২০১৬-০৭-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ "নওগাঁ সদর উপজেলা"। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২০২০-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
- ↑ "ধ্বংসের মুখে দুবলহাটি রাজবাড়ি"। dbcnews.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৫।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- http://www.naogaonsadar.naogaon.gov.bd/site/tourist_spot/94d5cb1d-1ab1-11e7-8120-286ed488c766/%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%80%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ জুন ২০২০ তারিখে