দীনেশ দাস
দীনেশ দাস (১৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৩ - ১৩ মার্চ ১৯৮৫) ছিলেন একজন বাঙ্গালি কবি ।
দীনেশ দাস | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৩ মার্চ ১৯৮৫ | (বয়স ৭১)
যুগ | বিংশ শতাব্দী |
প্রথম জীবন
সম্পাদনাআদিগঙ্গার তীরে আলিপুরের চেতলা অঞ্চলে মামাবাড়ীতে (৬৫ এফ জয়নুদ্দি মিস্ত্রি লেন, কলিকাতা - ৭০০ ০২৭) ১৯১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর দীনেশ দাসের জন্ম হয়। বাবার নাম হৃষিকেশ দাস এবং মা কাত্যায়নী দেবী। ওনারা তিন ভাই ও এক বোন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে মাত্র বারো বছর বয়স থেকে দীনেশ দাস ছড়া লিখতে শুরু করেন। পনেরো বছর বয়সে নবম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি ১৯৩০ সালে দীনেশ দাস ম্যাট্রিক ও ১৯৩২ সালে আই-এ পাস করেন। এরপর ১৯৩৩-৩৪ সালে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন। যদিও বিপ্লবী সমিতির কাজ ও কাব্যসাহিত্য চর্চার চাপে তার বি এ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি । পরে নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৩৮ সালে বি এ পাস করেন। [১][২]
পেশাগত ও কবি জীবন
সম্পাদনা১৯৩৪ সালে দীনেশ দাসের প্রথম কবিতা ‘শ্রাবণে’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৫ সালে তিনি কার্শিয়াং-এর খয়াবাড়ি চা বাগানে চাকরিতে যোগ দেন। এক বছরের মাথায় ১৯৩৬ সালে কলকাতা ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে ‘প্রথমবৃষ্টির ফোঁটা’, ‘মৌমাছি’, ‘নখ’, ‘হাই’, ‘চায়ের কাপে’ সহ নানা কবিতা একে একে লিখতে থাকেন। তখনও তার কোন কবিতা সংকলন প্রকাশিত না হওয়া সত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলন গ্রন্থে ‘মৌমাছি’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতী জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে ১৯৩৭ সালে দীনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি। ব্রিটিশ সরকারকে ধোঁকা দিতে পরিকল্পিতভাবে হাতুড়ি শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের ভয়ে এক বছর ‘কাস্তে’ ছাপার মুখ দেখেনি। ১৯৩৮ সালে কবিবন্ধু অরুণ মিত্রের সৌজন্যে সেটি আনন্দবাজার শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়। পরে পুলিস তার বাসস্থান তল্লাশি করে এবং তাকে লর্ড সিন্হা রোডে আটকে রাখা হয়।
১৯৩৯ সালে তিনি ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে (পরে নাম হয় এল আই সি) যোগ দেন। সাত বছর চাকরির পর ১৯৪৬ সালে কর্মস্থলে ইউনিয়ন গড়তে গিয়ে বাধা পেয়ে তিনি কাজে ইস্তফা দেন। এই সময় তিনি দৈনিক কৃষক ও মাতৃভূমি কাগজে কিছুদিন কাজ করেন। চলচ্চিত্রে গীতিকার ও সহ পরিচালকের কাজেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে হাওড়া জেলার দেউলপুর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজে যোগ দেন। এক বছর পর কলকাতায় ফিরে এসে স্থায়ীভাবে চেতলা বয়েজ স্কুলে বাংলার শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন।
১৯৬১ ও ১৯৭৪ সালে তিনি দিল্লিতে জাতীয় কবি সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি কবি রূপে আমন্ত্রিত হন। ১৯৬১ সালে তিনি আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত হন।
১৯৮৫ সালের ১৩ই মার্চ কবি দীনেশ দাস গোপালনগর পিতৃগৃহে (৪/১ আফতাব মস্ক লেন) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১]
পুরস্কার
সম্পাদনা১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দীনেশ দাসের প্রথম শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন ‘উল্টোরথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। ১৯৮০ সালে নজরুল আকাদেমি থেকে তিনি প্রথম নজরুল পুরস্কার পান। ১৯৮২ সালে শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘রাম গেছে বনবাসে’র জন্য দীনেশ দাসকে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন।[১]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৩৯ সালে ঢাকার উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী যামিনী বিশ্বাসের তৃতীয়া কন্যা শ্রীমতি মণিকা বিশ্বাসকে তিনি বিয়ে করেন। তিনি দুই পুত্র (শান্তনু ও ভারবী) এবং এক কন্যা (জোনাকি)-র জনক।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ কয়াল, বিশ্বনাথ। "আজই শতবর্ষে পা দিলেন কবি দিনেশ দাস সেই আপসহীন, সংগ্রামী কবিকে স্মরণ 'কাস্তে' কবি" (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২)। গণশক্তি। ১২ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "কবি দীনেশ দাস"। www.bhorerkagoj.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]