দিলীপকুমার রায় (কান্তগীতি)
দিলীপকুমার রায় (২৯ এপ্রিল ১৯১৭ – ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতবিশারদ। কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন কান্তকবি রজনীকান্ত সেনের দৌহিত্র। তিনি রজনীকান্তের তৈরি করা মূল সুর-সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং একাধিক গানের স্বরলিপি তৈরি করেন।পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে গীত কয়েকটি কালজয়ী শ্যামাসঙ্গীতের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন তিনি। [১]
দিলীপকুমার রায় | |
---|---|
জন্ম | ভাঙ্গাবাড়ি, পাবনা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ২৯ এপ্রিল ১৯১৭
মৃত্যু | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ | (বয়স ১০৫)
ধরন | কান্তগীতি |
পেশা | কণ্ঠশিল্পী, সংগীতজ্ঞ |
কার্যকাল | ১৯৪০ – ২০১৯ |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাদিলীপকুমার রায়ের জন্ম ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল [২] তার মাতুলালয় ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন পাবনার ভাঙাবাড়ি'তে। পিতা ছিলেন রসায়নবিদ সত্যরঞ্জন রায়। মাতা ছিলেন রজনীকান্ত সেনের জ্যেষ্ঠা কন্যা শান্তিলতা দেবী। দিলীপকুমার ছিলেন তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন। কিছুদিন চাকরি করার পর পিতার কেমিক্যাল ফার্মে যোগ দেন এবং সেই সঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
সঙ্গীতজীবন
সম্পাদনাদিলীপকুমারের সঙ্গীত শিক্ষা মাতা শান্তিলতা দেবী ও সেনোলা রেকর্ড কোম্পানির প্রশিক্ষক তার মামা সুকৃতি সেনের কাছে। তারই রচিত ও সুরারোপিত গানে দিলীপকুমারের প্রথম রেকর্ডিং ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের পূজায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপকুমার রায়ের গায়কিও ছিল তার কণ্ঠে। [৩] ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আকাশবাণী কলকাতায় প্রথমে আধুনিক ও পরে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে হরিপদ রায়ের তালিমে তুমি গাও তুমি গাও’, ‘ওগো দুঃখসুখের সাথি’ অতুলপ্রসাদের গান গেয়েছেন, রেকর্ডও করেছেন সেনোলা কোম্পানিতে। দাদামশাই রজনীকান্ত সেনের গান- "বেলা যে ফুরায়ে যায়", খেলা কি ভাঙ্গেনা হায়","কেউ নয়ন মুদে দেখে আলো, কেউ দেখে আঁধার" গান দুটি ছিল তার প্রথম রেকর্ডিং। পঞ্চাশের দশকে তিনি প্রশিক্ষক হিসাবে যুক্ত হন এইচএমভি'র সঙ্গে।
দাদামশাই রজনীকান্তকে চোখে দেখার সুযোগ হয়নি দিলীপকুমারের, কিন্তু দাদুর ২৯০ টি গানের কথায়, সুরারোপিত গান শুনেছেন মা ও মামাদের কণ্ঠে। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট স্বরলিপি তৈরি ছিল না। তিনি লক্ষ্য করেন বাণিজ্যিক জগতে কান্তগীতির সুর বিকৃতি ঘটছে। তাই তিনি মূলত স্মৃতির উপর নির্ভর করে মূল সুরের সংরক্ষণ এবং কয়েকটির সুরসৃষ্টিতে দীর্ঘ দিন সচেষ্ট ছিলেন। [৪] কান্তগীতিকে জনপ্রিয় করতে, কালজয়ী এক একটি গানকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজে গেয়েছেন, অন্যদের শিখিয়েছেন এবং কিছু গানে নিজেই সুরকাঠামো তৈরি করেছেন। তাছাড়া শুধু কান্ত-কবির গানের সুর সংরক্ষণ নয়, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রয়াণের তিন বৎসর আগে পর্যন্ত বাংলা গানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তিনি। বাংলা সঙ্গীত জগতে তার পরিচিতি ছিল সঙ্গীত তারকাদের মাস্টার মশাই হিসাবে। বহু স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ সেনগুপ্ত, অনুপ ঘোষাল, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অর্ঘ্য সেন, এমনকি পঙ্কজ মল্লিক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখেরা তার সঙ্গীত পরিচালনায় রেকর্ড করেছেন। [৩]
সঙ্গীতের রচয়িতা হিসাবে তার পরিচিতি ছিল তার। শ্যামাপুজো উপলক্ষে ভক্তিগীতি লিখে সুর করে দেওয়ার অনুরোধ আসে তৎকালীন এক গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে। প্রবাদপ্রতিম শ্যামাসঙ্গীত শিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে গীত ভক্তিগীতি গুলি যুগোত্তীর্ণ হয়ছে। তার রচিত ও সুরারোপিত উল্লেখযোগ্য শ্যামাসঙ্গীত বা ভক্তিগীতি হল –
- আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানি নে মা
- আমি সব ছেড়ে মা ধরব তোমার রাঙা চরণ দুটি
- গোলকধাঁধায় মরছি তবু
- যদি তোর ভূ-মন্দিরের দ্বারে/তোমার লাগি কাঁদি অঝোর ধারে
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি থেকে দিলীপকুমার রায়ের সম্পাদনায় "কান্ত-কবির গান" শীর্ষক দুটি স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
জীবনাবসান
সম্পাদনাদীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন অকৃতদার প্রবীণ সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপকুমার। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে তার কলকাতার ডোভার লেনের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৫ বৎসর। [১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "প্রয়াত সঙ্গীতকার দিলীপকুমার রায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৪।
- ↑ "দিলীপকুমার রায় - কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০১।
- ↑ ক খ "যুগাবসান- কলকাতার কড়চা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০১।
- ↑ "স্বরলিপিতে 'বাচিয়েছেন' কান্তগীতিকে, প্রয়াত রজনীকান্ত-দৌহিত্র দিলীপকুমার রায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]