দিওয়ান-ই-আলম
দিওয়ান-ই-আলম একটি উর্দু কাব্য। এটি বাংলাভাষী উর্দু কবি আবুল আযীজ মোহাম্মদ ইসমাইল আলী (ইসমাঈল আলম) লিখিত উর্দু কাব্য। এর প্রকাশকাল:১৩২৮ হিজরী মোতাবেক ১৯১০ ইংরেজী, কাইয়ুমী, ওয়াকিয়ী মহলল্লা, টিকাপুর, কানপুর, ভারত। ১০০ পৃষ্ঠার এ কাব্যে রয়েছে মর্সিয়া, শের, ক্বসিদা ও বিচ্ছেদ সংগীত।[১] কাব্যে মহানবীর (স.) সীরাত ও নাত-ই-রাসুল দ্ধারা সমৃদ্ধ। দিওয়ান-ই-আলম তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশ একটি হামদ ও বাকীগুলো নাত-ই-রাসুল। দ্বিতীয়াংশ আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রসংসা, কছিদা (বিষাদ সংগীত) ও তৃতীয়াংশ গজল।[২] দিওয়ান-ই-আলম কাব্যের স্বীকৃতি স্বরূপ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর তৎকালীন প্রিন্সিপাল উইলিয়াম হেমিল্টন হার্লি ইসমাঈল আলীকে 'বাংলার তুতা' উপাধি প্রদান করেন।[৩]। দিওয়ান-ই-আলম কাব্যে কবির চিন্তাধারা ফুটে উঠে।
ইতিহাস
সম্পাদনারচনা
সম্পাদনাইসমাঈল আলম কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এ পড়াকালীন সময়ে উর্দু কাব্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ সময় বাঙ্গালী মুসলমানের বিপুল অংশ উর্দু কবিতার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।[৪] কলকাতায় অধ্যয়নরত সময়কালে ইসমাঈল আলমকে মির্জা গালিব-এর কাব্যরীতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। ফলে ইসমাঈল আলমের কাব্যে গালিবের কাব্যরীতি লক্ষ্য করা যায়।
দিওয়ান-ই-আলম
সম্পাদনাদিওয়ান-ই-আলম কাব্যে তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথমাংশে একটি হামদ্ ও নাতসমূহ, দ্বিতীয়াংশে মানাকিব, ওলী ও 'আলিমগণের প্রশংসা, কাসীদা ও মর্সিয়া এবং তৃতীয়াংশে গযলসমূহ স্থান লাভ করেছে। দ্বিতীয়াংশে বড় বড় সাহাবা, হযরত আলীর মানকাবাত, হযরত হোসাইন ইবনে আলী (রা)-এর শাহাদাতের উপর লিখিত কাসীদা, হযরত আব্দুল কাদের জিলানী, হযরত মইনুদ্দিন চিশতী, বাবা ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকার, নিজামুদ্দিন আউলিয়া, হযরত শাহ জালাল (র), হযরত ফযলুর রহমান গাঞ্জ-এ-মুরাদাবাদী, শাহ আহমদ মিঞা, সৈয়দ ওয়ারেস 'আলী লখনৌবী এবং 'আবদুল ওহাব সিলেটীর প্রশংসা ছাড়াও ছেলে মৌলবী আযীযুল হক-এর অকাল মৃত্যুতে লিখিত মর্সিয়া রয়েছে। দিওয়ান-ই-আলম-এর অনুদিত কাব্য রূপ:
“ | এই পৃথিবী মহাসাগর বিপুলা ওই আকাশতল ফুলে-ফলে এই যে রূপের অন্তবিহীন কোলাহল |
” |
“ | নিরালা রাতের ঘুমে যদি ওঠে ফুল নিথর বুকের খোপ নাচতে ব্যাকুল |
” |
“ | আহা রে কেমন মোহ বিরহ কাতর চোখের কোটর ফুঁড়ে বয় যে আতর |
” |
পুরস্কার
সম্পাদনাদিওয়ান-ই-আলম কাব্যের স্বীকৃতি স্বরূপ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর তৎকালীন প্রিন্সিপাল উইলিয়াম হেমিল্টন হার্লি ইসমাঈল আলমকে 'বাংলার তুতা' উপাধি প্রদান করেন।[৫][৬] তাঁর কবিতায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। তিনি হাম্দ, না'ত, মানকাবাত, কাসীদা, মর্সিয়া রচনা করেছেন। এসবের ভাষা ছিল সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল।[৪]
প্রকাশনা ইতিহাস
সম্পাদনা১০০ পৃষ্ঠা সংবলিত মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল আলম রচিত এ উর্দু কাব্যটি ১৩২৮ হিঃ/১৯১০ সালে কানপুরের কাইউমী প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।[৪]
সাহিত্য সমালোচনা
সম্পাদনাদিওয়ান-ই-আলম কাব্যের উপর সমালোচনা করেন পাকিস্থানি গবেষক আব্দুল জলিল বিসমিল, উর্দু দৈনিক পাসবান-এ নিবন্ধ লিখেন।[৪] বিসমিল লিখেন, তাঁর কবিতা পাঠে মনে হয়, যেন তিনি উর্দু ভাষাভাষী কবি।[৬] আসাম প্রদেশের গবেষক আব্দুল জলিল রাগবি 'মাশায়েখে আসাম' গ্রন্থে স্বতন্ত্র অধ্যায়ে আলোচনা লিখেন।[৭]
দিওয়ান-ই-আলম বঙ্গানুবাদ
সম্পাদনাদিওয়ান-ই-আলম কাব্যের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন সরওয়ার ফারুকী। ২৯ এপ্রিল ২০১৮ থেকে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় ধারাবাহিক ছাপা হয়। দিওয়ান-ই-আলম-এর অনুদিত রূপ:
“ | তোমার কেশের আশে নির্ঘুম রাত পাড়ি দেই অজস্র বোধের সাগর হে নবী তোমার প্রেমে আলমের বুক |
” |
“ | আহা রে কেমন মোহ বিরহ কাতর চোখের কোটর ফুঁড়ে বয় যে আতর ভারতের বুকে বসে উহ আহ করি |
” |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ দৈনিক সিলেটের ডাক,২৯ এপ্রিল,২০১৮
- ↑ সিলহেট মে উর্দু, আব্দুল জলিল বসমিল, প্রকাশক: আনজুমান-এ-তারাক্কি উর্দু, ১৯৮০-১৯৮১ করাচি, পাকিস্তান
- ↑ মাসিক মদিনা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
- ↑ ক খ গ ঘ বাংলাদেশে আরবী, ফার্সী ও উর্দুতে ইসলামী সাহিত্য চর্চা- ড মুহাম্মদ আবদুল বাকী
- ↑ স্মৃতির পাতায় জালালাবাদ, লেখক: শহিদ চৌধুরী, প্রকাশক: জালালাবাদ ফোরাম, জাপান, ১৯৯৪।
- ↑ ক খ সিলহেট মে উর্দু, আনজুমান-এ-তারাক্কি উর্দু, ১৯৮০-১৯৮১ করাচি
- ↑ মাশায়েখে আসাম, লেখক: আব্দুল জলিল রাগবি, প্রকাশক: নুরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নওয়াগাও, আসাম, ভারত