দণ্ডবিধি, ১৮৬০ আইনটি বাংলাদেশে ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্তীয় দণ্ড দান করার জন্য প্রধান আইন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর, ব্রিটিশ রাজ সমগ্র ভারতবর্ষকে সরাসরি আওতায় নিয়ে আসে এবং বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি তাদের মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ রাজ, এই আইনটিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া; বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়শিয়া, ভারতপাকিস্তানে এর কার্যকারীতা ঘটায়।

দণ্ডবিধি, ১৮৬০
ব্রিটিশ রাজ
জাতীয় সংসদ
সূত্র১৮৬০ সালের আইন নং ৪৫
কার্যকারী এলাকাসারা বাংলাদেশে কার্যকর
প্রণয়নকারীব্রিটিশ রাজ
জাতীয় সংসদ
প্রণয়নকাল৬ই অক্টোবর ১৮৬০
সম্মতির তারিখ৬ই অক্টোবর ১৮৬০
প্রবর্তনের তারিখ৬ই অক্টোবর ১৮৬০
পরিষদের বিবরণীপ্রথম ভারতীয় আইন কমিশন
অবস্থা: যথেষ্ট সংশোধিত

ইতিহাস

সম্পাদনা

এই আইনটির খসড়ার কাজ ১৮৩৪ সালে শুরু হয়, যা ব্রিটিশ ভারতের প্রথম আইন কমিশন আরম্ভ করে, যার নেতৃত্ব দেন থমাস ব্যাবিংটন মেকল; যেটা তৎকালীন সময় বাংলার গভর্নরের আওতায় ছিল। খসড়াকালীন সময়ে বেশ কিছু সেই সময়ের প্রচলিত আইনের প্রভাব যেমন নেপোলিয়নীয় আইন, লুয়িজিয়ানা দেওয়ানী আইনের মত আইনগুলো অন্যতম। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্ত হওয়ার পর, ভারত ও পাকিস্তান, এই আইনটি সরাসরি গ্রহণ করে নেয়। পরবর্তীতে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, স্বাধীন হওয়ার পূর্বে প্রচলিত অধিকাংশ আইনই সরাসরি গ্রহণ করে নেয়, এবং তার মধ্যে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অন্যতম। সর্বশেষ ২০০৪ সালে সংসদে এই আইনটির গৌণ পরিবর্তন (মাশুল বাড়নো ও অন্যান্য) আনা হয়। []

সারাংশ

সম্পাদনা

দণ্ডবিধি, ১৮৬০ আইনটিতে মোট ৫১১ টি ধারা রয়েছে, যা ২৩ টি অধ্যায়ে বিভক্ত হয়েছে।[]

দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (অনুচ্ছেদ ১ থেকে ৫১১)
অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত অনুচ্ছেদসমূহ অপরাধের শ্রেণিবিভাগ
অধ্যায় ১ ধারা ১ থেকে ৫ পরিচিতি
অধ্যায় ২ ধারা ৬ থেকে ৫২ সাধারণ ব্যাখ্যা
অধ্যায় ৩ ধারা ৫৩ থেকে ৭৫ শাস্তি সংক্রান্ত
অধ্যায় ৪ ধারা ৭৬ থেকে ১০৬ সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ

আত্মরক্ষার অধিকার সংক্রান্ত (অনুচ্ছেদ ৯৬ থেকে ১০৬)

অধ্যায় ৫ ধারা ১০৭ থেকে ১২০ অপরাধে উৎসাহ দেওয়া সংক্রান্ত
অধ্যায় ৫ক ধারা ১২০ক থেকে ১২০খ ষড়যন্ত্র
অধ্যায় ৬ ধারা ১২১ থেকে ১৩০ রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ৭ ধারা ১৩১ থেকে ১৪০ সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর করা অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ৮ ধারা ১৪১ থেকে ১৬০ জনগনের শান্তিভঙ্গের অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ৯ ধারা ১৬১ থেকে ১৭১ জন সেবক দ্বারা বা প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ৯ক ধারা ১৭১ক থেকে ১৭১ঝ নির্বাচনের অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ১০ ধারা ১৭২ থেকে ১৯০ জন সেবকের আইনসঙ্গত অধিকারের অবমাননা সংক্রান্ত
অধ্যায় ১১ ধারা ১৯১ থেকে ২২৯ মিথ্যা সাক্ষ্য বা প্রমাণ ও ন্যায় বিচারের প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ১২ ধারা ২৩০ থেকে ২৬৩ মুদ্রা ও সরকারি শিলমোহরের প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ১৩ ধারা ২৬৪ থেকে ২৬৭ ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য
অধ্যায় ১৪ ধারা ২৬৮ থেকে ২৯৪ জনসাধারণের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, সুবিধা, শালীনতা ও নৈতিকতার প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত
অধ্যায় ১৫ ধারা ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধর্মের প্রতি অপরাধ (ব্লাস্ফেমি) সংক্রান্ত
অধ্যায় ১৬ ধারা ২৯৯ থেকে ৩৭৭ মানুষের শরীর সংক্রান্ত অপরাধের জন্য
  • জীবন বিপন্নকারী অপরাধের জন্য; যেমন হত্যা, শাস্তিযোগ্য নরহত্যা (অনুচ্ছেদ ২৯৯ থেকে ৩১১)
  • গর্ভপাতের জন্য, অজাত শিশুর ক্ষতির জন্য, শিশু পরিত্যাগের জন্য, জন্ম গোপন করার জন্য সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত (অনুচ্ছেদ ৩১২ থেকে ৩১৮)
  • আঘাতের জন্য (অনুচ্ছেদ ৩১৯ থেকে ৩৩৮)
  • অন্যায়ভাবে বাধাদান এবং অন্যায়ভাবে বন্দীদশার জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৩৯ থেকে ৩৪৮)
  • অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ ও হামলার জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৪৯ থেকে ৩৫৮)
  • অপহরণ, উৎখাত, দাসত্ব ও বেগার শ্রম সংক্রান্ত অপরাধের জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৫৯ থেকে ৩৭৪)
  • ধর্ষণসহ যৌন অপরাধের জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৭৫ থেকে ৩৭৬)
  • অস্বাভাবিক যৌনক্রীয়ার জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৭৭)
অধ্যায় ১৭ ধারা ৩৭৮ থেকে ৪৬২ সম্পত্তির বিরূদ্ধে অপরাধের জন্য
  • চুরির জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৭৮ থেকে ৩৮২)
  • তোলাবাজির জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৮৩ থেকে ৩৮৯)
  • ভয় দেখিয়ে চুরি বা তোলাবাজি এবং ডাকাতির জন্য (অনুচ্ছেদ ৩৯০ থেকে ৪০০)
  • সম্পত্তি তছরুপের জন্য (অনুচ্ছেদ ৪০৩ থেকে ৪০৪)
  • অপরাধমূলক বিশ্বাসহানির জন্য (অনুচ্ছেদ ৪০৫ থেকে ৪০৯)
  • চুরির সম্পত্তি গ্রহণ করার জন্য (অনুচ্ছেদ ৪১০ থেকে ৪১৪)
  • প্রতারণার জন্য (অনুচ্ছেদ ৪১৫ থেকে ৪২০)
  • প্রতারণা করা ও প্রতারণার সাহায্যে সম্পত্তি হস্তান্তর (অনুচ্ছেদ ৪২১ থেকে ৪২৪)
  • অপকার করার জন্য (অনুচ্ছেদ ৪২৫ থেকে ৪৪০)
  • অনধিকার প্রবেশ|অনধিকার প্রবেশের জন্য (অনুচ্ছেদ ৪৪১ থেকে ৪৬২)
অধ্যায় ১৮ ধারা ৪৬৩ থেকে ৪৮৯ নথিপত্র ও সম্পত্তির চিহ্ন সংক্রাণ্ত অপরাধের জন্য
  • সম্পত্তি ও অন্যান্য চিহ্নের জন্য (অনুচ্ছেদ ৪৭৮ থেকে ৪৮৯)
  • টাকার নোট ও ব্যাঙ্ক নোট সংক্রান্ত (অনুচ্ছেদ ৪৮৯ক থেকে ৪৮৯ঙ)
অধ্যায় ১৯ ধারা ৪৯০ থেকে ৪৯২ কোনো কাজের অপরাধমূলক চুক্তিভঙ্গের জন্য
অধ্যায় ২০ ধারা ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য
অধ্যায় ২০ক ধারা ৪৯৮ক পতি বা পতির আত্মীয়দের নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত
অধ্যায় ২১ ধারা ৪৯৯ থেকে ৫০২ মানহানির জন্য
অধ্যায় ২২ ধারা ৫০৩ থেকে ৫১০ অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন, অপমান এবং উৎপাত
অধ্যায় ২৩ ধারা ৫১১ অপরাধ করার চেষ্টার জন্য

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "ফৌজদারি দন্ডবিধি - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১১ 
  2. "The Penal Code, 1860"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১১