দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জৈনধর্ম
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি রাষ্ট্রে জৈনধর্ম একটি সংখ্যালঘু ধর্মমত। যদিও ভারতীয় সভ্যতা সাধারণভাবে এই সকল দেশ ও জাতির ভাষা, হরফ, পঞ্জিকা ও শিল্পকলা-সংক্রান্ত দিকগুলিকে প্রভাবিত করেছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাজৈন ধর্মগ্রন্থগুলিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়।[১] সম্প্রতির রাজত্বকালে জৈন শিক্ষকদের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করা হয়েছিল।[২]
বিশিষ্ট জৈনধর্মাবলম্বীদের (যেমন জৈন সন্ন্যাসী ক্ষুল্লক প্রযত্ন সাগর[৩]) জৈনধর্মের প্রতিনিধিত্ব, স্থানীয় জৈন গোষ্ঠীগুলিকে দিকনির্দেশ এবং অন্যান্য ধর্মমতগুলির (বিশেষত বৌদ্ধধর্ম) সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছিল।
অঞ্চল
সম্পাদনামায়ানমার
সম্পাদনাজৈন আগমে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকে ‘সুবর্ণভূমি’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কথিত আছে, কলকাচার্য নামে এক জৈন সন্ন্যাসী মায়ানমারে (ব্রহ্মদেশ) গিয়েছিলেন।[১]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে প্রায় ৫,০০০ জৈন পরিবার মায়ানমারে বাস করত। প্রায় সব কটি পরিবারই বর্তমানে মায়ানমার ত্যাগ করেছে।[৪] ইয়াঙ্গনে এখন তিনটি বা চারটি জৈন পরিবার বাস করে। সেখানে একটি জৈন মন্দিরও রয়েছে।[৫][৬] পুরনো রেঙ্গুনের লাথা টাউনশিপের ২৯শ স্ট্রিটে অবস্থিত এই মন্দিরটি রোমানেস্ক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।[৭] ইয়াঙ্গন হেরিটেজ ট্রাস্ট পুরনো রেঙ্গুনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান সহ এই মন্দিরটিও সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী হয়েছে।[৮]
কম্বোডিয়া
সম্পাদনাকম্বোডিয়ায় জৈনধর্মের অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৯]
ইন্দোনেশিয়া
সম্পাদনাইন্দোনেশিয়ায় একটি ছোটো জৈন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে। এই ধর্মীয় গোষ্ঠীটি জাকার্তায় বিভিন্ন জৈন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এই গোষ্ঠীর সংগঠনটির নাম ‘জৈন সোশ্যাল গ্রুপ, ইন্দোনেশিয়া’।[১০]
লাওস
সম্পাদনালাওসে জৈনধর্মের কোনও অস্তিত্ব নেই।
মালয়েশিয়া
সম্পাদনামালয়েশিয়ায় প্রায় ২,৫০০ জৈন বাস করেন। মনে করা হয়, খ্রিস্টীয় ১৫শ বা ১৬শ শতাব্দীতে তাদের কয়েকজনের পূর্বপুরুষেরা মালাক্কা থেকে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন।[১১]
মালয়েশিয়ার প্রথম জৈন মন্দিরটি পেরাকের ইপোহে অবস্থিত। ২০১২ সালে এটি উৎসর্গিত হয়।[১২][১৩] কুয়ালা লামপুরেও একটি জৈন মন্দির রয়েছে।[১৪] কুয়ালা লামপুরের বাংসার অঞ্চলে অবস্থিত এই মন্দিরটি ভারত থেকে আনীত ৪,০০০ কিলোগ্রাম শ্বেতপাথরে নির্মিত।[১৫] ২০১১ সালে এই মন্দিরটি উদ্বোধনের সময় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম সৎশিবম উপস্থিত ছিলেন।[১৬]
ফিলিপাইন
সম্পাদনাফিলিপাইনে জৈনধর্মের কোনও অস্তিত্ব নেই।
সিঙ্গাপুর
সম্পাদনা২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১০-১৯১৪) পর সিঙ্গাপুরে জৈনরা বসতি স্থাপন করেছিল।[১৭] ২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, সিঙ্গাপুরে ১,০০০ জৈন বসবাস করেন।[১৮]
থাইল্যান্ড
সম্পাদনাপ্রাচীনকালে শ্রীলঙ্কা হয়ে জৈন সন্ন্যাসীরা জৈন মূর্তিগুলি থাইল্যান্ডে নিয়ে যান। চিয়াংমাইতে একটি নগ্ন জৈন মূর্তি বুদ্ধমূর্তি হিসেবে পূজিত হত।[১৯] যদিও কঠোর তপস্যার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করার জন্য থাইল্যান্ডে জৈনধর্ম জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়।[১৯]
বর্তমানে প্রায় ৬০০ জৈন পরিবার থাইল্যান্ডে বাস করেন। এঁরা বাস করেন প্রধানত ব্যাংককে।[২০][২১] থাইল্যান্ডের জৈন গোষ্ঠীটি সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি অঞ্চলের জৈন গোষ্ঠীগুলির মতো সংঘবদ্ধ নয়। এদেশে দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায়গুলির জন্য পৃথক পৃথক জৈন মন্দির রয়েছে। ২০০৭ সালে দিগম্বর জৈন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।[২২]
থাইল্যান্ডের জৈন গোষ্ঠীটি স্থানীয় থাই পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের জৈনধর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য অর্থসাহায্য দেয়।[২৩] থাইল্যান্ডের কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় জৈন খাদ্য পরিবেশন করা হয়।[২৪][২৫]
ব্যাংককের হীরে কাটা ও পালিশ করার ব্যবসাটির একটি বড় অংশ জৈন গোষ্ঠীটি পরিচালনা করে।[২৬]
ভিয়েতনাম
সম্পাদনাভিয়েতনামে জৈনধর্মের কোনও অস্তিত্ব নেই।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "on www.jainsamaj.org ( Jainism, Ahimsa News, Religion, Non-Violence, Culture, Vegetarianism, Meditation, India. )"। Jainsamaj.org। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Framing the Jina: Narratives of Icons and Idols in Jain History - John Cort - Google Books। Books.google.com। ১৬ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "No Pain, No Jain | Bangkok Post: multimedia"। Bangkok Post। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Motiba's tattoos: a granddaughter's journey into her Indian family's past - Mira Kamdar - Google Books। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Yangon, Myanmar: A 'City That Captured Time' (PHOTOS)"। Huffingtonpost.com। ২৬ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Jain Diaspora Convention(JDC) 2009 - JAINA-JainLink"। Jaina.org। ২ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "A Stroll through Old Rangoon"। Dream Of A City। ২৪ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ Brady, Brendan (১৩ আগস্ট ২০১২)। "Burma: Progress Puts Rangoon's Architectural Past at Risk | TIME.com"। World.time.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Jainism Ahimsa News Religious Non-Violence Celebrities Literature Philosophy Matrimonial Institutions"। Jainsamaj.org। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Magazine | Locations | Indonesia | Jakarta | Jain Social Group Indonesia Organized The 1st Event Of Kshama Yachana At Sadhu Vasvani Center, Jakarta"। Herenow4u.net। ২৯ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "on www.jainsamaj.org ( Jainism, Ahimsa News, Religion, Non-Violence, Culture, Vegetarianism, Meditation, India. )"। Jainsamaj.org। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Jain Heritage Centre - Jainism Abroad - Malaysia"। Jainheritagecentres.com। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Jain temples in India and around the world - Laxmi Mall Singhvi, Tarun Chopra - Google Books। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ chandaram dewasi pujari says: (১৭ নভেম্বর ২০১১)। "New Jain Temple in Kuala Lampur, Malaysia"। The Chakra News। ২৩ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Archives | The Star Online"। Thestar.com.my। ১৩ নভেম্বর ২০১১। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Malaysian Minister Subramaniam: Agencies Which "Recycle" Maids Will Have Their Licence Revoked Immediately"। Nam News Network। ১২ নভেম্বর ২০১১। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "History of Jainism in Singapore"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১২।
- ↑ "Jainism Joins National Inter-Faith Organization (Singapore)"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ Sri Lanka Past and Present - L. R. Reddy - Google Books। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Magazine | Locations | Thailand | Bangkok | Shri Digamber Jain Samaj ►Bangkok, Thailand"। Herenow4u.net। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Report ISSJS2009 Bangkok | International School for Jain Studies"। Isjs.in। ১ জুন ২০০৮। ৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Indian Associations - Embassy of India,Bangkok - Thailand"। Indianembassy.in.th। ৩১ মে ২০১৩। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Indians in Thailand - Shri Digamber Jain Samaj, Bangkok"। Thaindian.com। ১৬ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Chiang Mai Citylife: This is Thailand"। Chiangmainews.com। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Baluchi Restaurant - Phuket - Patong Beach Restaurants & Dining"। Phuket। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ Inside Knowledge: Streetwise in Asia - Michael Backman - Google Books। Books.google.com। ১৬ জুন ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।