পরিচয়ের অধিবিদ্যায়, শিপ অব থেসেউস বা থেসেউসের জাহাজ (ইংরেজি: Ship of Theseus) হলো একধরনের চিন্তন পরীক্ষা যেখানে একটি জাহাজ যার প্রত্যাকটি উপাদান প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা কি অভিন্ন জাহাজ আছে নাকি নেই এ ধরনের প্রশ্ন তোলা হয়।

চিন্তন পরীক্ষা

সম্পাদনা

প্রথমে ধরা যাক, থেসেউসের বিখ্যাত জাহাজটি জাদুঘর সামগ্রী হিসেবে কোন পোতাশ্রয়ে রাখা হলো। বছরের পর বছর চলে গেলে, কিছু অংশ ক্ষয়ে যাওয়া শুরু করে, যা নতুন অংশ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। এক শতাব্দী পরে, জাহাজের সবগুলো অংশই প্রতিস্থাপন করা হয়ে গেলো। প্রতিস্থাপিত এ জাহাজটি মূল জাহাজের মত এখনও কি একই বস্তু?

দ্বিতীয়ত, অপসারিত প্রত্যাকটি অংশ, ধরা যাক, একটি গুদামঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হলো, এবং এক শতাব্দী পরে, এ নষ্ট হওয়া রোধ করার প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলো এবং তাদের একত্রিত করে একটি জাহাজ বানানো আবার সম্ভবপর হলো। পুননির্মিত এ জাহাজটিই কি তবে থেসেউসের জাহাজ? এবং যদি তাই হয়, তাহলে পোতাশ্রয়ে সংরক্ষিত প্রতিস্থাপিত জাহাজটিও কি থেসেউসের জাহাজটিই? []

প্রস্তাবিত অনুবন্ধ

সম্পাদনা

সময় থেকে সময়ে ভিন্ন পরিচয়

সম্পাদনা

এ তত্ত্ব বলে যে দুটো জাহাজ, যদিও প্রত্যাকভাবে অবিকল, দুটো ভিন্ন সময়ে অবস্থান করলে তারা অভিন্ন না। প্রত্যাক-সময়ে-জাহাজ একেকটি স্বকীয় "ঘটনা"। তাই এমনকি অংশসমূহের প্রস্তিস্থাপন ব্যতীতও, পোতাশ্রয়ে অবস্থিত জাহাজও প্রতিটি সময়ে ভিন্ন।

পরিচয়ের এ ধারণা অন্যকোন অধিবিদ্যক যন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়। এ সমাধান সর্বপ্রথম গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিতোস দেন, তিনি যে নদীর পানি বারবার পরিবর্তিত হয় এমন একটি নদীর কথা বলেন। অ্যারিয়াস ডিডেমাস তার কথা বলেন, "যায়া একই নদীতে পা রাখে, ভিন্ন ভিন্ন জল তার পা ছুয়ে বয়ে যায়।” [] প্লুটার্ক হেরাক্লিতোসের এ মতের বিরুদ্ধচারণ করেন, এ জল ছিটিয়ে পড়ে, আবার একসাথে আসে আবার অপসৃত হয়। []

প্রয়োগ

সম্পাদনা

দর্শনের অনেক প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহে এর দেখা পাওয়া যায়। মন দর্শনে জাহাজটি একজন ব্যক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে যার পরিচয় সময় থেকে সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আইনি দর্শন ও বাস্তবিক দর্শনে যখন কোন বস্তুর মালিকানা অথবা এর উপর অধিকারের বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়, তখন কূটাভাসের দেখা মিলে। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানিসমূহ, খেলার দল এবং সংগীত গোষ্ঠি তাদের অংশ পরিবর্তন করে এবং তাদের পূর্ব সদস্যের সাথে বিরোধ তৈরি হয়, যার ফলে নতুন ও পুরোনোদের মধ্যে আইনি লড়াই উপস্থিত হয়। সাথে সাথে লেখা ও কম্পিউটার প্রোগ্রামসমুহ ক্রমাগত সম্পাদিত হতে হতে এত বেশি পরিবর্তিত হয় যে, মূল বিষয়ের কিছু অবশিষ্ট থাকে না, তখন মূল লেখক বা স্রষ্টার এর উপর কোন অধিকার থাকে কি না তা নিয়ে তর্ক হতে পারে।

গণমাধ্যম

সম্পাদনা
  • ২০১৩ সালের ভারতী নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র শিপ অব থেসেউসে প্যারাডক্সের নাম দ্যা শিপ অব থেসেউস ব্যবহৃত হয়।
  • ডগ ডর্স্টের উপন্যাস এস.-এ শিপ অব থেসেউসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়।
  • ওয়াল-ই চলচ্চিত্রে ওয়াল-ই রোবটটি অন্য ওয়াল-ই রোবটদের দেহাংশ দ্বারা নিজের নষ্ট অংশ ক্রমাগত প্রতিস্থাপন করে ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. কোহেন, এস. মার্ক (২০০৪)। "পরিচয়, অস্তিত্ব ও থেসেউসের জাহাজ"faculty.washington.edu। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৯ 
  2. ডিডেমাস, এফআর ৩৯.২, ডক্স. জিআর. ৪৭১.৭
  3. প্লুটার্ক"অন দ্যা ই অ্যাট ডেলফি"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা