থিয়েনওয়েন-১
থিয়েনওয়েন-১ (সংক্ষেপে TW-1) চীনের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা দ্বারা মঙ্গলগ্রহে প্রেরিত রোবটচালিত মহাকাশযানের একটি আন্তঃগ্রহ অভিযান। এই মহাকাশযানটিতে একটি আবর্তক যান, একটি মোতায়েনযোগ্য ক্যামেরা (আলোকচিত্রগ্রাহক যন্ত্র), একটি অবতরক যান ও "চুরুং" নামক একটি মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান আছে। ২০২০ সালের ২৩শে জুলাই তারিখে মহাকাশযানটিকে সফলভাবে চীনের ওয়েনছাং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষিপ্ত করা হয়।[৭] উৎক্ষেপণের জন্য দীর্ঘ অভিযাত্রা ৫ ভারী-উত্তোলন রকেট ব্যবহার করা হয়।
থিয়েনওয়েন-১ | |
---|---|
নাম | Huoxing-1 (火星-1) (2018–2020)[১][২][৩] |
অভিযানের ধরন | কক্ষপথ আবর্তনকারী, অবতরণ ও বিচরণ যানের সাহায্যে গ্রহবৈজ্ঞানিক অভিযান |
পরিচালক | চীজামপ্র |
সিওএসপিএআর আইডি | ২০২০-০৪৯এ |
এসএটিসিএটি নং | ৪৫৯৩৫ |
অভিযানের সময়কাল | ১৬৪৩ দিন, ১৩ ঘণ্টা, ৪২ মিনিট (উৎক্ষেপণ মুহূর্ত থেকে) আবর্তক: ২ ভূ-বৎসর (পরিকল্পিত) বিচরণ যান: ৯০ সল (পরিকল্পিত)[৪] |
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য | |
মহাকাশযানের ধরন | আবর্তনকারী যান, অবতরণ যান, বিচরণ যান |
প্রস্তুতকারক | চীনের বায়বাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশন (CASC) |
উৎক্ষেপণ ভর | মোট: ৫,০০০ কিলোগ্রাম (১১,০০০ পাউন্ড) আবর্তন যান: ৩,১৭৫ কিলোগ্রাম (৭,০০০ পাউন্ড) বিচরণ যান:২৪০ কিলোগ্রাম (৫৩০ পাউন্ড) |
আয়তন | বিচরণ যান: ২.৬ × ৩ × ১.৮৫ মিটার |
অভিযানের শুরু | |
উৎক্ষেপণ তারিখ | ২৩শে জুলাই, ২০২০, ০৪:৪১:১৫ সাসস [৫] |
উৎক্ষেপণ রকেট | দীর্ঘ অভিযাত্রা ৫ |
উৎক্ষেপণ স্থান | ওয়েনছাং, LC-101 |
ঠিকাদার | চীনের বায়বাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশন |
মঙ্গল গ্রহ আবর্তক | |
মহাকাশযানের উপাদান | আবর্তক |
Invalid parameter | ১১ থেকে ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (পরিকল্পিত)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
মঙ্গল গ্রহ অবতরক | |
মহাকাশযানের উপাদান | অবতরক |
Invalid parameter | ২৩শে এপ্রিল ২০২১ (প্রস্তাবিত)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
"location" should not be set for flyby missions | ইউটোপিয়া প্ল্যানিটিয়া[৬] |
মঙ্গল গ্রহ বিচরণ যান | |
মহাকাশযানের উপাদান | বিচরণ যান |
Invalid parameter | ২০২১ সালের ২৩শে এপ্রিলের পরে (প্রস্তাবিত)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
"location" should not be set for flyby missions | ইউটোপিয়া প্ল্যানিটিয়া[৬] |
চীনা গ্রহ অভিযান (চীনা: 中国行星探测) মঙ্গল লোগো |
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থিয়েনওয়েন-১ মহাকাশযানটি এর TW-1 মোতায়েনযোগ্য ক্যামেরাটিকে (T.D.C.) মোতায়েন বা সক্রিয় করে, যা মূলত একটি ক্ষুদ্র উপগ্রহ যাতে দুইটি আলোকচিত্রগ্রাহক যন্ত্র বা ক্যামেরা আছে, যেগুলি বিভিন্ন আলোকচিত্র গ্রহণ করে এবং থিয়েনওয়েন-১-এর সাথে ওয়াইফাই সংযোগ পরীক্ষা করে দেখে।[৮] ২০২০ সালের ৯ই অক্টোবর তারিখ নাগাদ এটি প্রায় ৩ কোটি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, দুইটি মাঝ-গতিপথ কক্ষপথীয় ত্রুটি সংশোধন করে এবং একাধিক বহনকৃত সরঞ্জামাদির উপরে স্বয়ংক্রিয় ত্রুটিনির্ণয় কাজ সম্পাদন করে।[৯] মহাকাশযানটি এর আবর্তক যানের উপরে স্থাপিত মঙ্গল গ্রহ শক্তি কণা বিশ্লেষকের সাহায্যে বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপ শুরু করে এবং এটি থেকে পৃথিবীতে অবস্থিত নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রে উপাত্ত প্রেরণ করতে শুরু করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই অভিযানটির লক্ষ্য হল মঙ্গলগ্রহে বর্তমান বা অতীতে বিদ্যমান প্রাণের অনুসন্ধান করা এবং গ্রহটির পরিবেশের মূল্যায়ন করা।[৪][১০]
প্রায় ৭ মাস মহাকাশ যাত্রাশেষে ২০২১ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি তারিখে থিয়েনওয়েন-১ মঙ্গলগ্রহকে আবর্তনকারী একটি কক্ষপথে প্রবেশ করে।[১১][১২] এরপর এটি পরবর্তী তিন মাস ধরে সন্ধানীটি একটি রেকিকরণ কক্ষপথে (reconnaissance orbit) অবস্থান করে অবতরণ লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে অধ্যয়ন চালায়। ২০২১ সালের ১৪ই মে তারিখে এর "চুরুং" নামক মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটি (রোভার) মঙ্গলগ্রহপৃষ্ঠে সফলভাবে মসৃণ অবতরণ সম্পন্ন করে।[১৩] এর ফলে চীন মঙ্গলগ্রহপৃষ্ঠে কোমল অবতরণ সম্পন্নকারী তৃতীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয় (সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে)।[১৪] যদি মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটি মোতায়েন করা সফল হয়, তাহলে চীন মাত্র দ্বিতীয় দেশ হিসেবে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) এই কৃতিত্ব অর্জন করবে[৪][১০] এবং প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম অভিযানেই মঙ্গলগ্রহ আবর্তন করা, গ্রহপৃষ্ঠে অবতরণ করা ও মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান মোতায়েন করার তিনটি কাজ একবারে সম্পন্ন করার গৌরব অর্জন করবে।.[১৫]
"থিয়েনওয়েন" (সরলীকৃত চীনা: 天问; প্রথাগত চীনা: 天問; আক্ষরিক: "স্বর্গীয় প্রশ্নাবলি") নামটি প্রাচীন চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিদের একজন ছু ইউয়েন-এর (৩৪০-২৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) লেখা একটি দীর্ঘ কবিতার নামে দেওয়া হয়েছে।[১৬] কবিতাটিতে কবি ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলি প্রশ্ন করেছেন, যার প্রথমটি হল মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, তার উপরে একটি প্রশ্ন।
থিয়েনওয়েন-১ ছিল জুলাই ২০২০ মঙ্গলগ্রহে উৎক্ষেপণের জানালার সময়ে প্রেরিত তিনটি মহাকাশ অভিযানের দ্বিতীয়টি। বাকী দুইটি অভিযান হল সংযুক্ত আরব আমিরাত মহাকাশ সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত হোপ আবর্তক যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেরিত মার্স ২০২০ অভিযান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "中国火星探测器露真容 明年发射"। ২০১৯-১০-১২।
- ↑ The Global Exploration Roadmap. NASA International Space Exploration Coordination Group. January 2018 এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
- ↑ China's Deep Space Exploration Roadmap. 2018.
- ↑ ক খ গ "China Exclusive: China's aim to explore Mars"। Xinhua News। ২১ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২৪।
- ↑ Wall, Mike। "China launches ambitious Tianwen-1 Mars rover mission"। Space.com (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ Andrew Jones 28 October 2020। "China chooses landing site for its Tianwen-1 Mars rover"। Space.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৬।
- ↑ Jones, Andrew (২৩ জুলাই ২০২০)। "Tianwen-1 launches for Mars, marking dawn of Chinese interplanetary exploration"। spacenews.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Clark, Stephen। "China's Mars-bound probe returns self-portrait from deep space – Spaceflight Now" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪।
- ↑ "China's Mars probe completes deep-space maneuver - Xinhua | English.news.cn"। www.xinhuanet.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১০।
- ↑ ক খ The subsurface penetrating radar on the rover of China's Mars 2020 mission. B. Zhou, S. X. Shen, Y. C. Ji, etal. 2016 16th International Conference on Ground Penetrating Radar (GPR). 13–16 June 2016.
- ↑ Roulette, Joey (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "Three countries are due to reach Mars in the next two weeks"। The Verge। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ Gebhardt, Chris (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "China, with Tianwen[[বিষয়শ্রেণী:চীনা ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ]]-1, begins tenure at Mars with successful orbital arrival"। NASASpaceFlight.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
- ↑ Myers, Steven Lee; Chang, Kenneth (১৪ মে ২০২১)। "China's Mars Rover Mission Lands on the Red Planet - The success establishes China as a principal contender in what some see as a new era of space competition."। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২১।
- ↑ "China succeeds on country's first Mars landing attempt with Tianwen[[বিষয়শ্রেণী:চীনা ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ]]-1"। nasaspaceglight.com। ১৫ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০২১। ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
- ↑ "China's Tianwen[[বিষয়শ্রেণী:চীনা ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ]]-1 spacecraft completes historic Mars landing"। aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০২১। ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
- ↑ "China's First Mars Exploration Mission Named Tianwen-1"। XinhuaNet। ২৪ এপ্রিল ২০২০। ৭ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২০।