ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ
ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কালজয়ী ইসলামিক সংগীত বা গজল, যেটা ইসলামের নবী মুহাম্মদের আগমনের আনন্দবার্তা বহন করে। ১৯৩৫ সালে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত 'কাটিবিম' এর সুর অনুসারে 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ' গজলটি তিনি রচনা করেন।[১][২] 'কাটিবিম' এর সুর অনুসারে নজরুলের রচিত প্রথম গানটি হলো 'শুকনো পাতার নুপূর’, ১৯৩৩ সালে যার প্রথম রেকর্ড করেন সে যুগের বিখ্যাত গায়িকা এবং বাইজি হরিমতী দেবী। তার দু’বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯৩৫ সালে, সেই একই সুরে 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ' শিরোনামে নজরুলের আরও একটি গানের রেকর্ড বেরোয়, যেটি তার প্রায় গানের মতোই শোভা পায় তার শিষ্য এবং অন্তরতর শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের কন্ঠে।[২]
"ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ" | ||
---|---|---|
আব্বাসউদ্দীন আহমদ কর্তৃক নাতে রাসূল | ||
রচিত | কাজী নজরুল ইসলাম | |
প্রকাশিত | ১৯৩৫ | |
মুক্তিপ্রাপ্ত | ১৯৩৫ | |
রেকর্ডকৃত | ১৯৩৫ | |
ধারা | নজরুল সঙ্গীত,গজল | |
লেখক | কাজী নজরুল ইসলাম | |
সুরকার | কাজী নজরুল ইসলাম | |
গীতিকার | কাজী নজরুল ইসলাম | |
সঙ্গীত ভিডিও | ||
ইউটিউবে "ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ", মাহি |
পটভূমি
সম্পাদনা'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ' গজলটিকে এক সময় আরব্য ধারার সংগীত মনে করা হতো। আর তারই সত্যতা যাচাইয়ে ষাটের দশকেই গানটির উৎস নিয়ে অন্বেষণ শুরু করেন নজরুল-গবেষক আসাদুল হক। বাংলাদেশের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর পাতায় ‘সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলের বাংলা গানে আরবি সুরের সুষ্ঠু প্রয়োগ’ শিরোনামে সে কাহিনি লিখেছেন তিনি। ১৯৬৫ সালে তুরস্কের আঙ্কারায় গবেষক আসাদুল হক একটি তুর্কি গান শোনেন, যার সুরের সঙ্গে ‘শুকনো পাতা নুপূর’ গানটির অদ্ভুত মিল দেখতে পান তিনি। নজরুল-কথিত আরবি সুর তবে কোথায়? আসাদুল লেগে রইলেন। সরকারি কাজে যখনই লেবানন বা সিরিয়া যান, সুর খুঁজে বেড়ান। এক দিন এক বৃদ্ধ বললেন, এ তো সিরিয়ার হাজার বছরের পুরনো সুর! গানটা হল, ‘বানাত ইস্কান্দারিয়া’ বা আলেকজ়ান্দ্রিয়ার মেয়ে’! যার তুর্কিজ সংস্করণকে 'কাটিবিম' বলে ডাকা হয়। উস্কুদারে যাওয়ার সময় এক মেয়ের তার কেরানিকে নিয়ে লেখা এই 'কাটিবিম' গানটি।[২]
'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ' গজলটির সুর নজরুল কোথায় পেয়েছিলেন বা কার কাছ থেকে শিখেছিলেন তা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে জার্মানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরাকে প্রশিক্ষণে পাঠানো বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সৈনিকদের কাছ থেকেই 'কাটিবিম' এর সুরটি পেয়েছিলেন নজরুল। আর সেই সুরেই রচনা করেছিলেন উক্ত সংগীতযুগল।[৩]
১৯২৬ সালে কলকাতার অ্যালফ্রেড থিয়েটারে অনুষ্ঠান করে গিয়েছিলেন মিশরের নৃত্যশিল্পী ফরিদা। নজরুল বেশ আপ্লুত ছিলেন তাই নিয়ে। মিশরীয় সুরে ‘মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে’ গানটির পিছনে ফরিদার আদল থাকা যেমন অস্বাভাবিক নয়, তেমনই কে বলতে পারে, ফরিদার গলাতেই হয়তো ‘আলেকজ়ান্দ্রিয়ার মেয়ে’ বা 'কাটিবিম'এর সঙ্গে প্রথম আলাপ কলকাতার নজরুলের![২]
গানের কথা
সম্পাদনাত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।।
ধূলির ধরা বেহেশতে আজ, জয় করিল দিল রে লাজ।
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।
দেখ আমিনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে।
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়।।
আজকে যত পাপী ও তাপী, সব গুনাহের পেল মাফী।
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী জুলুম নিল বিদায়।।
নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে নাম, সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম।
জীন পরী ফেরেশতা সালাম জানায় নবীর পায়।।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Deshkal, Shampratik। "নজরুলের ইসলামী সংগীত সৃষ্টির নেপথ্য ইতিহাস"। Shampratik Deshkal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১২।
- ↑ ক খ গ ঘ "Kaji Nazrul Islam's song is the melody of the universe"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৭।
- ↑ "কবি নজরুলের সৈনিক জীবন"। চাঁদপুর টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১২।