তোফায়েল আহমেদ
তোফায়েল আহমেদ (জন্ম ২২ অক্টোবর ১৯৪৩) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি নয় দফা জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদের একজন সদস্য এবং তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১][২][৩] ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।[৪]
তোফায়েল আহমেদ | |
---|---|
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১২ জানুয়ারি ২০১৪ – ৬ জানুয়ারি ২০১৯ | |
পূর্বসূরী | জি এম কাদের |
উত্তরসূরী | টিপু মুনশি |
সংসদ সদস্য | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১২ জানুয়ারি ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | আন্দালিব রহমান |
কাজের মেয়াদ ৫ মার্চ ১৯৯১ – ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | নাজিউর রহমান মঞ্জুর |
উত্তরসূরী | মোশারেফ হোসেন শাহজাহান |
সংসদীয় এলাকা | ভোলা-১ |
কাজের মেয়াদ ২০০৮ – ২০১৩ | |
উত্তরসূরী | আলী আজম |
কাজের মেয়াদ ১৯৯৬ – ২০০১ | |
পূর্বসূরী | মোশারেফ হোসেন শাহজাহান |
উত্তরসূরী | হাফিজ ইব্রাহিম |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৬ – ১৯৮৮ | |
উত্তরসূরী | মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান |
সংসদীয় এলাকা | ভোলা-২ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২২ অক্টোবর, ১৯৪৩ কোড়ালিয়া গ্রাম, ভোলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | আনোয়ারা বেগম |
সন্তান | তাসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী (একমাত্র সন্তান) |
পিতামাতা | আজহার আলী (পিতা) ফাতেমা খানম (মাতা) |
জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাতোফায়েল আহমেদের জন্ম ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি বর্তমান বাংলাদেশের ভোলা জেলার কোড়ালিয়া গ্রামে। পিতা মৌলভী আজহার আলী, মা ফাতেমা বেগম। ১৯৬০ সালে ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে এমএসসি।[১][৫]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামীকে মুক্তি প্রদান করে পাকিস্তান সরকার। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐ বছরেরই ২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো জনতার অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। উপাধি প্রদানের ঘোষণা দেন তোফায়েল আহমেদ।[৬][৭][৮] ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় লাভ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন।[২][৯][১০][১১]
২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।[৪]
রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা
সম্পাদনা১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬,২০০৮ ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৮ পর্যন্ত।[৯][১২]
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাতোফায়েল আহমেদ ১৯৬৪ সালে দনিয়াস্থ আলহাজ্ব মফিজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। সংসারজীবনে এক কন্যাসন্তানের জনক। কন্যা তাসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী বতর্মানে একজন চিকিৎসক। জামাতা তৌহিদুজ্জামান তুহিন বর্তমানে স্কয়ার হসপিটালে কর্মরত কার্ডিওলজিস্ট।[১]
তা ছাড়া তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মাইনুল হোসেন বিপ্লবকে দত্তক নেন এবং কথিত আছে যে, নিজ কন্যা মুন্নী'র চেয়েও বিপ্লব তার নিকট বেশি স্নেহ বৎসল এবং তাকে তার পুত্র বলেই সব স্থানে পরিচয় করিয়ে দেন। এর কারণ রূপে তার অরাজনৈতিক বড় ভাইয়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি নিজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে দোষ দিয়ে থাকেন।
মাইনুল হোসেন বিপ্লবের বড় ভাই ভোলা-২ আসনের ৩ বারের সাবেক সাংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "আজ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন"। Jugantor। ২০১৯-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।
- ↑ ক খ "তোফায়েল আহমেদ"। প্রিয়.কম। ২৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "শুভ জন্মদিন জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ"। www.dainikamadershomoy.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।
- ↑ ক খ "জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা"। দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬।
- ↑ "ভোলা জেলা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২০১৯-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।
- ↑ রহিম, এনায়েতুর; রহিম, জয়েস এল, সম্পাদকগণ (২০১৩)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যান্ড স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স: ইউকে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস, ডি-ক্ল্যাসিফায়েড ডকুমেন্টস, ১৯৬২-১৯৭১। হাক্কানী পাবলিশার্স।
- ↑ আহসান, সৈয়দ বদরুল (১৮ জুন ২০০৮)। "Agartala Conspiracy Case forty years on" [আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার চল্লিশ বছর]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;b
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ তোফায়েল আহমেদ (২০১৭)। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু। ঢাকা, বাংলাদেশ: আগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৭৮।
- ↑ "'৬৯ না এলে আমি তোফায়েল আহমেদ হতে পারতাম না' | banglatribune.com"। Bangla Tribune। ২০১৯-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।
- ↑ "'বঙ্গবন্ধু' উপাধির ৫০ বছর পূর্তিতে যা বললেন তোফায়েল আহমেদ"। Sarabangla.net | Bangladesh newspaper | Bangla | Breaking News | Sports | Entertainment (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।
- ↑ BanglaNews24.com। "বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস | তোফায়েল আহমেদ"। banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২২।