তুরকান শাহ
তুরকান শাহ ছিলেন রাজশাহী অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম প্রচারকারী ব্যক্তিত্ব এবং প্রথম ব্যক্তি যিনি রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে শহীদ হন। তিনি ইরাকের বাগদাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী তুরকান শাহ আব্দুল কাদির জিলানীর বংশধর ছিলেন। মূলত তুরকান শাহের মাধ্যমেই রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, যা পূর্ণতা পায় শাহ মখদুম রূপোশের মাধ্যমে। তুরকান শাহ ছিলেন শাহ মখদুম রূপোশের অন্যতম শিষ্য। ১২৮৮ সালে তুরকান শাহ স্থানীয় শাসকদের সাথে যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।[১]
তুরকান শাহ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১২৮৮ রাজশাহী |
পরিচিতির কারণ | রাজশাহীতে ইসলাম প্রচার |
বাংলাদেশে আগমন
সম্পাদনাসে সময় বাংলার শাসক ছিলেন তুঘরিল খান। তুঘরিল খান দিল্লীর সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে ১২৭৮ সালে সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন তার পুত্র বোখরা খানকে সাথে নিয়ে বিদ্রোহ দমন করতে বাংলাদেশে আসেন।[২] তখন দিল্লী থেকে তুরকান শাহসহ প্রায় তিন শতাধিক ইসলাম প্রচারক গিয়াসউদ্দীন বলবনের যুদ্ধযাত্রায় সঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাদের মধ্যে শাহ মখদুম রূপোশের পরিবারও ছিলেন। তুঘরিল খান যুদ্ধে পরাজিত হন এবং তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। বোখরা খানকে বাংলার শাসক বানিয়ে গিয়াসউদ্দীন বলবন দিল্লী ফিরে যান। কিন্তু ইসলাম প্রচারকারীদল বাংলায় বসবাস করতে থাকেন।
রাজশাহীতে তুরকান শাহ
সম্পাদনাইসলাম প্রচারকারীদলের অন্যতম ছিলেন শাহ মখদুম রূপোশ। তিনি নোয়াখালী অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে যাওয়ার আগে তার বিশ্বস্ত তুরকান শাহ এবং কতিপয় শিষ্যকে মহাকালহড় তথা বর্তমান রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব প্রদান করেন।[১] অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে তুরকান শাহ ও তার শিষ্যরা রাজশাহীতে আসেন। বর্তমান রাজশাহী শহরের দরগাহপাড়ায় এক গহীন জঙ্গলে আস্তানা স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
ইসলাম প্রচার ও যুদ্ধ
সম্পাদনাসেই সময় রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর দেও মূর্তি এবং যত্রতত্র মঠ মন্দির ছিলো। এসব জায়গায় নরবলী দেওয়ার মতো প্রথা প্রচলিত ছিলো। তখন অত্র অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন সামন্তরাজ কাপলিক তন্ত্রে বিশ্বাসী দুই ভাই। তাদের একজনের নাম হলো আংশুদেও চান্দভন্ডীও বর্মভোজ এবং অপর ভাই হলেন আংশুদেও খেজুর চান্দখড়্গ গুজ্জভোজ।[১] তারা দুইজনেই প্রচন্ড অত্যাচারী এবং অহংকারী শাসক ছিলেন। প্রশাসন ব্যাবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ, অবিচার আর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিলো। এমতাবস্থায় তুরকান শাহ এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণী প্রচার শুরু করেন। উন্নত চরিত্র আর মহানুভবতার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আসা শুরু করে। ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা এতই বাড়তে থাকে যে বিষয়টি শাসকচক্রের নজরে চলে আসে। সামন্তরাজ তুরকান শাহকে নানা ভাবে বাধা দিতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই তার ধর্ম প্রচার থামাতে না পেরে তার বিরুদ্ধে একদল সেনা প্রেরণ করে। তুরকান শাহ এবং তার শিষ্যরা প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় যুদ্ধে জড়িয়ে যান। সেই অসম যুদ্ধে তুরকান শাহ পরাজিত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। তাকে রাজশাহী শহরে দরগাপাড়া এলাকায় সমাহিত করা হয়। তার মাজার অত্র এলাকায় এখনো সংরক্ষিত অবস্থায় আছে।
মাজার ও ওরস
সম্পাদনাতুরকান শাহের মৃত্যুর বহু শতাব্দী পর তার কবর মাজারে পরিণত হয় এবং প্রতিবছর হিজরী সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখে তার মাজারে ওরস পালন করা হয়। [৩]
চিত্রশালা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ মোঃ আবুল, কাসেম। শাহ মখদুম রূপোশ -যুগ মানস (২য় সংস্করণ)। শাহ মখদুম রূপোশ দরগা এস্টেট,রাজশাহী। পৃষ্ঠা ১৫২।
- ↑ মোঃ আবুল, কাসেম। শাহ মখদুম রূপোশ -যুগ মানস (২য় সংস্করণ)। শাহ মখদুম রূপোশ দরগা এস্টেট,রাজশাহী। পৃষ্ঠা ১৫১।
- ↑ মোঃ আবুল, কাসেম। শাহ মখদুম রূপোশ -যুগ মানস (২য় সংস্করণ)। শাহ মখদুম রূপোশ দরগা এস্টেট,রাজশাহী। পৃষ্ঠা ১৫৫।