তুঙ্কু সৈয়দ পুত্রা
তুঙ্কু সৈয়দ হারুন পুত্রা ইবনে আলমরহুম সৈয়দ জামালুল্লাইল (২৫ নভেম্বর ১৯২০ – ১৬ এপ্রিল ২০০০) ছিলেন মালয়েশিয়ার তৃতীয় সম্রাট এবং পেরলিসের ষষ্ঠ রাজা।
সৈয়দ হারুন পুত্রা | |||||
---|---|---|---|---|---|
৩য় ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং পেরলিসের রাজা | |||||
ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং | |||||
রাজত্ব | ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬০ – ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ | ||||
মালয়েশিয়া | ৪ জানুয়ারি ১৯৬১ | ||||
পূর্বসূরি | হিশামউদ্দিন আলম শাহ | ||||
উত্তরসূরি | ইসমাইল নাসিরউদ্দিন শাহ | ||||
পেরলিসের রাজা | |||||
রাজত্ব | ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৫ – ১৬ এপ্রিল ২০০০ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ১২ মার্চ ১৯৪৯ | ||||
পূর্বসূরি | সৈয়দ হামজা জামালুল্লাইল | ||||
উত্তরসূরি | সৈয়দ সিরাজউদ্দিন সৈয়দ পুত্রা জামালুল্লাইল | ||||
জন্ম | আরাও, পেরলিস, ব্রিটিশ মালয় | ২৫ নভেম্বর ১৯২০||||
মৃত্যু | ১৬ এপ্রিল ২০০০ ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট অব মালয়েশিয়া, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া | (বয়স ৭৯)||||
সমাধি | ১৭ এপ্রিল ২০০০ | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | তুঙ্কু বুদরিয়াহ | ||||
বংশধর | সৈয়দ সিরাজউদ্দিন সৈয়দ পুত্রা জামালুল্লাইল | ||||
| |||||
পিতা | সৈয়দ হাসান জামালুল্লাইল | ||||
মাতা | চে পুয়ান ওয়ান তেহ বিনতে এন্দুত | ||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতিনি সৈয়দ হাসান বিন সৈয়দ মাহমুদ জামালুল্লাইনের ছেলে।[১] তিনি আরাওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আরাও মালয় স্কুল ও পেনাং ফ্রি স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেছেন।[২] ১৮ বছর বয়সে তিনি পেরলিসের প্রশাসনিক পদে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেন। ১৯৪০ সালে ফৌজদারি আদালতে সেকেন্ড ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য তাকে কুয়ালালামপুরে বদলি করা হয়।[৩]
পেরলিসের উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব
সম্পাদনাপেরলিসের চতুর্থ রাজা সৈয়দ আলওয়ি ইবনে আলমরহুম সৈয়দ সাফি জামালুল্লাইল নিঃসন্তান ছিলেন। তার সৎভাইয়েরা তার উত্তরসূরি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল।[৪] পেরলিসের উত্তরাধিকার সহজে সম্পন্ন হয়নি এবং রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[৫]
সৈয়দ পুরতার দাদা সৈয়দ মাহমুদ ছিলেন তৃতীয় রাজা সৈয়দ সাফি ইবনে আলমরহুম সৈয়দ আলওয়ি জামালুল্লাইলের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং রাজা সৈয়দ আলওয়ির সৎভাই[৬] তিনি ১৯১২ সাল পর্যন্ত রাজা মুদা ছিলেন।[৭] এরপর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে কেদাহর আলোর স্টারের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে ছিলেন। দুই বছর আলোর স্টারে তার মৃত্যু হয়।[৮] ৬ ডিসেম্বর ১৯৩৪ সৈয়দ মাহমুদের ছেলে সৈয়দ হাসান রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল কর্তৃক তিন-এক ভোটে উত্তরাধিকারই নির্বাচিত হন। তবে সৈয়দ হাসান ১৯৩৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর মারা গিয়েছিলেন।[৬]
১৯৩৮ সালের ৩০ এপ্রিল পুনরায় তিন-এক ভোটে সৈয়দ পুত্রা উত্তরধিকারী নিরবাচিত হন। সৈয়দ আলওয়ির সৎভাই সৈয়দ হামজা এবং কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা সৈয়দ পুত্রাকে সমর্থন দেন।[৯]
জাপানি আধিপত্য
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাজা সৈয়দ আলওয়ি পেরাকের কুয়ালা কাংসারে চলে আসেন। ১৯৪১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি পেরলিস ফিরে আসেন। তবে অসুস্থতার কারণে সৈয়দ হামজা রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি তদারক করতেন।[১০] এসময় সৈয়দ পুত্রা কুয়ালালামপুরে বিচারবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। সেলাঙ্গোরের সুলতান মুসা গিয়াসউদ্দিন রিয়ায়াত শাহ তাকে সেখানে থাকার পরামর্শ দেন। ১৯৪২ সালের মে মাসে সৈয়দ পুত্রার উত্তরাধিকার প্রত্যাহার করে তাকে দেয়ার জন্য সৈয়দ হামজা রাজা সৈয়দ আলওয়িকে আহ্বান করেন। ১৯৪৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজা সৈয়দ আলওয়ি মারা যান এবং এরপর সৈয়দ হামজা জাপানি সামরিক গভর্নরের সমর্থন নিয়ে নিজেকে পেরলিসের রাজা ঘোষণা করেন।[১১]
সৈয়দ পুত্রা ১৯৪২ সালের ১৫ মে সপরিবারে ক্লাং অবস্থান করেছিলেন। এরপর তিনি পেরলিসে ফিরে আসেন। আরাও রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে একটি ঘরে তিনি থাকতেন। রাজা সৈয়দ আলওয়ি তাকে মাসিক ৯০ ডলার ভাতা দিতেন। কিন্তু সৈয়দ আলওয়ির মৃত্যুর পর তা বন্ধ হয়ে যায়।[১২] ১৯৪৫ সালের ২৯ মার্চ তিনি কেলানতান চলে যান।[১৩]
ব্রিটিশদের আগমন
সম্পাদনালর্ড মাউন্টব্যাটেনের ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসন সৈয়দ হামজাকে রাজা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। ১৯৪৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সৈয়দ হামজা সিংহাসন ত্যাগ করেন।[১২][১৪] তিনি থাইল্যান্ডে নির্বাসিত হন এবং ১৯৫৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আরাওয়ে মারা যান।[১৫]
১৯৪৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশরা সৈয়দ পুত্রাকে পেরলিসের রাজা ঘোষণা করে।[১৪] তিনি কেলানতান থেকে পেরলিসে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ তার অভিষেক হয়।[১৬]
মালয় ইউনিয়ন
সম্পাদনারাজা মালয় ইউনিয়ন চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। স্বাক্ষর করলেও অন্যান্য মালয়ী শাসকদের মত তিনি পরে চুক্তি থেকে সরে আসেন।[১৭]
উপসম্রাট
সম্পাদনাসৈয়দ পুত্রা মালয়ী শাসকদের মাধ্যমে ডেপুটি ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে সুলতান হিশামউদ্দিন আলম শাহর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
সম্রাট
সম্পাদনাসৈয়দ পুত্রা মালয়ের তৃতীয় ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি দায়িত্বগ্রহণ করেন এবং ১৯৬১ সালের ৪ জানুয়ারি তার অভিষেক হয়। ১৯৬৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া ফেডারেশন ঘোষণার পর তিনি মালয়েশিয়ার ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং হন। ১৯৬৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি তার মেয়াদ শেষ করেন। তার ছেলে তুঙ্কু সৈয়দ সিরাজউদ্দিন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সম্রাট ছিলেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাসৈয়দ পুত্রা ২০০০ সালের ১৬ এপ্রিল কুয়ালালামপুরে ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউশনে মৃত্যুবরণ করেন। পেরলিসের আরাওয়ের রাজকীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[১৮]
পরিবার
সম্পাদনাসৈয়দ পুত্রা দুইবার বিয়ে করেছেন:
- তুনকু বুদরিয়াহ বিনতে তুঙ্কু ইসমাইল। ১৯৪১ সালে তাদের বিয়ে হয়। তিনি পেরলিসের রাজা পেরেমপুয়ান এবং রাজা পেরমাইসুরি আগং হন। তিনি পেরলিসের বর্তমান রাজা তুঙ্কু সৈয়দ সিরাজউদ্দিনের মা। তাদের আরো চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে।
- চে পুয়ান মারিয়াম। ১৯৫২ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।[১৯]
সম্মাননা
সম্পাদনাসৈয়দ পুত্রা বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে:[২০]
পেরলিস
সম্পাদনা- পেরলিস :
মালয়েশিয়া
সম্পাদনা- মালয়েশিয়া (ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং হিসেবে ১৯৬০-১৯৬৫) :
- মালয় :
- অর্ডার অব দ্য ক্রাউন অব দ্য রিয়েল্ম[২১]
- কেদাহ :
- কেলানতান :
- পাহাং :
- পেরাক :
- সাবাহ :
- অর্ডার অব কিনাবালু
- সারাওয়াক :
- টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত সেলঙ্গোর :
বৈদেশিক সম্মাননা
সম্পাদনা- ব্রুনাই : রয়েল ফ্যামিলি অর্ডার অব ব্রুনাই (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮)
- কম্বোডিয়া : রয়েল অর্ডার অব কম্বোডিয়া (২১ ডিসেম্বর ১৯৬২)
- মিশর : অর্ডার অব দ্য নাইল (১৭ এপ্রিল ১৯৬৫)
- জাপান : অর্ডার অব দ্য ক্রিসান্থেমাম (১৫ জুন ১৯৬৪)
- জর্ডান : অর্ডার অব আল-হুসাইন বিন আলি (২৪ এপ্রিল ১৯৬৫)
- পাকিস্তান : নিশানে পাকিস্তান (২৮ ডিসেম্বর ১৯৬১)
- ফিলিপাইন : অর্ডার অব সিকাতুনা (১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১)
- সৌদি আরব : অর্ডার অব দ্য বদর চেইন (৩ এপ্রিল ১৯৬৫)
- থাইল্যান্ড : অর্ডার অব দ্য রাজামিত্রাভুর্ন]] (২০ জুন ১৯৬২)
- যুক্তরাজ্য :
- কুইন এলিজাবেথ সেকেন্ড করোনেশন মেডেল (২ জুন ১৯৫৩)
- অর্ডার অব সেইন্ট মাইকেল এন্ড সেইন্ট জর্জ (৩১ মে ১৯৫৬)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Finestone, Jeffrey and Shaharil Talib (1994) The Royal Families of South-East Asia Shahindera Sdn Bhd
- ↑ (27 December 2002) Penang Free School newsletter
- ↑ Willan, HC (1945) Interviews with the Malay rulers CAB101/69, CAB/HIST/B/4/7
- ↑ Buyong Adil (1981) Sejarah Perlis pp 34–35 DBP
- ↑ Tang Su Chin, Julie (2002) Sejarah Kerajaan Perlis 1841–1957 p 231 MBRAS
- ↑ ক খ Tang Su Chin, Julie (2002) Op Cit p 232
- ↑ Perlis State Council minutes (15 April 1912) CO273 1098a.386/22831
- ↑ Secret Memorandum Howitt to Shenton Thomas (25 March 1937) Papers of John Hamer MSS ind. Ocn. s 316 Box 1 File 1
- ↑ Tang Su Chin, Julie (2002) Op Cit p 262
- ↑ Tang Su Chin, Julie (2002) Op Cit p 266
- ↑ Tang Su Chin, Julie (2002) Op Cit pp 267–268
- ↑ ক খ Willan, HC (1945) Op Cit
- ↑ Tuanku Syed Putra Jamalullail My Personal Experience Just Before and After the Japanese Occupation of Malaya in Papers of John Hamer MSS ind. Ocn. s 316 Box 1 File 1
- ↑ ক খ Mahani Musa, Kongsi Gelap Melayu di Negeri-Negeri Utara Pantai Barat Semenanjung Tanah Melayu, 1821 hingga 1940-an, pg 150-160
- ↑ Finestone, Jeffrey and Shaharil Talib (1994) Op Cit
- ↑ Che Puan Temenggung Perlis (1995) Putra: Biografi yang diperkenankan tentang riwayat hidup DYMM Raja Perlis, Tuanku Syed Putra Jamalullail pp 53 and 56
- ↑ Tang Su Chin, Julie (2002) Op Cit pp 279–297
- ↑ (18 April 2000) Utusan Malaysia
- ↑ "เรียม เพศยนาวิน"। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ The Royal Ark, Perlis genealogy details - p4
- ↑ "Senarai Penuh Penerima Darjah Kebesaran, Bintang dan Pingat Persekutuan Tahun 1958." (পিডিএফ)। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৬।
- A nostalgic tale of two Putras, The Star, 14 August 2007.
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী হিশামউদ্দিন আলম শাহ |
ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগং (মালয়েশিয়ার সম্রাট) |
উত্তরসূরী ইসমাইল নাসিরউদ্দিন শাহ |
পূর্বসূরী সৈয়দ হামজা |
পেরলিসের রাজা | উত্তরসূরী তুঙ্কু সৈয়দ সিরাজউদ্দিন |