তুগতেকিন ইবনে আইয়ুব

তুগতেকিন ইবনে আইয়ুব বা পুরোনাম মালিকুল আযিয সাইফুল ইসলাম তুগতেকিন আহমদ ইবনে আইয়ুব (এছাড়াও সহজভাবে সাইফুল ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন, আরবি: طغتكين بن أيوب بن شاذي بن مروان ) ছিলেন ১১৮২ থেকে ১১৯৭ সাল পর্যন্ত ইয়েমেনআরবের দ্বিতীয় আইয়ুবীয় আমির (রাজপুত্র)।

সাইফুল ইসলাম তুগতেকিন আহমদ
মালিকুল আযিয
আরব উপদ্বীপইয়েমেনের আমির
রাজত্ব১১৮২–১১৯৭
পূর্বসূরিতুরানশাহ
উত্তরসূরিমুইয ইসমাইল
মৃত্যুআগস্ট/সেপ্টেমর ১১৯৭
যাবিদ, ইয়েমেন
পূর্ণ নাম
মালিকুল আযিয সাইফুল ইসলাম তুগতেকিন আহমদ ইবনে আইয়ুব
পিতানাজমুদ্দিন আইয়ুব
ধর্মসুন্নি ইসলাম

জীবনের প্রথমার্ধ

সম্পাদনা

তুগতেকিন ছিলেন নাজমুদ্দিন আইয়ুবের কনিষ্ঠ পুত্র। আইয়ুবী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সালাহউদ্দিন এবং মিশরের পরবর্তী সুলতান প্রথম আদিল তার ভ্রাতা ছিলেন। সালাহউদ্দিন মিশরের ফাতেমীয় খিলাফতকে উৎখাত করার পর তুগতেকিন কায়রোর কাছে আদাবিয়া জেলায় খ্রিস্টান গির্জার অন্তর্গত জমিগুলো অধিগ্রহণ করেন, সম্ভবত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। এই অঞ্চলে হলুদ মাটির খনি রয়েছে যা এই অঞ্চলে বিখ্যাত ছিল। তুগতেকিনের আদাবিয়ায় বাড়িঘরের পাশাপাশি বাগানও ছিল।[] দিওয়ানুন নাজারের ("পরিদর্শন কার্যালয়") প্রাক্তন ফাতিমীয় প্রধান মিশরে থাকাকালীন তুগতেকিনের চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন।[]

ইয়েমেনের আমির

সম্পাদনা

১১৮২ সালে দেশব্যাপী বিদ্রোহের ফলে তুগতেকিনের ভাই তুরান শাহ ইয়েমেন থেকে চলে যাওয়ার পর, তুগতেকিনকে সেই বছরই ইয়েমেনের গভর্নর বা আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।[] নিয়োগের আগে তিনি সালাহউদ্দিনের কাছে পদ চেয়ে চিঠি পাঠান।[] যাবিদকে কেন্দ্র করে তুগতেকিন সফলভাবে ইয়েমেন জুড়ে আইয়ুবীয় শাসনকে শক্তিশালী করেছিলেন।[]

তার রাজত্বকালে যাবিদের চারপাশে চারটি দরজাসহ (সাহাম, গুলাফিকাহ, শুবারিক এবং কুরতুব) একটি প্রাচীর ছিল।[] তাইজে শহরের দুর্গের প্রধান অংশগুলো পুনর্নির্মিত হয়েছিল।[] তার রাজত্বের অধীনে এবং তার পূর্বসূরি তুরান শাহের সময়ে, এডেন ছিল ইয়েমেনের একমাত্র শহর যেখানে সোনার মুদ্রা তৈরি করা হয়েছিল।[] মক্কায় তুগতেকিনের কাছে সালাহউদ্দিনের নামে মুদ্রিত দিনারদিরহামের মুদ্রা ছিল।[] এডেনে আমদানিকৃত পণ্যের জন্য প্রধান বাণিজ্যিক ট্রানজিট এলাকাটি তুগতেকিন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেটি দারুস সাদা নামে পরিচিত ছিল।[]

তুরান শাহের শাসনামলে বণিক জাহাজগুলোকে পাহারা দেওয়ার জন্য সামুদ্রিক টহলের একটি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ছিল "গ্যালি কর", যা এই সুরক্ষার জন্য আরোপ করা হয়েছিল। যাইহোক, তুগতেকিনের শাসনামল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই যুদ্ধজাহাজ সমুদ্র সৈকতে দণ্ডায়মান ছিল। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি কীভাবে গ্যালি ট্যাক্স সংগ্রহ করবেন। তখন তুগতেকিন প্রথমে ইঙ্গিত করেছিলেন যে তিনি অন্য শাসকের মত বলপ্রয়োগ করে তা করবেন। কিন্তু তার সহযোগীরা তাকে পরিবর্তে গ্যালি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তুগতেকিন তার সহযোগীদের ধারণা গ্রহণ করেন এবং জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে বাণিজ্যিক পণ্য রক্ষা করতে এবং সামুদ্রিক ট্রাফিক নিরীক্ষণের জন্য তার যুদ্ধজাহাজ পাঠান। গ্যালিগুলো ভারত পর্যন্ত পাঠানো হয়েছিল।[১০]

মধ্যযুগীয় মুসলিম ইতিহাস লেখক ইবনুল আসিরের মতে, তুগতেকিন মক্কার নিয়ন্ত্রণ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আব্বাসীয় খলিফা নাসিরের প্রতিবাদের পর, সালাহউদ্দিন হস্তক্ষেপ করেন এবং তুগতেকিনকে শহর দখল করতে বাধা দেন। ইবনে আসির লিখেছেন যে, তুগতেকিন ছিলেন "একজন কঠোর শাসক, তার প্রজাদের প্রতি কঠোর, যিনি নিজের জন্য বণিকদের পণ্য ক্রয় করতেন এবং তার ইচ্ছামত দামে বিক্রি করতেন"।[১১]

মৃত্যু

সম্পাদনা

তুগতেকিন ১১৯৭ সালের আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে যাবিদে মারা যান। তার পুত্র মুইয ইসমাইল তার স্থলাভিষিক্ত হন, কিন্তু ১৭ জানুয়ারী ১২০২ তারিখে তাকে হত্যা করা হয়। তার পরে তার ছোট ভাই নাসির আইয়ুবের একজন মামলুক (দাস সৈনিক) তার স্থলাভিষিক্ত হন।[১১]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Lev, p. 116.
  2. Lev, p. 77.
  3. Houtsma, p. 884.
  4. Slaughter, p. 128.
  5. Al-Mujawir, p. 101.
  6. Macdonald, p. 309.
  7. Margariti, p. 29.
  8. Royal Numismatic Society, p. 95.
  9. Margariti, p. 96.
  10. Margariti, p. 138.
  11. Richards, p. 31.

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা