তাজুল ইসলাম (মুক্তিযোদ্ধা)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

তাজুল ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। []

তাজুল ইসলাম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

তাজুল ইসলামের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিঅন্ধ গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আলী আমজাদ ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম হামিদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম স্বপ্নাহার বেগম। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

তাজুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাদের আক্রমণ করে। এ সময় তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। বৃহত্ত্বর সিলেটের ধলই, কানাইঘাট, এমসি কলেজসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ধলই ও এমসি কলেজের যুদ্ধেও আহত হন তিনি।[]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই জামালপুরের কামালপুর বিওপিতে গভীর রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে তাজুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা যেতে থাকলেন এফইউপিতে (ফর্মিং আপ প্লেস)। অদূরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালাবেন। তাজুল ইসলাম হেভি মেশিনগান চালক। তার সঙ্গে আছে আরও চারজন। এ সময় ভারত থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে শুরু হলো দূরপাল্লার আর্টিলারি গোলাবর্ষণ। গোলাবর্ষণের তীব্রতায় প্রকৃতি কেঁপে উঠল। কয়েকটি গোলা এসে পড়ল মুক্তিবাহিনীর এফইউপিতে। নিজেদের গোলায় শহীদ ও আহত হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। একই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীও শুরু করল পাল্টা গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধাদের দুই-তৃতীয়াংশ স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এফইউপিতে গোলা পড়ায় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি শুরু করলেন। দেখা দিল বিশৃঙ্খলা। সংকটময় এক অবস্থা। তাজুল ইসলামেরা এই বিপর্যয়ে দমে গেলেন না। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেন। এ সময়ই নিজেদের গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। তাতে কিছুটা সুবিধা হলো। তাজুল ইসলাম এরপর ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সহযোদ্ধাদের সহযোগিতায় মেশিনগান দিয়ে গুলি করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনে। চারদিকে মাইনফিল্ড ও কাঁটাতারের বেড়া। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে তারা সাহসিকতার সঙ্গে মাইনফিল্ড ও কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার মধ্যে। তাদের সাহস ও বীরত্ব দেখে পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব। পাকিস্তানিরা প্রবলভাবে বাধা দিতে থাকল। তাজুল ইসলামদের মেশিনগানের গুলিতে হতাহত হলো অনেক পাকিস্তানি সেনা। এরপর তারা পিছু হটতে থাকল। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের বিরাট অংশ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। এমন সময় আবার বিপর্যয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের দলনেতা সালাহউদ্দীন মমতাজ শহীদ হলেন। একটু পর তাজুল ইসলামের দলনেতাও হাফিজউদ্দিন আহমেদ গুরুতর আহত হলেন। এতে নেতৃত্বশূন্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ আবার বিশৃঙ্খল ও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ৩১ জন শহীদ ও ৬৫ জন আহত হন। এই যুদ্ধে তাজুল ইসলাম অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তিনি নিজেও আহত হন। তার বাঁ চোয়ালে গুলি ও ঘাড়ে শেলের স্প্লিন্টার লাগে। তার পরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। আহত অবস্থায়ই তার আহত দলনেতাকে উদ্ধার করার জন্য তিনি কাভারিং ফায়ার দেন।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৬-০৭-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা