তাজহাট জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের জাদুঘর

তাজহাট রাজবাড়ি বা তাজহাট জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর শহরের পুরান রংপুর তথা তাজহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা এখন একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। রাজবাড়িটি রংপুর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি রংপুরের অন্যতম একটি প্রাচীন নিদর্শনও বটে।

তাজহাট জমিদার বাড়ি
তাজহাট রাজবাড়ি সামনে দৃশ্য
মানচিত্র
অবস্থানবাংলাদেশ, তাজহাট রাজবাড়ি, রংপুর
স্বীকৃতিপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর (বাংলাদেশ)
তাজহাট রাজবাড়ি, রংপুর

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাসাদটি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। এতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। কথিত আছে, তার মনমুগ্ধকর 'তাজ' বা মুকুটের কারণেই এ এলাকা তাজহাট নামে অভিহিত হয়ে আসছে।[]

১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একটি শাখা বা বেঞ্চ হিসেবে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীয়করণের লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগের আঞ্চলিক বেঞ্চ স্থাপন করেন যার একটি রংপুরে স্থাপিত হয়েছিল। পরে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই পদ্ধতি তুলে দেয়া হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা তথা স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকার এ স্থাপত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতঃ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর জাদুঘরকে স্থানান্তর করে এ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে।

মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। এখানে রয়েছে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় লেখা বেশ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এর মধ্যে রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন সহ মহাভারতরামায়ণ। পেছনের ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটা কাল পাথরের হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতি। কিন্তু জাদুঘরের ভিতরে ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুইটি পুকুর। জাদুঘরে নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করে প্রবেশ করা যায়। প্রাসাদ চত্ত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে গাড়ীর জন্যও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

গঠনশৈলী

সম্পাদনা

প্রাসাদটি প্রায় ২১০ ফুটের মত প্রশস্ত ও চার তলার সমান উঁচু। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয় যার প্রমাণ মেলে মধ্যভাগে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুই পাশে তার ছড়িয়ে যাওয়া দালানগুলোর একটা মসজিদের অবয়ব থেকে। তবে রাজবাড়ী যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সকল প্রাসাদের থেকে আলাদা তা হল এর সিঁড়িগুলো। সর্বমোট ৩১ টি সিড়ি আছে যার প্রতিটাই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত মেঝের পুরোটাও একই পাথরে তৈরি। রাজবাড়ির পশ্চাৎভাগে গুপ্ত সিঁড়ি রয়েছে। এই গুপ্ত সিঁড়ি কোন একটি সুড়ংগের সাথে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীর সাথে যুক্ত এমন একটা জনশ্রুতি শোনা যায় তবে সিঁড়ি টা এখন নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাসাদের সুন্দর ফোয়ারাটি কালের বিবর্তনে শ্বেতশুভ্র মার্বেল ও তার সবুজাভ নকশা কিছুটা মলিন হলেও এখনো এর জৌলুষ বুঝা যায়। কথিত আছে রাণীর জন্যেই বিশেষ ক'রে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

চিত্রমালা

সম্পাদনা

প্রাসাদটির সম্মুখভাগ প্রায় ৭৬ মিটার, দুই তলা বিশিষ্ট এবং পূর্ব দিকে মুখ করে এর অবস্থান। প্রাসাদটির মাঝখানে একটি আকর্ষণীয় প্রশস্ত সিঁড়ি রয়েছে যা আমদানি করা সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি। সিঁড়ি টি বারান্দা থেকে সরাসরি উপরের তলায় নিয়ে যায়। প্রাসাদটি ছাদের মাঝখানে একটি লম্বা অষ্টভুজাকার ঘাড় সহ একটি পাঁজর-শঙ্কুযুক্ত গম্বুজ দ্বারা সাজানো, আংশিকভাবে সরু আধা- সরু স্তম্ভগুলির একটি সারি রয়েছে যা প্রাসাদটিকে দৃঢ়তা প্রদান করে।মনোরম সিঁড়ির উভয় পার্শ্বের রেলিংগুলো মূলত ইতালীয় মার্বেলে এবং ধ্রুপদী রোমান সম্রাজের মূর্তিগুলির বিভিন্ন ভাস্কর্য দিয়ে অলঙ্কৃত ছিল, কিন্তু এখন সেগুলি কালের পরিক্রমায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।প্রাসাদটির সামনের মুখের প্রতিটি প্রান্তে দুটি করে অর্ধ-অষ্টভুজাকার এবং একটি কেন্দ্রীয় সাজানো বারান্দা রয়েছে।বারান্দার ওপরের ছাউনি টি গোলাকার খাদযুক্ত চারটি সুন্দর সরু স্তম্ভের উপর বহন করা হয়, যখন বিল্ডিংয়ের প্রতিটি সাজানো প্রান্তে দুটি অনুরূপ স্তম্ভ একটি ত্রিভুজাকার ধার দৃঢ়তা প্রদান করে।

প্রাসাদটির খোলা প্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত "U" আকৃতির মতো করে নকশা তৈরি করে।প্রবেশ পথের বাইরে নিচ তলায় একটি খুব বড় হল আছে, যার পরিমাপ 18 x 13 মিটারের ও বেশি।একটি 3 মিটার চওড়া গলি ভেতরের ব্লকের পুরো দৈর্ঘ্য দিয়ে চলে যায়।দুটি প্রশস্ত কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উপরের তলায় উঠার জন্য ব্যাবস্থা রয়েছে।প্রাসাদটিতে দুটি তলায় প্রায় 22 টির মতো কামরা রয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "তাজহাট রাজবাড়ি, রংপুর"। ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৮