তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতি
তফসিলি জাতি (এসসি)[২] ও তফসিলি জনজাতি (এসটি) হচ্ছে সরকারিভাবে স্বীকৃত ভারতের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত আর্থসামাজিক জনগোষ্ঠী।[৩] এই শব্দদুটি ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত।[৪]:৩ ব্রিটিশ ভারতের বেশিরভাগ সময়কালে তারা অনুন্নত শ্রেণি হিসাবে পরিচিত ছিল।[৪]:২
আধুনিক সাহিত্যে তফসিলি জাতিদের মাঝেমধ্যে "দলিত" বলে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ "ভাঙা" বা "বিস্তৃত"।[৫][৬] স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দলিত নেতা ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এই শব্দটিকে জনপ্রিয় করেছিলেন। আম্বেদকর গান্ধী দ্বারা জনপ্রিয় "হরিজন" শব্দের থেকে "দলিত" শব্দকে পছন্দ করেছিলেন।[৫] একইভাবে, তফসিলি জনজাতি অনেকসময় "আদিবাসী", "বনবাসী" বা "বন্যজাতি" নামে পরিচিত। কিন্তু ভারত সরকার এইধরনের অশ্লীল ও নৃতাত্ত্বিকভাবে বেঠিক শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। বরং, তারা সংবিধান অনুযায়ী "তফসিলি জাতি" ও "তফসিলি জনজাতি" শব্দ ব্যবহার করে।[৭][৮] সেপ্টেম্বর ২০১৮-এ সরকার সমস্ত বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলদের "দলিত"-এর মতো অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিল, যদিও মানবাধিকার সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী জনপ্রিয় মাধ্যমে "দলিত" শব্দ থেকে সরে যাওয়ার বিরোধিতা করে এসেছে।[৯]
সংজ্ঞা
সম্পাদনা- তফসিলি জাতি
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬৬ (২৪) অনুযায়ী;[১০]
“তফসিলী জাতিসমূহ” বলিতে এরূপ জাতিসমূহ, প্রজাতিসমূহ বা জনজাতিসমূহ, অথবা ঐরূপ জাতিসমূহের, প্রজাতিসমূহের বা জনজাতিসমূহের এরূপ ভাগসমূহ, বা উহাদের অন্তর্গত এরূপ গোষ্ঠীসমূহ বুঝায় যাহারা এই সংবিধানের প্রয়োজনে ৩৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তফসিলী জাতিসমূহ বলিয়া গণ্য হয়;
- তফসিলি জনজাতি
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬৬ (২৫) অনুযায়ী;[১০]
“তফসিলী জনজাতিসমূহ” বলিতে এরূপ জনজাতিসমূহ বা জনজাতীয় সম্প্রদায়সমূহ অথবা ঐরূপ জনজাতিসমূহের বা জনজাতীয় সম্প্রদায়সমূহের এরূপ ভাগসমূহ বা উহাদের অন্তর্গত এরূপ গোষ্ঠীসমূহ বুঝায় যাহারা এই সংবিধানের প্রয়োজনে ৩৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তফসিলী জনজাতিসমূহ বলিয়া গণ্য হয়;
শনাক্তকরণ ও প্রক্রিয়া
সম্পাদনা- অনুচ্ছেদ ৩৪১
(১) কোন রাজ্য [বা সংঘশাসিত রাজ্যক্ষেত্র] সম্পর্কে, এবং কোন রাজ্যের স্থলে, উহার রাজ্যপালের সহিত পরামর্শের পর, রাষ্ট্রপতি, সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে জাতি, প্রজাতি বা জনজাতিসমূহ অথবা জাতি, প্রজাতি জনজাতিসমূহের যে ভাগসমূহ বা উহাদের অন্তর্গত যে গোষ্ঠীসমূহ এই সংবিধানের প্রয়োজনে, ক্ষেত্রানুযায়ী, ঐ রাজ্য [বা ঐ সংঘশাসিত রাজ্যক্ষেত্র] সম্বন্ধে তফসিলী জাতিসমূহ বলিয়া গণ্য হইবে, তাহা বিনির্দিষ্ট করিতে পারেন।
(২) সংসদ, বিধি দ্বারা, কোন জাতি, প্রজাতি বা জনজাতিকে অথবা কোন জাতি, প্রজাতি বা জনজাতির কোন ভাগ্যকে বা উহাদের অন্তর্গত কোন গোষ্ঠীকে (১) প্রকরণ অনুযায়ী প্রচারিত কোন প্রজ্ঞাপনে বিনির্দিষ্ট তফসিলী জাতিসমূহের সূচীর অন্তর্ভুক্ত করিতে বা ঐ সূচী হইতে বাদ দিতে পারেন, কিন্তু পূর্বোক্ত প্রকারে ভিন্ন, উক্ত প্রকরণ অনুযায়ী প্রচারিত কোন প্রজ্ঞাপন পরবর্তী কোন প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিবর্তিত হইবে না।
- অনুচ্ছেদ ৩৪২
(১) কোন রাজ্য [বা সংঘশাসিত রাজ্যক্ষেত্র] সম্পর্কে, এবং কোন রাজ্যের স্থলে, উহার রাজ্যপালের সহিত পরামর্শের পর, রাষ্ট্রপতি, সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে জনজাতি বা জনজাতীয় সম্প্রদায়সমূহ অথবা জনজাতি বা জনজাতীয় সম্প্রদায়সমূহের যে ভাগসমূহ বা উহাদের অন্তর্গত যে গোষ্ঠীসমূহ এই সংবিধানের প্রয়োজনে, ক্ষেত্রানুযায়ী, ঐ রাজ্য [বা ঐ সংঘশাসিত রাজ্যক্ষেত্র] সম্বন্ধে তফসিলী জনজাতিসমূহ বলিয়া গণ্য হইবে, তাহা বিনির্দিষ্ট করিতে পারেন।
(২) সংসদ, বিধি দ্বারা, কোন জনজাতি বা জনজাতীয় সম্প্রদায়কে অথবা কোন জনজাতি বা জনজাতীয় সম্প্রদায়ের কোন ভাগ্যকে বা উহাদের অন্তর্গত কোন গোষ্ঠীকে (১) প্রকরণ অনুযায়ী প্রচারিত কোন প্রজ্ঞাপনে বিনির্দিষ্ট তফসিলী জনজাতিসমূহের সূচীর অন্তর্ভুক্ত করিতে বা ঐ সূচী হইতে বাদ দিতে পারেন, কিন্তু পূর্বোক্ত প্রকারে ভিন্ন, উক্ত প্রকরণ অনুযায়ী প্রচারিত কোন প্রজ্ঞাপন পরবর্তী কোন প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিবর্তিত হইবে না।
বৃহত্তর অর্থে "তফসিল" বলতে ভারতের সংবিধানে নির্দিষ্ট জাতি ও উপজাতির আইনি তালিকাকে বোঝায়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে এদের উন্নতি এবং সমাজের মূলস্রোতে এদের অন্তর্ভুক্তি। তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতির তালিকা থেকে কোনো সম্প্রদায়, জাতি বা উপজাতিদের অন্তর্ভুক্তি ও বর্জনের প্রক্রিয়া ১৯৬৫-এর লোকুর কমিটি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কিছু উল্লেখযোগ্য মানদণ্ড ও পদ্ধতি মেনে চলে।[১১] তফসিলি জাতির মানদণ্ড হচ্ছে অস্পৃশ্যতা প্রথার জন্য চরম সামাজিক, শিক্ষাগত এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসরতা।[১২] অন্যদিকে, তফসিলি জনজাতির মানদণ্ড হচ্ছে আদিমতা, পৃথক সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনীহা এবং সম্পূর্ণভাবে অনগ্রসরতা।[১২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Census of India 2011, Primary Census Abstractটেমপ্লেট:PPTlink, Scheduled castes and scheduled tribes, Office of the Registrar General & Census Commissioner, Government of India (28 October 2013).
- ↑ "Scheduled Caste Welfare – List of Scheduled Castes"। Ministry of Social Justice and Empowerment। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১২।
- ↑ "Scheduled Castes And Scheduled Tribes"। United Nations in India। ২২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;scheduledcommunities
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ Roychowdhury, Adrija (সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮)। "Why Dalits want to hold on to Dalit, not Harijan, not SC"। The Indian Express। ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "Dalit."। Merriam-Webster.com Dictionary। ৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০২২।
- ↑ Bali, Surya (২০১৮-১০-২৬)। "We are 'Scheduled Tribes', not 'Adivasis'"। Forward Press (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫।
- ↑ Dasgupta, Sangeeta (অক্টোবর ২০১৮)। "Adivasi studies: From a historian's perspective"। History Compass (ইংরেজি ভাষায়)। 16 (10)। আইএসএসএন 1478-0542। ডিওআই:10.1111/hic3.12486।
- ↑ Union minister: Stick to SC, avoid the term 'Dalit' ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে "Union social justice minister Thawarchand Gehlot said media should stick to the constitutional term "Scheduled Castes" while referring to Dalits as there are objections to the term to the term "Dalit" – backing the government order which has significant sections of scheduled caste civil society up in arms." Times of India 5 September 2018.
- ↑ ক খ ভারতের সংবিধান (২০২২), ভাগ ১৯।
- ↑ "Office of Registrar-General of India follows 'obsolete' criteria for scheduling of tribes"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০১-১১। আইএসএসএন 0971-751X। ৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২০।
- ↑ ক খ "Inclusion Into SC List" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Press Information Bureau, Government of India। Ministry of Social Justice & Empowerment। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৭।