ইলেকট্রন বিজ্ঞান

তড়িৎ প্রকৌশল ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের একটি আন্তঃক্ষেত্রীয় জ্ঞানের শাখা, যেখানে শূন্যস্থান ও প
(তড়িৎ বিদ্যা থেকে পুনর্নির্দেশিত)


ইলেকট্রন বিজ্ঞান হলো ফলিত পদার্থবিজ্ঞান এবং তড়িৎ প্রকৌশলের একটি আন্তঃক্ষেত্রীয় শাখা, যেখানে বৈদ্যুতিক সঙ্কেতের বহন, প্রবাহ, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহারিক আচরণ ও প্রক্রিয়া আলোচিত হয়, যা বায়ুশূন্য নল (ভ্যাকিউম টিউব), গ্যাস বা অর্ধপরিবাহী যন্ত্রাংশের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের সঞ্চালন এবং নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯০৪ সালে জন অ্যামব্রোস ফ্লেমিং দুটি তড়িৎ ধারক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের বদ্ধ বায়ুশূন্য কাচের নল (ভ্যাকিউম টিউব) উদ্ভাবন করেন, যার মাধ্যমে একমুখী তড়িৎ প্রবাহ প্রেরণ সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে ইলেকট্রন বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। ইংরেজি ভাষায় এটি ইলেকট্রনিক্স (Electronics) নামে পরিচিত।

নিউমেটিক সংকেত কন্ডিশনার
নিউমেটিক সংকেত কন্ডিশনার

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইলেকট্রন বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয় বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকত্ব সম্পর্কিত মানবজাতির ক্রমবর্ধমান জ্ঞান থেকে। ১৯ শতকের শুরুতে, বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন, যা পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক চৌম্বকত্ব তত্ত্বের জন্ম দেয়। এসব আবিষ্কার বৈদ্যুতিক যোগাযোগের প্রযুক্তি যেমন টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং পরবর্তীতে বেতার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথ সুগম করে।

১৮৮০-এর দশকে, থমাস এডিশন এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বৈদ্যুতিক প্রবাহের গতিবিধি সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন এবং তাপীয় ইলেকট্রন নিঃসরণের ধারণা পোষণ করেন, যা পরবর্তীতে ভ্যাকিউম টিউবের উদ্ভাবনে সাহায্য করে। ১৯০৪ সালে, জন অ্যামব্রোস ফ্লেমিং আবিষ্কার করেন দ্বি-ইলেকট্রোড ভ্যাকিউম টিউব বা ডায়োড, যা বৈদ্যুতিক প্রবাহ একদিকে প্রবাহিত করতে সক্ষম। এরপর ১৯০৭ সালে, লিয়ন দে ফরেস্ট ত্রি-ইলেকট্রোড ভ্যাকিউম টিউব বা ট্রায়োড উদ্ভাবন করেন, যা বৈদ্যুতিক সংকেত বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই আবিষ্কারগুলি বেতার যোগাযোগ এবং পরবর্তীতে রেডিও ও টেলিভিশনের বিকাশে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।

প্রথম ভ্যাকুয়াম টিউব
প্রথম ভ্যাকুয়াম টিউব

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, রাডার, সোনার এবং অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যায়, এবং এই সময়কালে মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ও ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কিত গবেষণা ত্বরান্বিত হয়। যুদ্ধের পর, ১৯৪৭ সালে ট্রানজিস্টরের আবিষ্কার এবং ১৯৫৯ সালে সমন্বিত বর্তনী (ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্সের নতুন যুগের সূচনা হয়। ট্রানজিস্টর ভ্যাকিউম টিউবের তুলনায় ছোট, হালকা এবং অনেক বেশি দক্ষ ছিল, যা কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং অন্যান্য গ্রাহক ইলেকট্রনিক্সের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছিল।

ইলেকট্রনিক্সের ধরন

সম্পাদনা

অ্যানালগ ইলেকট্রনিক্স: অ্যানালগ সিস্টেমে, তথ্য ধারাবাহিকভাবে একটি সাইন ওয়েভের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করা হয়। অডিও এবং ভিডিও সিগন্যাল অ্যানালগ সিগন্যালের উদাহরণ।

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স: ডিজিটাল সিস্টেমে, তথ্য বাইনারি সংখ্যা (০ এবং ১) দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের উদাহরণ।

ইলেকট্রনিক্সের প্রয়োগ

সম্পাদনা

আজকের সমাজে ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি অপরিহার্য। এর প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে:

যোগাযোগ: মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট কম্পিউটিং: ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট গ্রাহক ইলেকট্রনিক্স: ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, এয়ার কন্ডিশনার শিল্প ও উৎপাদন: রোবটিক্স, অটোমেশন, কম্পিউটার-সংক্রান্ত নির্মাণ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান: চিকিৎসা ইমেজিং, জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি, টেলিমেডিসিন বিনোদন: ভিডিও গেম, মিউজিক প্লেয়ার, সিনেমা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা