ডরথি ড্যানড্রিজ
ডরথি জিন ড্যানড্রিজ (ইংরেজি: Dorothy Jean Dandridge; ৯ নভেম্বর ১৯২২ - ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫) একজন মার্কিন অভিনেত্রী, সঙ্গীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী ছিলেন। কারমেন জোন্স (১৯৫৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত ড্যানড্রিজ অস্কারের মনোনয়ন পাওয়া প্রথম আফ্রিকান-মার্কিন চলচ্চিত্র তারকা।[১] তিনি কটন ক্লাব ও অ্যাপোলো থিয়েটারে গায়িকা হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তার কর্মজীবনের শুরুতে তিনি দ্য ওয়ান্ডার চিলড্রেন ও দ্য ড্যানড্রিজ সিস্টার্স টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কাজ করেন।
ডরথি ড্যানড্রিজ | |
---|---|
ইংরেজি: Dorothy Dandridge | |
জন্ম | ডরথি জিন ড্যানড্রিজ ৯ নভেম্বর ১৯২২ |
মৃত্যু | সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৬৫ ওয়েস্ট হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৪২)
সমাধি | ফরেস্ট লন মেমোরিয়াল পার্ক |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৩৩-১৯৬৫ |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান | ১ |
পিতা-মাতা | রুবি ড্যানড্রিজ (মাতা) |
আত্মীয় |
|
১৯৫৯ সালে তিনি পোর্গি অ্যান্ড বেস চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৯০ সালের এইবিওর জীবনীমূলক চলচ্চিত্র ইন্ট্রোডিউসিং ডরথি ড্যানড্রিজ-এর মূল বিষয়বস্তু ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হলিউড ওয়াক অব ফেমে তার নামাঙ্কিত তারকা খচিত হয়।
ড্যানড্রিজ দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং দুটি বিয়েই বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। প্রথমে তিনি নৃত্যশিল্পী হ্যারল্ড নিকোলাসকে (তার কন্যা হ্যারোলিন সুজ্যানের পিতা) এবং দ্বিতীয়বার হোটেল মালিক জ্যাক ডেনিসনকে বিয়ে করেন। ড্যানড্রিজ ১৯৬৫ সালে ৪২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[২]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাড্যানড্রিজ ১৯২২ সালের ৯ই নভেম্বর ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা অভিনেত্রী রুবি ড্যানড্রিজ (জন্মনাম: বাটলার) এবং পিতা সাইরিল ড্যানড্রিজ।[৩][৪] তার পিতা কেবিনেট প্রস্তুতকারক এবং বাপ্তিষ্মক্রিয়া সঞ্চালক ছিলেন। তার জন্মের পূর্বেই তার পিতামাতার আলাদা হয়ে যান। তার বোন ভিভিয়ান ড্যানড্রিজও একজন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী।
রুবি তার দুই কন্যা ভিভিয়ান ও ডরথির জন্য গান ও নৃত্যের নাটিকা দ্য ওয়ান্ডার চিলড্রেন রচনা করেন। এই নাট্যনৃত্যটির নির্দেশনা দিতেন তার প্রেমিক জেনেভা উইলিয়ামস।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৫৩ সালে টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স দ্বিতীয় অস্কার হ্যামারস্টাইনের ১৯৪৩ সালে ব্রডওয়ে সঙ্গীতনাট্য কারমেন জোন্স-এর পূর্ণাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্ররূপের (১৯৫৪) জন্য দেশব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণ শুরু করে। এই কাজের জন্য জোর্জ বিজের গীতিনাট্য কারমেন-কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আফ্রিকান-মার্কিন পটভূমিতে নিয়ে আসা হয়।[৬] পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার অটো প্রেমিঙার পূর্ববর্তী বছরে ব্রাইট রোডে ড্যানড্রিজের এই নাটকে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় পছন্দ করেন এবং মনে করেন এই চলচ্চিত্রে শান্ত প্রকৃতির সিন্ডি লো নামক ছোট চরিত্রে আরও বেশি উপযুক্ত হবেন। ড্যানড্রিজ ম্যাক্স ফ্যাক্টর রূপসজ্জাকারের সহায়তায় কারমেন চরিত্রের রূপ নিয়ে প্রেমিঙারের অফিসে তার সাথে দেখা করতে যান। তার এই উপস্থিতি তাকে নাম ভূমিকাটি পাইয়ে দিতে সাহায্য করে।[৭]
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ড্যানড্রিজের খ্যাতি থাকা স্বত্ত্বেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গীতিনাত্যধর্মী কণ্ঠ চেয়েছিল, তাই ড্যানড্রিজের জন্য নেপথ্য কণ্ঠ দেন শ্বেতাঙ্গ মেৎজো-সোপরানো ম্যারিলিন হর্ন। কারমেন জোন্স ১৯৫৪ সালে ২৮শে অক্টোবর মুক্তির পর ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং বক্স অফিসেও ব্যবসাসফল হয়। চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহে ৭০,০০০ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করে। যৌনআবেদনময়ী কারমেন চরিত্রে ড্যানড্রিজের অভিনয় তাকে হলিউডের প্রথম আফ্রিকান-মার্কিন যৌনআবেদনের প্রতীক করে তুলে এবং তাকে ইতিবাচক সাড়া এনে দেয়। ১৯৫৪ সালের ১লা নভেম্বর ডরথি ড্যানড্রিজ প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে লাইফ পত্রিকার প্রচ্ছদে স্থান পান। ওয়াল্টার উইনচেল তার অভিনয়কে "মনমুগ্ধকর" ও ভ্যারাইটি বলে তার অভিনয়ে পুরোটা সময় জুড়ে সঠিক আনন্দবাদ বজায় ছিল।[৬]
কারমেন জোন্স বিশ্বব্যাপী সফলতা লাভ করে এবং বক্স অফিসে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে সে বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। ড্যানড্রিজ প্রথম আফ্রিকান-মার্কিন অভিনেত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত হন।[১] কিন্তু তিনি দ্য কান্ট্রি গার্ল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার বিজয়ী গ্রেস কেলির কাছে হেরে যান। ১৯৫৫ সালের ৩০শে মার্চ অনুষ্ঠিত ২৭তম একাডেমি পুরস্কারে ড্যানড্রিজ অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের বিজয়ী জিন মিলফোর্ডের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।[৮]
১৯৫৮ সালে শেষের দিকে ড্যানড্রিজ সিডনি পোয়াটিয়ের বিপরীতে আসন্ন পোর্গি অ্যান্ড বেস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রযোজক স্যামুয়েল গোল্ডউইনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।[৯][১০] তার এই প্রস্তাব গ্রহণের ফলে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কারণ এই গল্পে কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনযাপন অবমাননাকর হিসেবে দেখানো হয়েছে। শুরুর দিকের পরিচালক রুবেন মামুলিয়ানের স্থলে অটো প্রেমিঙার নতুন পরিচালক হয়ে আসার পর তিনি ড্যানড্রিজকে বলেন তার অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না এবং তার এই চরিত্রের জন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।[১১] পোর্গি অ্যান্ড বেস দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল নির্মাণ ছিল। সকল সেট ও পোশাক-পরিচ্ছদ আগুনে পুড়ে যায় এবং তা পরিবর্তন করতে হয়, যার ফলে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। পুনঃপুন পাণ্ডুলিপি পুনর্লিখন এবং অন্যান্য সমস্যা নির্মাণকাজকে দীর্ঘায়িত করে এবং মূল নির্মাণব্যয়কে ছাড়িয়ে যায়।[১২] ১৯৫৯ সালের জুন মাসে মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি মিশ্র পর্যালোচনা লাভ করে এবং ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।[১৩] যাই হোক, এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ড্যানড্রিজ সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ পটার, জোন (২০০২)। African American Firsts: Famous Little-Known and Unsung Triumphs of Blacks in America। কেনসিংটন বুকস। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন 0-7582-0243-1।
- ↑ ম্যাক্যান, বব (২০১০)। Encyclopedia of black actresses in film and television। ম্যাকফারল্যান্ড অ্যান্ড কোম্পানি। পৃষ্ঠা ৯০। আইএসবিএন 978-0-7864-5804-2। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৩।
- ↑ "Ohio Deaths 1908–1932, 1938–1944, and 1958–2002 [database on-line]"। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: দ্য জেনারেশন্স নেটওয়ার্ক। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২৩।
- ↑ "Social Security Death Index [database on-line]"। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: দ্য জেনারেশন্স নেটওয়ার্ক। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২৩।
- ↑ "Dorothy Dandridge's Story A Hollywood Tragedy"। শিকাগো ট্রিবিউন। সেপ্টেম্বর ১, ১৯৯৭।
- ↑ ক খ ম্যাক্ল্যারি, সুজান (১৯৯২)। Georges Bizet: Carmen। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ১৩৩। আইএসবিএন 0-521-39897-5।
- ↑ "Easy Street"। ২০২১-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা – ইউটিউব-এর মাধ্যমে, a 1941 soundie
- ↑ "The 27th Academy Awards (1955) Nominees and Winners"। অস্কার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ বার্গ, এ. স্কট (২০০৭)। Goldwyn: A Biography। নিউ ইয়র্ক: আলফ্রেড এ. নফ। পৃষ্ঠা ৪৮৮। আইএসবিএন 0-394-51059-3।
- ↑ পাওয়ার্স, ফিলিপ (৩১ ডিসেম্বর ২০২০)। Sidney Poitier Black and White: Sidney Poitier's Emergence in the 1960s as a Black Icon। ওয়ানএমওয়ান ডিজিটাল পিটিওয়াই লিমিটেড। পৃষ্ঠা ৩২৪।
- ↑ হার্শ, ফস্টার (২০০৭)। Otto Preminger: The Man Who Would Be King। নিউ ইয়র্ক: আলফ্রেড এ. নফ। পৃষ্ঠা ২৯৬। আইএসবিএন 978-0-375-41373-5।
- ↑ অ্যালপার্ট, হলিস (১৯৯০)। The Life and Times of Porgy and Bess: The Story of an American Classic। নিউ ইয়র্ক: আলফ্রেড এ. নফ। পৃষ্ঠা ২৫৯। আইএসবিএন 0-394-58339-6।
- ↑ আর্নিল, জিন (১০ আগস্ট ১৯৬০)। "New Hard Look at Film Critics And Their Relationship To B.O."। ভ্যারাইটি। পৃষ্ঠা ৩। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২৩ – আর্কাইভ.ওআরজি-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Winners & Nominees 1960"। গোল্ডেন গ্লোব। ৩০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২৩।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট ব্রডওয়ে ডেটাবেজে ডরথি ড্যানড্রিজ (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ডরথি ড্যানড্রিজ (ইংরেজি)