সর্দি-কাশি
সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দি-জ্বর এক ধরনের ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ যা মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসপথ, বিশেষ করে নাকে আক্রমণ করে।[৭] এছাড়া এই রোগে গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে।[৫] ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার দুই দিন পর বা তারও আগেই এই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি প্রকাশ পেতে পারে।[৫] উপসর্গগুলি মধ্যে আছে কাশি, গলাব্যথা, নাসাস্রাব (নাক দিয়ে সর্দি-পানি পড়া), হাঁচি, মাথাব্যথা ও জ্বর।[২][৩] সর্দিকাশিতে অসুস্থ ব্যক্তি সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে,[২] তবে কিছু উপসর্গ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে।[৬] সর্দিকাশির হওয়া ব্যক্তির অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকলে তার নিউমোনিয়া অর্থাৎ ফুসফুস প্রদাহ হতে পারে।[২]
সর্দি-কাশি | |
---|---|
প্রতিশব্দ | ঠাণ্ডা-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, সর্দিজ্বর, তীব্র ভাইরাসঘটিত নাসা-গলবিল প্রদাহ, নাসা-গলবিল প্রদাহ, ভাইরাসঘটিত নাসাপ্রদাহ[১] |
এক ধরনের মানব রাইনোভাইরাসের অণুর পৃষ্ঠতলের রেখাচিত্র | |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ |
লক্ষণ | কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর[২][৩] |
জটিলতা | মধ্যকর্ণ প্রদাহ, গহ্বর প্রদাহ[৪] |
রোগের সূত্রপাত | আক্রান্ত হবার আনুমানিক ২ দিন পর থেকে[৫] |
স্থিতিকাল | ১–৩ সপ্তাহ[২][৬] |
কারণ | ভাইরাসঘটিত[৭] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত নাসিকাপ্রদাহ, ক্লোমনালী প্রদাহ, হুপিং কাশি (খুংড়ি কাশি), অস্থিগহ্বর প্রদাহ[৪] |
প্রতিরোধ | হাত পরিষ্কার করে ধোয়া, মুখোশ পড়া[২] |
চিকিৎসা | উপসর্গমূলক চিকিৎসা,[২] zinc[৮] |
ঔষধ | স্টেরয়েডহীন প্রদাহনিরোধী ঔষধ (NSAID)[৯] |
সংঘটনের হার | বছরে ২–৪ বার (প্রাপ্তবয়স্ক); বছরে ৬–৮ বার (শিশু)[১০] |
এ পর্যন্ত দুই শতেরও বেশি শ্রেণীর ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে, যেগুলি সর্দি-কাশি সৃষ্টি করতে পারে, তবে এদের মধ্যে রাইনোভাইরাস (অর্থাৎ "নাসাভাইরাস") সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।[১১] ভাইরাস বাতাস দ্বারা বাহিত হয়ে আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকে অন্য ব্যক্তির দেহে সরাসরি ছড়াতে পারে; আক্রান্ত রোগী কোনও বস্তু ধরলে সেখানে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে, এবং আরেকজন ব্যক্তি সেই বস্তুটি হাতে ধরে পরবর্তীতে মুখে বা নাকে হাত দিলে ভাইরাস পরোক্ষভাবে আক্রমণ করতে পারে।[২] শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে গমনাগমন করলে, ভালো ঘুম না হলে এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।[৫] সর্দি-কাশির উপসর্গগুলি ভাইরাসের দ্বারা দেহকলা আক্রমণ বা ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট হয় না, বরং মূলত এগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র তথা প্রতিরক্ষাতন্ত্রের প্রতিক্রিয়ার ফসল।[১২] সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গের সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে সৃষ্ট রোগের উপসর্গের মিল থাকলেও ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলির তীব্রতা অনেক বেশি হয়।[৫] অধিকন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে নাক দিয়ে পানি পড়ার সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে।[১৩]
সর্দি-কাশির জন্য কোনও টিকা নেই।[২] সর্দি-কাশি প্রতিরোধের প্রধান উপায় হল হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা, আধোয়া হাতে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ না করা, এবং সর্দি-কাশিতে অসুস্থ ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা।[২] রোগ প্রতিরোধমূলক মুখোশ পড়লে উপকার হয়, এমন কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে।[১৪] সর্দি-কাশির জন্য কোনও চিকিৎসা বা ঔষধও নেই, তবে এর উপসর্গগুলি প্রশমন করা সম্ভব।[২] কিছু চিকিৎসা গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী উপসর্গগুলি প্রকাশ পাবার ঠিক পরপরই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দস্তাভিত্তিক ঔষধ ব্যবহার করলে উপসর্গের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব উভয়ই হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।[৮] স্টেরয়েডহীন প্রদাহনিরোধী ঔষধ (NSAID) যেমন আইবুপ্রোফেন প্রদাহজনিত ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।[৯] তবে ব্যাকটেরিয়া নিরোধক তথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়।[১৫] আর কফের ঔষধের কার্যকারিতার তেমন ভাল প্রমাণ নেই। [৫][১৬]
সর্দি-কাশি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ঘনঘন সংঘটিত সংক্রামক ব্যাধি।[১৭] গড়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি বছরে দুই থেকে তিন বার এবং একটি শিশু প্রতি বছরে গড়ে ছয় থেকে আটবার সর্দি-কাশিতে ভুগতে পারে।[৭][১০] তবে শীতকালে এই সংক্রমণটি বেশি পরিলক্ষিত হয়।[২] এ কারণেই হয়ত বাংলায় এটিকে "সর্দি-কাশি" বা "ঠাণ্ডা-কাশি" বলে। "সর্দি" কথাটি একটি ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ "ঠাণ্ডা ভাব"। সমগ্র মানব ইতিহাস জুড়েই সর্দি-কাশির সংক্রমণ হয়ে এসেছে।[১৮]
লক্ষণ ও উপসর্গ
সম্পাদনাসর্দিজনিত লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কাশি, সর্দি, হাঁচি, অনুনাসিক জঞ্জাল এবং গলা ব্যথা, কখনো কখনো পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা এবং ক্ষুধা হ্রাস পায়। [১৯] প্রায় ৪০% ক্ষেত্রে গলাতে কালশিটে এবং ৫০% ক্ষেত্রে কাশি থাকে৷[৭] যখন এই সমস্যা ঘটে তখন পেশী ব্যথা প্রায় অর্ধেক সময় থাকে।[৩] প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর লক্ষণ হিসাবে দেখা যায় না। তবে এটি শিশু এবং অল্প বয়স্ক শিশুদের মধ্যে এটি সাধারণ লক্ষণ। [৩] কাশি সাধারণত সহনীয় ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় হালকা হয়।[৩] সাধারণত কাশি এবং জ্বর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়ার বড় সম্ভাবনা নির্দেশ করে। দুইটি এক না হলেও দুটি অবস্থার মধ্যে অনেকটাই মিল রয়েছে৷ [২০] এই সমস্যা সাধারণত সর্দি সৃষ্টিকারী বেশ কয়েকটি ভাইরাস সংক্রামিত সংক্রমণ থেকে হতে পারে৷[২১][২২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ John, Pramod R. John (২০০৮)। Textbook of Oral Medicine। Jaypee Brothers Publishers। পৃষ্ঠা 336। আইএসবিএন 978-81-8061-562-7। ২৯ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ "Common Colds: Protect Yourself and Others"। CDC। ৬ অক্টোবর ২০১৫। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Eccles R (নভেম্বর ২০০৫)। "Understanding the symptoms of the common cold and influenza"। Lancet Infect Dis। 5 (11): 718–25। ডিওআই:10.1016/S1473-3099(05)70270-X। পিএমআইডি 16253889।
- ↑ ক খ Bennett, John E.; Dolin, Raphael; Blaser, Martin J. (২০১৪)। Principles and Practice of Infectious Diseases (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 750। আইএসবিএন 978-1-4557-4801-3। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Allan, GM; Arroll, B (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Prevention and treatment of the common cold: making sense of the evidence"। CMAJ : Canadian Medical Association Journal। 186 (3): 190–99। ডিওআই:10.1503/cmaj.121442। পিএমআইডি 24468694। পিএমসি 3928210 ।
- ↑ ক খ Heikkinen T, Järvinen A (জানুয়ারি ২০০৩)। "The common cold"। Lancet। 361 (9351): 51–59। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(03)12162-9। পিএমআইডি 12517470।
- ↑ ক খ গ ঘ Arroll, B (মার্চ ২০১১)। "Common cold"। Clinical Evidence। 2011 (3): 1510। পিএমআইডি 21406124। পিএমসি 3275147 ।
Common colds are defined as upper respiratory tract infections that affect the predominantly nasal part of the respiratory mucosa
- ↑ ক খ "Zinc – Fact Sheet for Health Professionals"। Office of Dietary Supplements, US National Institutes of Health। ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
Although studies examining the effect of zinc treatment on cold symptoms have had somewhat conflicting results, overall zinc appears to be beneficial under certain circumstances.... In September of 2007, Caruso and colleagues published a structured review of the effects of zinc lozenges, nasal sprays, and nasal gels on the common cold [69]. Of the 14 randomized, placebo-controlled studies included, 7 (5 using zinc lozenges, 2 using a nasal gel) showed that the zinc treatment had a beneficial effect and 7 (5 using zinc lozenges, 1 using a nasal spray, and 1 using lozenges and a nasal spray) showed no effect. More recently, a Cochrane review concluded that “zinc (lozenges or syrup) is beneficial in reducing the duration and severity of the common cold in healthy people, when taken within 24 hours of onset of symptoms” [73]. The author of another review completed in 2004 also concluded that zinc can reduce the duration and severity of cold symptoms [68]. However, more research is needed to determine the optimal dosage, zinc formulation and duration of treatment before a general recommendation for zinc in the treatment of the common cold can be made [73]. As previously noted, the safety of intranasal zinc has been called into question because of numerous reports of anosmia (loss of smell), in some cases long-lasting or permanent, from the use of zinc-containing nasal gels or sprays [17–19].
- ↑ ক খ Kim, SY; Chang, YJ; Cho, HM; Hwang, YW; Moon, YS (২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Non-steroidal anti-inflammatory drugs for the common cold"। The Cochrane Database of Systematic Reviews। 9 (9): CD006362। ডিওআই:10.1002/14651858.CD006362.pub4। পিএমআইডি 26387658।
- ↑ ক খ Simasek M, Blandino DA (২০০৭)। "Treatment of the common cold"। American Family Physician। 75 (4): 515–20। পিএমআইডি 17323712। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Common Cold and Runny Nose"। CDC। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (17 April 2015) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Eccles p. 112
- ↑ "Cold Versus Flu"। ১১ আগস্ট ২০১৬। ৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ Eccles p. 209
- ↑ Harris, AM; Hicks, LA; Qaseem, A; High Value Care Task Force of the American College of Physicians and for the Centers for Disease Control and, Prevention (১৯ জানুয়ারি ২০১৬)। "Appropriate Antibiotic Use for Acute Respiratory Tract Infection in Adults: Advice for High-Value Care From the American College of Physicians and the Centers for Disease Control and Prevention"। Annals of Internal Medicine। 164 (6): 425–34। ডিওআই:10.7326/M15-1840। পিএমআইডি 26785402।
- ↑ Malesker, MA; Callahan-Lyon, P; Ireland, B; Irwin, RS; CHEST Expert Cough, Panel. (নভেম্বর ২০১৭)। "Pharmacologic and Nonpharmacologic Treatment for Acute Cough Associated With the Common Cold: CHEST Expert Panel Report"। Chest। 152 (5): 1021–37। ডিওআই:10.1016/j.chest.2017.08.009। পিএমআইডি 28837801। পিএমসি 6026258 ।
A suggestion for the use of zinc lozenges in healthy adults with cough due to common cold was considered by the expert panel. However, due to weak evidence, the potential side effects of zinc, and the relatively benign and common nature of the condition being treated, the panel did not approve inclusion of this suggestion.
- ↑ Eccles p. 1
- ↑ Eccles, Ronald; Weber, Olaf (২০০৯)। Common cold। Basel: Birkhäuser। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-3-7643-9894-1। ৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Eccles p. 24
- ↑ Eccles p. 26
- ↑ Eccles p. 129
- ↑ Eccles p. 50