ঝিঁঝিঁ পোকা
ঝিঁঝিঁ পোকা (ইংরেজি: Crickets) (যাদের অন্য নাম "ট্রু ক্রিকেট" "তুরগুলা"), হল গ্রিলিডা (Gryllidae) পরিবারের পতঙ্গ। এদের সাথে ঝোপের ঝিঁঝিঁ পোকার সম্পর্ক রয়েছে এবং দূরসম্পর্কীয়ভাবে ঘাস ফড়িংয়ের সাথে। এদের শরীর প্রধাণত বেলনাকার, মাথা গোলাকার এবং লম্বা এ্যান্টেনা রয়েছে। মাথার পেছনটা মসৃন। পেটের নিচের অংশ শেষ হয়েছে এক জোড়া লম্বা কাটা সদৃস; মেয়েদের রয়েছে একটি লম্বা বেলনাকার ovipositor। পেছনের পায়ের রয়েছে লম্বা থাই, যা লাফ দেয়ার জন্য শক্তি যোগায়। সামনের পাখনা শক্ত, পাখনা ঢেকে রাখার চামড়ার আস্তরন রয়েছে এবং কিছু ঝিঁঝিঁ পোকা এই অংশগুলো পরস্পর ঘষে আওয়ার সৃষ্টি করে। পেছনের পাখনা ঝিল্লিময় এবং ভাজ করে রাখা যায় উড়ার জন্য। অনেক প্রজাতি আছে যারা আবার উড়তে পারে না। এই পরিবারের সবচেয়ে বড় পোকাটি হল বুল ঝিঁঝিঁ পোকা Brachytrupes, যেটা৫ সেমি (২ ইঞ্চি) লম্বা হয়।
ঝিঁঝিঁ পোকা সময়গত পরিসীমা: Triassic–Recent [১] | |
---|---|
Juvenile Gryllus campestris | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
Subfamilies | |
See Taxonomy section | |
প্রতিশব্দ[২] | |
|
৯০০ টিরও বেশি ঝিঁঝিঁ পোকার প্রজাতি চিহ্ণিত করা আছে; গ্রিলিডা বর্গটি পৃথিবীর সবখানেই ছড়িয়ে আছে শুধুমাত্র ল্যাটিটিউড ৫৫° বা তার উপরে থাকা এলাকা ছাড়া। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এর বেশিরভাগ বৈচিত্র্য দেখা যায়। এদের বিভিন্ন জায়গায় বসতি করতে দেখা যায় যেমন ঘাসে, ঝোপে, বনের গুহায়, জলাভূমি এবং বেলাভূমিতে। ঝিঁঝিঁ পোকারা নিশাচর, এদের সহজে চেনা যায় উচ্চ শব্দে গাওয়া গানের জন্য। এই ডাক আসলে মেয়েদের কাছে টানার জন্য পুরুষ ঝিঁঝিঁ পোকা দিয়ে থাকে। আবার এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি আছে যারা শব্দ করতে পারে না। যারা গান বা ডাক দিতে পারে তারা ভাল শ্রবণ শক্তিরও অধিকারি কারণ তাদের হাটুতে আছে টিমপানা (এক প্রকারের কান)।
আবাসভূমি
সম্পাদনাএরা প্রায় সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে, সারা পৃথিবীতেই এদের খুজে পাওয়া যায়। তবে শীতল এলাকায় বিশেষ করে ৫৫° বা তার বেশি ল্যাটিটিউডের জায়গায় যেমন উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে এদের দেখা যায় না। এরা কখনো উড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বা কোন ভাসমান কাঠ বা গুড়িতে করে বা মানুষের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তারা অনেক বড় এবং ছোট দ্বীপেও ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায় গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এলাকায় যেমন মালয়েশিয়া যেখানে শুধু মাত্র একটি স্থানেই (কুয়ালালামপুরের কাছে) ৮৮টি প্রজাতির ডাক শোনা গেছে। হয়ত আরো বেশি কারণ সেখানে হয়ত ঝিঁঝিঁ পোকাদের শব্দহীন প্রজাতিও থাকতে পারে।[১]
এদের অনেক স্থানেই বাস করতে দেখা যায়। এদের উপ-পরিবারের অনেক সদস্যকেই গাছের উচু ডালে, ঝোপের মধ্যে এবং ঘাস ও তৃণলতার মধ্যে বাস করে। তাদের কিছু কিছু মাটি ও গুহায় থাকে। আবার তাদের অনেকেই ভূগর্ভে অগভীর বা গভীর খনন করে বাস করে। কিছু কিছু পচা গাছে বাসা করে। আবার কিছু প্রজাতি যারা সৈকতের ধারে বাস করে তারা ডোবার উপর ছুটতে এবং লাফ দিতে পারে।[১]
জীববিদ্যা
সম্পাদনাপ্রতিরক্ষা
সম্পাদনাঝিঁঝিঁ পোকারা প্রতিরক্ষা বিহীন হয়। এদের শরীর নরম। বেশিরভাগ প্রজাতিই নিশাচর এবং দিনের বেলা ফাটল, গাছের ছালের নিচে, পাতার নিচে, পাথরের আড়ালে, গাছের গুড়িতে, পাতার স্তুপ বা গরম কালে মাটিতে যে ফাটল হয় তাতে লুকিয়ে থাকে। কিছু কিছু ঝিঁঝিঁ পোকা পচা গাছে বা মাটিতে অগভীর গর্ত করে এবং তাতে তাদের এ্যান্টেনা ভাজ করে লুকিয়ে থাকে। এই গর্তগুলি অস্থায়ী বাসস্থান, হয়ত একদিনের জন্য কিন্তু অন্যগুলো তাদের স্থায়ী বাসস্থান যেখানে তারা যৌনক্রিয়া করে এবং ডিম পাড়ে। এরা মাটিকে খোড়ার জন্য চোয়াল দিয়ে মাটি নরম করে, তারপর পেছনের পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেয় বা মাথা দিয়ে সরায়।[৩]
প্রতিরক্ষার অন্য ব্যবস্থাগুলো হল ছদ্মবেশ ধারণ, পালানো, এবং আগ্রাসন চালানো। কিছু প্রজাতি রং, আকার বা নকশার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে যার ফলে তাদের শিকারী প্রাণীগুলোর জন্য তাদেরকে দেখা বা ধরতে পারা কষ্টকর হয়। এরা বাদামি, ধূসর বা সবুজ ধাচের হয় যা তারা যেখানে থাকে তার সাথে মিলে যায়। সেইরকম যেসব ঝিঝি পোকা মরুতে থাকে তাদের রং হয় ফিকে বালির মত। কিছু কিছু প্রজাতি ডানা দিয়ে উড়তে পারে কিন্তু সেটা অসম্পূর্ণ তাই বিপদ থেকে বাচতে এরা পলায়ন করে এবং দ্রুত লুকিয়ে যায়।[৩]
টিকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Resh, Vincent H.; Cardé, Ring T. (2009). Encyclopedia of Insects. Academic Press. pp. 232–236. ISBN 978-0-08-092090-0.
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;OSF
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ Huber, Franz (1989). Cricket Behavior and Neurobiology. Cornell University Press. pp. 32–36. ISBN 0-8014-2272-8.
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Gorochov A.V.; Mostovski M.B. (২০০৮)। "Apterous crickets of the tribe Gryllini from South Africa and Namibia (Orthoptera: Gryllidae)"। African Invertebrates। 49 (1): 109–121। ডিওআই:10.5733/afin.049.0103। ২১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Lisa Gail Ryan, Berthold Laufer, Lafcadio Hearn (1996). Insect musicians & cricket champions: a cultural history of singing insects in China and Japan. China Books. আইএসবিএন ০-৮৩৫১-২৫৭৬-৯.
- Franz Huber, Thomas Edwin Moore, Werner Loher (1989). Cricket behavior and neurobiology. Cornell University Press. আইএসবিএন ০-৮০১৪-২২৭২-৮.