ঝাবুয়া নানদের ধর্ষণ মামলা

ঝাবুয়া নানদের ধর্ষণ মামলা বলতে বোঝায় ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের ঝাবুওয়া জেলায় উপজাতি পুরুষদের দ্বারা ১৯৯৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ৪ জন নান বা সন্ন্যাসীদের গণধর্ষণের ঘটনা।[] প্রায় ১২-২৬ জন পুরুষ আশ্রমে প্রবেশ করে, যেখানে নানরা বাস করেন এবং পুরো আশ্রম ভাঙচুর করে ও কিছু পুরুষ নানদের গণধর্ষণ করে।[][]

তামিলনাড়ু থেকে সন্ন্যাসীরা প্রীতিশরণ আশ্রমে একটি মেডিক্যাল ক্লিনিক স্থাপনের জন্য ১৯৯৭ সালের ১১ই অক্টোবর ঝাবুয়া জেলার প্রধানত উপজাতি গ্রাম নওয়াপুরায় এসেছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ২৫-৩০ বছর এবং চতুর্থ জনের বয়স ত্রিশের বেশি ছিল। তারা শীঘ্রই গ্রামটিকে তাদের আবাসস্থলে পরিণত করে।[] আশ্রমে চারজন সন্ন্যাসী একা থাকতেন, যাদের দেখাশোনা করতেন দুজন প্রহরী। আশ্রমের দায়িত্বে ছিলেন একজন যাজক, যিনি তাদের নিকটতম প্রতিবেশীও, ৫০০ মিটার দূরে থাকতেন। এলাকায় রাস্তার আলোরও অভাব ছিল এবং সন্ধ্যার পর এলাকাটি সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়।[]

একদল পুরুষ ২৩ শে সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ২ টার দিকে আশ্রমে আসেন এবং নিকটবর্তী গ্রামে কিছু শিশু অসুস্থ বলে দাবি করে সন্ন্যাসীদের অনুরোধ করেন যে তারাতাদের সাথে আসতে। সন্ন্যাসীরা তাদের প্রহরীকে ডেকে আনতে বলেছিলেন, যাদের আশ্রম পাহারা দেওয়ার কথা ছিল। পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা যাজক দহোদ শহরে কিছু কাজে জন্য গিয়েছিলেন। পুরুষরা মূল দরজার বাইরে ভাঁজ-সক্ষম ধাতব গ্রিল ভেঙে যাওয়ার আশ্রমের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে, সন্ন্যাসীরা আধা কিলোমিটার দূরে ঘুমিয়ে থাকা প্রহরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হুইসেল বাজায়। পুরুষরা ধাতব গ্রিল, প্রধান দরজা ভেঙে যেতে সক্ষম হন এবং কক্ষগুলোতে সন্ন্যাসীরা নিজেদেরকে তালাবন্ধ করে রাখে।[] লোকজন পুরো চত্বরে ভাঙচুর করে, নগদ প্রায় ২০,০০০ টাকা সহ স্বর্ণ ও রৌপ্য অলঙ্কার চুরি হয় বলে জানা যায়।[]

যখন হামলাকারীরা চলে যেতে শুরু করে, কিছু লোক পিছনে থেকে যায় এবং অন্যদের বলে যে তারা তাদের সাথে পরে যোগ দেবে এবং তারপর সন্ন্যাসীদের আশ্রমের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশের মতে, চতুর্থ সন্ন্যাসিনী ধর্ষিত হয়নি কারণ তিনি বয়স্ক হয়েছিলেন এবং ধর্ষণ বন্ধ করার চেষ্টার জন্য তাকে মারধর করা হয়েছিল।[][] যদিও নান বলেছিল যে তাদের চারজনই ধর্ষিত হয়েছে।[]

প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরের অভিযোগ করেছে এবং সংগঠনের সচিব বিএল শর্মা দাবি করেছেন যে এই ঘটনাটি "দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক হিন্দু যুবকদের ক্ষোভ" প্রতিফলিত করেছে।[][]

ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র ও বিজেপি টুডে-এর সম্পাদক কাঞ্চন গুপ্ত বলেন, "এটি কেবল একটি ধর্ষণ।"[১০]

বজরং দল সংগঠনের প্রধান, ভিএইচপি-এর উপপ্রধান এবং প্রাক্তন বিজেপি সংসদ সদস্য বৈকুন্ত লাল শর্মা বলেছিলেন যে, সন্ন্যাসীরা "এটা চাইছিল।"[১০]

রাজ্যসভার সাংসদ মেবেল রেবেলো বলেন, এটি সংখ্যালঘু সমস্যা নয় এবং শুধুমাত্র মহিলাদের সমস্যা।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Refugees, United Nations High Commissioner for। "Refworld | Politics by Other Means: Attacks Against Christians in India"Refworld (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  2. "Rediff On The NeT: Syed Firdaus Ashraf reports from the MP village where three nuns were raped last week"m.rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  3. Mahmood, Tahir, 1941- (২০০১)। Minorities Commission : minor role in major affairs (1st সংস্করণ)। Pharos Media & Pub। পৃষ্ঠা 119। আইএসবিএন 81-7221-018-3ওসিএলসি 48508180 
  4. "Madhya Pradesh nuns' rape case: After 21 years, gang-rape accused arrested by police"www.timesnownews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  5. "Catholics protest against gang-rape of nuns"। The Statesman। সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৯৮। 
  6. "Rape Of The Innocents | Outlook India Magazine"outlookindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  7. "Rape Of The Innocents | Outlook India Magazine"www.outlookindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৬ 
  8. "Hindu militants justify attacks on nuns"। Agence France-Presse। সেপ্টেম্বর ২৯, ১৯৯৮। 
  9. Dalits and Human Rights: Dalits: the broken future (ইংরেজি ভাষায়)। Gyan Publishing House। ২০০৫। পৃষ্ঠা 233। আইএসবিএন 978-81-8205-274-1 
  10. "V. ATTACKS ACROSS THE COUNTRY"www.hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫