জ্যাক ইডন

ইংরেজ ক্রিকেটার

জন জ্যাক ইডন (ইংরেজি: Jack Iddon; জন্ম: ৮ জানুয়ারি, ১৯০২ - মৃত্যু: ১৭ এপ্রিল, ১৯৪৬) ল্যাঙ্কাশায়ারের চর্লির কাছাকাছি ক্রসটনের মডেলসি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

জ্যাক ইডন
১৯৩১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাক ইডন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জন ইডন
জন্ম৮ জানুয়ারি, ১৯০২
মডেলসি, ক্রসটন, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৭ এপ্রিল ১৯৪৬(1946-04-17) (বয়স ৪৪)
মেডলে, স্টাফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৭৯)
৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১৫ জুন ১৯৩৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৫০৪
রানের সংখ্যা ১৭০ ২২,৬৮১
ব্যাটিং গড় ২৮.৩৩ ৩৬.৭৬
১০০/৫০ -/২ ৪৬/১১২
সর্বোচ্চ রান ৭৩ ২২২
বল করেছে ৬৬ ৩৮,৬১২
উইকেট - ৫৫১
বোলিং গড় - ২৬.৯০
ইনিংসে ৫ উইকেট - ১৪
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং - ৯/৪২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ২১৮/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৮ এপ্রিল ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন জন ইডন নামে পরিচিত জ্যাক ইডন

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯২৪ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জ্যাক ইডনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারে জ্যাক ইডনের জন্ম। তার পিতা ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে পনেরো বছর পেশাদারী পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। লেল্যান্ড মোটর্সের পক্ষে বেশ ভালো করার পর ১৯২৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ল্যাঙ্কাশায়ারের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। এরপর থেকে যুদ্ধ শুরু হবার পূর্ব-পর্যন্ত পনেরো মৌসুম কাউন্টি দলটির পক্ষে খেলতে থাকেন। এ পর্যায়ে ল্যাঙ্কাশায়ার দলকে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন কাউন্টি হিসেবে দেখেন। সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২২,৬৭৯ রান ও পাঁচ শতাধিক উইকেটের সন্ধান পান।

জ্যাক ইডন ডানহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বলকে প্রচণ্ড জোড়ে আঘাত করতেন। বামহাতে ধীরগতিসম্পন্ন বোলিং আবরণকৃত পিচে বেশ বাঁক খাওয়াতে সক্ষম ছিলেন। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ল্যাঙ্কাশায়ারের স্বর্ণালী সময়ে দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিলেন।

স্বর্ণালী সময়

সম্পাদনা

১৯২৭ সাল বাদে তেরো মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, ১৯৩৪ সালে ২,৩৮১ রান তুলেছিলেন। ১৯২৭ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সারের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। এর দুই বছর পর লিভারপুলে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২২২ রানের ইনিংস খেলেন।

১৯৩২ সালে বল হাতে বেশ সফল ছিলেন। ৮০ উইকেট পান তিনি। শেষের বছরগুলোয় তার বোলিং দূর্বলতর হতে থাকে ও বেশ রান খরচ করতে থাকেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৩৭ সালে গোলাপের খেলায় ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৯/৪২ গড়েন। ইয়র্কশায়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে এ সাফল্য পান। এরফলে, পাঁচ বছর পর তাদের চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলকে পরাজিত করতে সবিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তবে, ঐ মৌসুমে সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে তিনি মাত্র ২৮ উইকেট লাভ করেছিলেন। ১৯৩৬ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত হন। £১,২৬৬ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জ্যাক ইডন। ৮ জানুয়ারি, ১৯৩৫ তারিখে ব্রিজটাউনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৫ জুন, ১৯৩৫ তারিখে নটিংহামে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। এ সফরে তিনি অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হন। চার টেস্টের সবকটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এরপর, ১৯৩৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আর একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং গড়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। তবে, কোন ইনিংসেই সাত নম্বর অবস্থানের ঊর্ধ্বে তাকে খেলানো হয়নি। দলে জর্জ পেইনএরিক হোলিসের ন্যায় সেরা বোলারদের অংশগ্রহণ ছিল। ফলে, তিনি মাত্র সাত ওভার বোলিং করার সুযোগ পান।

১৯৩৫ সালে সিরিজের প্রথম টেস্টে আবারও তিনি সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। ২৯ রান তুলেন ও চার ওভার বোলিং করে তিন রান দেন। এরপর আর তাকে টেস্ট দলে খেলার জন্যে দল নির্বাচকমণ্ডলী আমন্ত্রণ জানায়নি।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপে প্রথম-শ্রেণীবিহীন কয়েকটি খেলার আয়োজন করা হয়। তিনি ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলেন। তবে, ১৯৪৬ সালে পুরোদমে ক্রিকেট চালু হলে তিনি আর খেলায় অংশ নেননি। তাসত্ত্বেও, কাউন্টি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে মাঝেমধ্যে শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে খেলতেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতেন।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

১৯২৯ সাল থেকে মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত ম্যানচেস্টারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ম্যানচেস্টারে কারিগরী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই শিশু রেখে যান।

১৭ এপ্রিল, ১৯৪৬ তারিখে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে স্টাফোর্ডশায়ারের মেডলে এলাকায় জ্যাক ইডনের জীবনাবসান ঘটে। ১৯৪৬ মৌসুম শুরুর পূর্বে ক্রিউ থেকে রোলস-রয়েসে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় নিপতিত হন ও নিহত হন তিনি।[] দ্বিতীয় ল্যাঙ্কাশায়ারীয় ক্রিকেটার হিসেবে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। এরপূর্বে, ১৯৩৭ সালে ম্যানচেস্টার-চর্লি রোডে সড়ক দূর্ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া ও ল্যাঙ্কাশায়ারীয় ফাস্ট বোলার ই. এ. ম্যাকডোনাল্ড মোটরগাড়ী দূর্ঘটনায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন ও পরবর্তীতে নিহত হন। স্টাফোর্ড অ্যাসিজেস কর্তৃপক্ষ সর্বমোট £৯,৮০১ পাউন্ড-স্টার্লিং ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Biography Retrieved 28 October 2011

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা