জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন সংক্ষেপে জে সি গালস্টাউন (ইংরেজি: Johannes Carapiet Galstaun) (১৮৫৯ – ১৯৪৭ )[] ছিলেন আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার কিংবদন্তি, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ (ঘোড়দৌড়ের কিংবদন্তি জকি), কলকাতার সর্বকালের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট পুঁজিপতি- বিকাশকারী, জনহিতৈষী এবং সমাজকর্মী। [] ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতায় বিশালাকার নান্দনিক ইমারত নির্মাণে তার বিশেষ অবদান ছিল।

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন
Johannes Carapiet Galstaun
105×150
জে সি গালস্টাউন
জন্ম১৮৫৯
জুলফা ইরান
মৃত্যু১৯৪৭
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পেশাব্যবসায়ী

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউনের জন্ম ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইরানের জুলফা শহরে এক আর্মেনিয় পরিবারে। কলকাতায় তার কাকার ছিল বিশাল ব্যবসা। বাল্যকালেই তিনি তার কাকার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় তিনি আর্মেনিয় ফিলান্থোফিক একাডেমিতে (পরবর্তীতে আর্মেনিয়ান কলেজ) ভর্তি হন এবং উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে পড়াশোনা শেষ করেন।[] তারপর ধীরে ধীরে জোহানেস ক্যারাপিট তার উদ্যোগী প্রয়াস, বুদ্ধিমত্তা আর অধ্যাবসায়ের জেরে প্রভূত অর্থ ও ভূসম্পত্তির অধিকারী হন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন রিয়েল এস্টেটের পুঁজিপতিতে পরিণত হন। জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন কলকাতায় বেশ কয়েকটি বিশাল ও সুদৃশ্য অট্টালিকা তৈরি করেছিলেন যা মূলত ইউরোপীয়দের বসবাস ও ব্যবহারের জন্য।

 
জে সি গালস্টাউনের তৈরি কুইন্স ম্যানসন, পূর্বের গালস্টাউন ম্যানসন

রাসেল স্ট্রিট ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলের বিলাসবহুল কুইন্স ম্যানসন (পূর্বের নাম গালস্টাউন ম্যানসন) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকায় নির্মাণ করেছিলেন। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শনে তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ক্যামাক স্ট্রিট ও এ জে সি বোস রোডের সংযোগস্থলের কাছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মহিমান্বিত প্রাসাদ - গালস্টাউন পার্ক (বর্তমানের নিজাম প্যালেস নির্মাণ করেন। ১৯২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ১ নম্বর বিশপ লেফ্রয় রোডের ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ব্রিটিশ সৈন্যদের আবাসের জন্য নির্মাণ করেন। স্বাধীনতার পর ভবনটি সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবসা-বাণিজ্যের অফিস, টাটা গোষ্ঠীর চা কোম্পানির রেজিস্টার্ড হিসাবেও ব্যবহৃত হয়েছে। []

স্যাটারডে ক্লাব, হো-চি-মিন সরণির হ্যারিংটন ম্যানশন, ডালহৌসি ইনস্টিটিউট, রাসেল স্ট্রিটে রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব বিল্ডিংসহ সর্বসাকুল্যে ৩৫০ টিরও বেশি প্রাসাদ ও ভবনের মালিকানা ছিল তার।[] তার নির্মিত ভবন ও প্রাসাদগুলি কলকাতা শহরের দৃশ্যপট নির্মাণে ও স্থাপত্যের নান্দনিক নিদর্শন হয়ে আজ কলকাতার হেরিটেজ ভবন হিসাবে মর্যাদা লাভ করেছে। রিয়েল এস্টেটের তার ব্যবসায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আর একজন আর্মেনিয়ান হোটেল ব্যবসায়ী, স্টিফেন কোর্টের নির্মাতা আরাথুন স্টিফেন। []

জোহানেস ক্যারাপিট কলকাতার রেসকোর্সের জকি তথা ঘোড়দৌড়ের উৎসাহী হিসাবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। কলকাতার ঘোড়া দৌড়ের মাঠে জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন ছিলেন অন্যতম জকি। নিজস্ব আস্তাবলের ১০০ টি ঘোড়ার মালিক তিনি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা রেসকোর্সে প্রিন্স অফ ওয়েলস কাপের বিজয়ী "গেটওয়ে গেট" প্রাপ্ত হন। [] ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ডেভিড ম্যাকমিলান অ্যান্ড কোম্পানি জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন রচিত রেসিং রেমিনিসেন্স শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে। []

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন একজন জনহিতৈষী ছিলেন। সেন্ট জোসেফ'স হাসপাতালের জন্য আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। [] তিনি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল" স্মৃতিসৌধ নির্মাণে কুড়ি হাজার টাকা দান করেন এবং ভবনের সদস্যও হন।

রিয়েল এস্টেটের মালিক গালস্টাউন প্রভূত যশ ও অর্থ অর্জন করেও দুর্ভাগ্যবশত রেসকোর্সের মাঠের জুয়ার কারণে শেষে ঋণগ্রস্ত হন। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন 'গালস্টাউন পার্ক' বিক্রি করতে হয় হায়দ্রাবাদের সপ্তম নিজাম উসমান আলি খানকে

জীবনাবসান

সম্পাদনা

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টাউন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Tat Tea shrinks in city,exits heritage HQ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯ 
  2. "The Armenian racing and real-estate king of colonial Calcutta"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯ 
  3. "In Calcutta, Armenians have been reduced from prominence to obscurity"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯ 
  4. Galstaun, J C। Racing Reminiscences। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯