জেমস ওয়াইজ
জেমস ওয়াইজ (James Fawns Norton Wise) উনিশ শতকের ষাটের দশকের একজন চিকিৎসাবিদ ও লেখক যিনি ব্রিটিশ শাসনাধিন ঢাকার সিভিল সার্জন ছিলেন।[১] পেশাজীবনে চিকিৎসক হলেও ঐতিহাসিক ঢাকা বিষয়ে লেখালেখির জন্য তিনি বেশি পরিচিত। তিনি ১৮৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৮৬ সালে মারা যান।
জেমস ওয়াইজ | |
---|---|
জন্ম | জেমস ফওনস নর্টন ওয়াইজ ১৮৩৫ ড্যন্ডি, স্কটল্যান্ড |
মৃত্যু | ১৮৮৬ লন্ডন, ইংল্যান্ড |
সমাধিস্থল | ওয়েস্ট নরউড সিমেট্রি, লন্ডন |
পেশা | |
জাতীয়তা | স্কটিশ |
ধরন | |
বিষয় | উনবিংশ শতাব্দীর ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | নোটস অন রেসেস, কাস্টস অ্যান্ড ট্রেডস অব ইস্টার্ণ বেঙ্গল, |
দাম্পত্যসঙ্গী | আগ্নেস ফউলিস লো |
আত্মীয় | জোসিয়া প্যাট্যিক ওয়াইজ,(চাচা) থমাস আলেক্সজান্ডার ওয়াইজ,(বাবা) |
বৃত্তান্ত
সম্পাদনাউনিশ শতকে ঢাকা শহরের বিখ্যাত ওয়াইজ পরিবারের তিনি সন্তান। তার বাবা থমাস আলেক্সান্ডার ওয়াইজ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার চুঁচুড়ার নিকটে অবস্থিত হাজী মহসিন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রিন্সিপাল । ঢাকা কলেজেরও তিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন। অপরদিকে চাচা জোসিয়া প্যাট্রিক ওয়াইজ ছিলেন ঢাকার সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী নীলকর[২] যার নামে বুড়িগঙ্গা নদী তীরের ওয়াইজ ঘাটের নাম করা হয়েছিল। ১৮৫১ সাল থেকে ঢাকায় অবস্থান করেন। ১৮৬৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ঢাকার সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[৩] পুরাতন ঢাকার আর্মেনিয়ান জমিদার নিকোলাস পোগোজের কাছ থেকে তিনি ভবন ক্রয় করে ওয়াইজ হাউজ নাম দেন এবং চাকুরীকালীন সময়ে এখানেই বসবাস করেন। ওয়াইজের এ ভবন থেকেই বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর যাত্রা শুরু। ডা. ওয়াইজের পুরো নাম ছিল জেমস ফওনস নর্টন ওয়াইজ। তাঁর রচিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধে তিনি শুধু নামের প্রথম ও শেষাংশ ব্যবহার করেছেন। অবসর জীবনে তিনি পুনরায় লন্ডনে ফিরে যান।
অবদান
সম্পাদনাওয়াইজ রচিত গ্রন্থের নাম নোটস অন রেসেস, কাস্টস অ্যান্ড ট্রেডস অব ইস্টার্ণ বেঙ্গল। লন্ডনে অবসর জীবন যাপন কালে পান্ডুলিপি রচনা করে তিনি তা মুদ্রণ করেন। ১৮৮৩ সালে লন্ডনের সেন্ট মার্টিনস লেনের ‘হার ম্যাজেস্টিস প্রিন্টার হ্যারিসন অ্যান্ড সন্স’ থেকে এটি মুদ্রিত হয়।[৪] পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও পেশার বিবরণ নামে এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ব্লকম্যানের কন্ট্রিবিউশনস টু দি জিওগ্রাফি অ্যান্ড হিস্ট্রি অব বেঙ্গল-র জন্য তিনি বেশ কয়েকটি শিলালিপির ছাপ পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া নোটস অন সোনারগাঁও এবং নোটস অন বারো ভূঁইয়াস নামে ডা. ওয়াইজের দুটি প্রবন্ধ জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এ ১৮৭৪ সালে ছাপা হয়।
ওয়াইজের বইটি মুদ্রিত হয়েছে একশ বছরেরও আগে। ওয়াইজের রচনা সমসাময়িক তো বটেই, পরবর্তীকালেও অনেক নৃতাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী বা ঐতিহাসিককে প্রভাবিত করেছে। ওয়াইজকে বাংলাদেশের নৃতত্ত্বচর্চার পথিকৃৎ বলা যেতে পারে। পূর্ববঙ্গের মানুষের পেশার যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা গুরুত্বপূর্ণ।[১] তাঁর বিবরণে বাংলার সামাজিক ইতিহাস লেখার গুরুত্বপূর্ণ রূপরেখা পাওয়া যায়।
প্রকাশনা
সম্পাদনাবই
- নোটস অন রেসেস, কাস্টস অ্যান্ড ট্রেডস অব ইস্টার্ণ বেঙ্গল (হ্যারিসন অ্যান্ড সন্স, ১৮৮৩)
মুহামেডান’, ‘রিলিজিয়াস সেক্টস অব দি হিন্দুজ’, ‘হিন্দু কাস্টস অ্যান্ড অ্যাবরিজিনাল রেসেস’, ‘আর্মেনিয়ানস’ ও ‘পর্তুগিজ ইন ইস্টার্ণ বেঙ্গল’ এ পাঁচ ভাগে গ্রন্থটি বিভক্ত। আর্মেনীয় ও পর্তুগিজগণ কীভাবে বাংলায় এলো এবং বাংলায় তারা কীভাবে বসবাস করেছে তাও তাঁর গ্রন্থে সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে।
গবেষণাপত্র
- নোটস অন সোনারগাঁও (এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ১৮৭৪)
- নোটস অন বারো ভূঁইয়াস (এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ১৮৭৪)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ মুনতাসীর মামুন (২০১২)। "ওয়াইজ, জেমস"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Hunter, W.W. (1875) A Statistical Account of Bengal, Volume-5, trubner and co, London.
- ↑ promotions and appoinments, The United Service Magazine, Volume 125, Part-1 P-470 (ইংরেজি ভাষায়)। Hurst and Blackett Publishers। ১৮৭১।
- ↑ Wise, James (১৮৮৩)। Notes on the Races, Castes and Trades of Eastern Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Hurst and Sons।