জিহ্বা
জিহ্বা হলো অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীর মুখের একটি পেশীবহুল অঙ্গ; যা খাদ্য চিবুতে এবং তা গিলে ফেলতে সহায়তা করে। পরিপাকতন্ত্রে এর গুরুত্ব আছে এবং এটি হলো স্বাদের প্রাথমিক অঙ্গ। জিহ্বার উপরের পৃষ্ঠ (ডরসাম), প্যাপিলাইতে অবস্থিত অসংখ্য স্বাদকুঁড়ি দ্বারা আবৃত। এগুলো খাদ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল এবং লালার মাধ্যমে আর্দ্র থাকে। জিহ্বা প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। জিহ্বার প্রধান কাজ হলো, স্বাদের অনুভূতি গ্ৰহণ, মানুষের ক্ষেত্রে কথা বলায় সাহায্য করা এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর সক্রিয় করা।[২]
জিহ্বা | |
---|---|
বিস্তারিত | |
পূর্বভ্রূণ | pharyngeal arches, lateral lingual swelling, tuberculum impar[১] |
তন্ত্র | পরিপাকতন্ত্র, স্বাদগ্রহণ সিস্টেম |
ধমনী | লিঙ্গুয়াল, টনসিলার ব্রাঞ্চ, ascending pharyngeal |
শিরা | lingual |
স্নায়ু | সংজ্ঞাবহ Anterior two-thirds: Lingual (sensation) and chorda tympani (taste) Posterior one-third: গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল (IX) আজ্ঞাবহ হাইপোগ্লসাল (XII), except palatoglossus muscle supplied by the pharyngeal plexus via ভেগাস (X) |
লসিকা | Deep cervical, submandibular, submental |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | lingua |
মে-এসএইচ | D014059 |
টিএ৯৮ | A05.1.04.001 |
টিএ২ | 2820 |
এফএমএ | FMA:54640 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
মানুষের জিহ্বার গঠন
সম্পাদনাজিহ্বা একটি পেশীবহুল হাইড্রোস্ট্যাট যা মৌখিক গহ্বরের মেঝের অংশ গঠন করে। জিহ্বার বাম ও ডান দিক ফাইব্রোস টিস্যুর একটি উল্লম্ব অংশ দ্বারা পৃথককৃত যা লিংগুয়াল সেপ্টাম নামে পরিচিত। এই বিভাজন জিহ্বার দৈর্ঘ্য বরাবর ফ্যারিঙ্গিয়াল অংশের পিছনের দিকে রক্ষিত হয় এবং মাঝারি সালকাস নামে একটি খাঁজ হিসেবে দৃশ্যমান হয়। মানব জিহ্বা টার্মিনাল সালকাস দ্বারা পূর্ববর্তী এবং পশ্চাদগামী অংশে বিভক্ত যা একটি V-আকৃতির খাঁজ। টার্মিনাল সালকাসের শীর্ষে একটি ব্লাইন্ড ফোরমেন, ফোরমেন সেকাম অবস্থিত যা প্রাথমিক ভ্রূণ উন্নয়নে মাঝারি থাইরয়েড ডাইভারটিকুলামের অবশিষ্টাংশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। পূর্ববর্তী মৌখিক অংশ টি দৃশ্যমান অংশ যা সামনে অবস্থিত এবং জিহ্বার দৈর্ঘ্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ গঠন করে। পিছনের ফ্যারিঙ্গিয়াল অংশ টি গলার কাছাকাছি অংশ এবং জিহ্বার দৈর্ঘ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই অংশগুলি তাদের ভ্রূণগত বিকাশ এবং স্নায়ু সরবরাহের দিক থেকে ভিন্ন।
কিভাবে আমরা স্বাদ গ্রহণ করি
সম্পাদনাআমাদের মুখগহ্বরে পেশীবহুল এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লীর আবরণ (mucous membrane) দ্বারা আবৃত একটি জিহ্বা বা জিভ (Tongue) থাকে। জিহ্বা বা জিভই আমাদের স্বাদেন্দ্রিয়। জিহ্বার উপরে ছোট ছোট অনেকগুলি গুটিকা (Papilla) থাকে। এই গুটিকার মধ্যে ৮ - ১০টি করে স্বাদকোরক (Taste buds) নামে গ্রাহককোষ দেখা যায়। এদের সাহায্যেই আমরা নানাপ্রকার স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। আমাদের জিহ্বায় প্রায় ১০,০০০ স্বাদকোরক থাকে। অগ্রভাগে অবস্থিত স্বাদকোরক গুলির সাহায্যে মিষ্ট (Sweet) বা মধুর স্বাদ গ্রহণ করা যায়। এদের একটু ওপরে দুপাশে এই রকম লবণাক্ত বা নোনতা (Salty) এবং তারও এক-একটি উপরে অম্ল (Sour) স্বাদগ্রাহক কোরক- গুলির অবস্থান। আর জিহ্বার পশ্চাদভাগে গুটিকায় ১০০ - ২০০ v-এর আকারে সাজানো কোরকগুলির সাহায্যে আমরা তিক্ত বা তেতো (Bitter) স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। লালরসে মিশ্রিত খাদ্যবস্তু স্বাদকোরককে উদ্দীপিত করে তার অনুভূতি সেনসারি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। তখন আমরা বস্তুর স্বাদ বুঝতে পারি।[৩]
অন্যান্য প্রাণীদেহে গঠন
সম্পাদনাউভচর প্রাণীদের ক্ষেত্রে জিহ্বার পেশীগুলো অসিপিটাল সোমাইট থেকে বিকশিত হয়। বেশিরভাগ উভচর প্রাণীর মধ্যে মেটামরফোসিস প্রক্রিয়ার পর একটি সুগঠিত জিহ্বা পরিলক্ষিত হয়।[৪] ফলস্বরূপ অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী- উভচর, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীরই জিহ্বা আছে। স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন কুকুর ও বিড়াল, শরীর ও লোম পরিষ্কারের কাজে জিহ্বা ব্যবহার করে থাকে। এই প্রজাতির প্রাণীদের জিহ্বার গড়ন খুবই রুক্ষ। কতিপয় কুকুরের মাঝে তাদের পায়ের একটি অংশ ধারাবাহিকভাবে চাটার প্রবণতা আছে যা কখনো লিক গ্রানুলোমা নামক চর্মরোগের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া কুকুরের জিহ্বা তাপ নিয়ন্ত্রক হিসেবেও কাজ করে। কুকুর যত শারীরিক কসরত করে, উচ্চ রক্তপ্রবাহের কারণে সেটির জিহ্বা আকারে ততই বড় হয়। এক্ষেত্রে কুকুরের জিহ্বা, মুখ থেকে বাইরের দিকে ঝুলে থাকে এবং জিহ্বার আর্দ্রতা রক্তপ্রবাহ ঠান্ডা করতে কাজ করে।
কিছু কিছু প্রাণীর জিহ্বা এমন যে তা বিশেষভাবে শিকার ধরার কাজেই ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গিরগিটি, ব্যাঙ, বনরুইয়ের জিহ্বা।
অন্যান্য প্রাণীতে জিহ্বার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অঙ্গ দেখা যায়, যেমন: প্রজাপতির প্রোবোসিস বা মলাস্কা শ্রেণির প্রাণীদের রেডুলা। কিন্তু এগুলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান জিহ্বার সমতুল্য নয় এবং জিহ্বার গঠনপ্রণালীর সাথেও এসব অঙ্গের খুব সামান্য সাদৃশ্য আছে। যেমন: প্রজাপতি তাদের প্রোবোসিস দিয়ে চাটে না; বরং তারা এর মাধ্যমে চোষনকাজ সম্পন্ন করে এবং প্রোবোসিস একক কোনো অঙ্গ নয় বরং এটি হলো টিউব বা নলাকৃতির একটি অঙ্গ যা দুটি চোয়ালের সমন্বয়ে গঠিত। অনেক প্রজাতির মাছের মুখের গোড়ায় ছোট ভাঁজ আছে যাকে জিহ্বা বলা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ টেমপ্লেট:EmbryologyUNC
- ↑ Maton, Anthea; Hopkins, Jean; McLaughlin, Charles William; Johnson, Susan; Warner, Maryanna Quon; LaHart, David; Wright, Jill D. (১৯৯৩)। Human Biology and Health । Englewood Cliffs, New Jersey, USA: Prentice Hall। আইএসবিএন 0-13-981176-1।
- ↑ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, দ্বিতীয় খণ্ড: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর ১৯৮৬ পৃঃ ২৭
- ↑ Iwasaki, Shin-ichi (জুলাই ২০০২)। "Evolution of the structure and function of the vertebrate tongue"। Journal of Anatomy। 201 (1): 1–13। আইএসএসএন 0021-8782। ডিওআই:10.1046/j.1469-7580.2002.00073.x। পিএমআইডি 12171472। পিএমসি 1570891 ।