জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর (বাংলাদেশ)
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর ১৯৬৫ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় আসে। এই জাদুঘরটি বাংলাদেশের একমাত্র বিজ্ঞান জাদুঘর এবং জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
স্থাপিত | ২৬ এপ্রিল ১৯৬৫ |
---|---|
অবস্থান | শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪৬′৪৪″ উত্তর ৯০°২২′১৮″ পূর্ব / ২৩.৭৭৮৮° উত্তর ৯০.৩৭১৬° পূর্ব |
ধরন | বিজ্ঞান জাদুঘর |
পরিদর্শক | মাসে ৪,০০০ |
পরিচালক | মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী (মহাপরিচালক) [১] |
তত্ত্বাবধায়ক | সুকল্যাণ বাছাড় (সিনিয়র কিউরেটর) |
মালিক | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় |
ওয়েবসাইট | nmst |
ইতিহাস
সম্পাদনা২৬ এপ্রিল, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকারের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর আত্মপ্রকাশ করে।[২] প্রতিষ্ঠার বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এটি ঢাকা গণগ্রন্থাগার ভবনে কাজ শুরু করে। ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে এটিকে ঢাকার চামেলীবাগে স্থানান্তর করা হয় ও পরের বছরের মে মাসে এটিকে ধানমন্ডির ১নং সড়কে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭২ সালে এটিকে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৯ সালে এ জাদুঘরকে ধানমন্ডির ৬নং সড়কে নেয়া হয় ও পরের বছর পুনরায় কাকরাইল মসজিদের সামনের একটি স্থানে স্থানান্তর করা হয়। জাদুঘরের একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ঢাকার আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগরে ৫ একরের এক খণ্ড জমি বরাদ্দ করে এবং সেখানে ১৯৮৭ সালে এর নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়।
ভবন প্রাঙ্গণ
সম্পাদনাজাদুঘর প্রাঙ্গণ ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। ভবনের ১ম ও ২য় তলায় প্রদর্শশালা, ৩য় তলায় অফিস এবং ৪র্থ তলায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি অবস্থিত। প্রদর্শশালা ছাড়া এখানে একটি গ্রন্থাগার, কর্মশালা ও মিলনায়তন রয়েছে। ভবন প্রাঙ্গণে একটি ডাইনোসরের মূর্তি এবং একটি ছোট যুদ্ধ বিমান রয়েছে।
প্রদর্শশালা (গ্যালারি)
সম্পাদনাজাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে ৮টি গ্যালারি রয়েছে। এগুলি হলো:[২]
- ভৌত বিজ্ঞান প্রদর্শশালা
- শিল্প প্রযুক্তি প্রদর্শশালা
- জীব বিজ্ঞান প্রদর্শশালা
- তথ্য প্রযুক্তি প্রদর্শশালা
- মজার বিজ্ঞান প্রদর্শশালা ১
- মজার বিজ্ঞান প্রদর্শশালা ২
- মহাকাশ বিজ্ঞান প্রদর্শশালা
- ইনোভেশন গ্যালারি (প্রদর্শশালা)/তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত প্রকল্পের গ্যালারি (প্রদর্শশালা)
কার্যক্রম
সম্পাদনাপ্রদর্শশালা পরিদর্শন
সম্পাদনাশনিবার থেকে বুধবার, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা প্রদর্শশালা পরিদর্শন করা যায়। বিজ্ঞান জাদুঘর প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।
পাঠাগার
সম্পাদনাসর্বশেষ আনুষ্ঠানিক তথ্য মতে, জাদুঘরের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পূর্ব কোণে স্থাপিত পাঠাগারটিতে ৬ হাজার বই, সাময়িকী ও অন্যান্য প্রকাশনা রয়েছে। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার, সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পাঠাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।[৩]
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনানিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য মিউজ়ু বাস[৪], চতুর্মাত্রিক মুভি বাস ও অবজ়ারভেটরি ভ্যান (মানমন্দির ভ্যান)[৫] যুক্ত করা হচ্ছে জাদুঘরের নিয়মিত কার্যক্রমে।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সম্পাদনা- জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞান অনুরাগ ও বিজ্ঞান সচেতনতা সৃষ্টি করা;
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করা;
- জাদুঘরে স্থায়ী বিজ্ঞান প্রদর্শনী স্থাপন করা;
- বিজ্ঞান মেলা, বিজ্ঞান প্রদর্শনী এবং বিজ্ঞান বিষয়ক নানাবিধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা;
- ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা;
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশনার ব্যবস্থা করা;
- বক্তৃতামালা, সেমিনার ও সম্মেলনের ব্যবস্থা করা;
- জাদুঘরের উন্নয়নে প্রদর্শনীবস্ত্তসমূহের সাহায্যে *গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করা;
- প্লানেটরিয়াম স্থাপনসহ মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা করা;
- স্কুল ও কলেজসমূহের বিজ্ঞান শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে শিক্ষামূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা;
- বিজ্ঞান শিক্ষার যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা;
- নবীন ও শৌখিন বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনমূলক কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করা;
- দেশের বিজ্ঞান ক্লাবগুলোকে সাহায্য, সহযোগিতা ও উৎসাহ দান এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে
সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিজ্ঞান আন্দোলনকে জোরদার করা;
- বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ইতিহাস তুলে ধরা;
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রাচীন ও আধুনিক *নিদর্শনাবলী সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রায়োগিক ব্যবস্থা করা;
- মানব জাতির কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদানের ও বিজ্ঞানীদের কীর্তিসমূহের ভূমিকা সঠিকভাবে উপলব্ধিতে জনসাধারণকে সাহায্য করা।
প্রকাশনা
সম্পাদনা- নবীন বিজ্ঞানী
- উদ্ভাবন
- লুব্ধক
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ
সম্পাদনা১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান মেলা আঞ্চলিক পর্যায় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়।[৬]
আইএসও সনদ অর্জন
সম্পাদনাযাদুঘরটি ২০২২ সালের ২৬ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে আইএসও সনদ অর্জন করে। অফিস ব্যবস্থাপনায় উৎকর্ষ, দর্শক সেবায় সাফল্য, দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান অনুরাগ সৃষ্টি এবং তরুণদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা সৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জনের জন্য এই সনদ অর্জন করে বিজ্ঞান জাদুঘর। দেশে কোনও সরকারি দফতর হিসেবে বিজ্ঞান জাদুঘরই প্রথম আইএসও সনদ পেয়েছে।[৭]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
ডাইনোসরের মূর্তি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
-
ডাইনোসরের মূর্তি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ "আমাদের কথা"। nmst.gov.bd। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ http://www.nmst.gov.bd/sites/default/files/files/nmst.portal.gov.bd/page/d3b9cfac_dd9f_4e38_9c0d_71704a415433/library%20information.pdf
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২০।
- ↑ "বিজ্ঞান জাদুঘরে আসছে অত্যাধুনিক মুভি বাস"। দৈনিক প্রথম আলো। ২২ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২০।
- ↑ "জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্যাপন সংক্রান্ত নিয়মাবলী"। nmst.gov.bd। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "আইএসও সনদ পেলো বিজ্ঞান জাদুঘর, বাংলা ট্রিবিউন, ২৬ মে ২০২২"। ২৬ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২২।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলাপিডিয়ায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর আইন, ২০১০
- জাদুঘরের পাঠাগারের গ্রন্থপঞ্জি [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুন ২০২০ তারিখে
- জাদুঘরের ফেসবুক পেইজ [২]