জয়বন্ত দলবি
জয়বন্ত দলবি (১৪ অগস্ট ১৯২৫ - ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪) ছিলেন ভারত রাষ্ট্রের মহারাষ্ট্র রাজ্যের একজন বিশিষ্ট মারাঠি লেখক; তিনি মহারাষ্ট্রের অরাওয়ালির (জেলা সিন্ধুদুর্গ, বেঙ্গুরলে তালুক) আদি বাসিন্দা।
তিনি মারাঠি ভাষার সংবাদপত্র প্রভাত এবং লোকমান্য এই দুয়ের সহ সম্পাদক পদে কাজ করতেন, এবং পরবর্তীকালে ইউএসআইএস সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। ইউএসআইএস সংস্থার কাজের অংশ হিসেবে সহজে পাওয়া যায় এরকম অন্যান্য ভাষায় ভালো ইংরেজি সাহিত্য রচনার জন্যে জয়বন্ত দলবি পাঠ্য বিষয় এবং সক্ষম অনুবাদকদের মনোনীত করতেন এবং সেই সমস্ত কাজে তিনি নিজেও সহযোগিতা করতেন। গল্প, নাটক ও উপন্যাস লেখার কাজে মনোযোগ দেওয়ার জন্যে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি তাঁর নাটকগুলোর জন্যে খুবই স্মরণীয় হয়ে আছেন, এবং এক রসাত্মক কলামে বিভিন্ন মারাঠি সাহিত্যিক ব্যক্তিগণ সম্পর্কে লিখতেন, তাঁর লেখা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল; যেগুলো তিনি ঠনঠনপাল ছদ্মনামে লিখতেন। জয়বন্ত দলবির সঙ্গে প্রখ্যাত মারাঠি সাহিত্যিক দম্পতি পু লা দেশপান্ডে এবং সুনীতা দেশপান্ডে এঁদের মধ্যে একটা খুব ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বর্তমান ছিল।
রচনাসমূহ
সম্পাদনাজয়বন্ত দলবি মারাঠি এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যে সাহিত্য রচনা, নাটক এবং চিত্রনাট্য[১] লিখেছিলেন। প্রখ্যাত ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনকারী বসন্ত সরবতে কখনো কখনো জয়বন্ত দলবির বিদ্রূপাত্মক লেখাগুলোর মধ্যে ব্যঙ্গধর্মী চিত্র দিয়ে সাজাতেন।
পুস্তকসমূহ
সম্পাদনা- স্পর্শ (কথাসংগ্রহ)
- কাওয়াদাসে
- প্রদাকৃষ্ণা
- মহানন্দা
- অভিনেতা
- আত্মচরিতা-আইওয়াজি
- অলানে ফলানে
- অধান্তরি [২]
- আন্ধারাচ্যা পারাম্ব্য
- চক্র
- ঘর কৌলারু
- সোহালা
- উইরাঙ্গুলা
- নিওয়াদাক ঠনঠনপাল
- সায়ঙ্কালচ্য সাবল্য
- উতারওয়াত
- লোক আনি লৌকিক
- বাজার
- ধর্মানন্দ
- পরম-মিত্র
- অপূর্ণাঙ্ক
- আলবাম
- বাকি শিল্লাক
- মাওয়ানি সৌভদ্র
- ডন কাদম্বর্য: সাবল্য আনি প্রবাহ
- সারে প্রবাসী ঘাদিচে
- স্বাগত
- বেস্ট অফ জয়বন্ত দলবি[৩] ('সুভাষ ভেন্দে' দ্বারা সংকলিত দলবির নিজের পছন্দের কাজ )
- জয়বন্ত দলবির মূল মারাঠি ভাষায় লিখিত আত্মজীবনী থেকে প্রভাকর লাড দ্বারা লিভস অফ লাইফ' শিরোনামে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বই।
নাটকসমূহ
সম্পাদনা- পুরুষ
- পুরুষের উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে এক নারীর বিজয় কাহিনি সম্পর্কে এই নাটক। নাটকটা সেই সময় উচ্চহারে সাফল্য পেয়েছিল, নানা পাটেকর এবং রীমা লাগু প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছিলেন। নানা পাটেকর এই নাটকে ষোলো শো (১৬০০) সংখ্যারও বেশি অভিনয় প্রদর্শন করেছিলেন। পুরুষ নাটকের হিন্দি রূপান্তরের পরিচালনা করেছিলেন বিজয় মেহতা। অল্প দিন যাবৎ নানা পাটেকর হিন্দি রূপান্তরেও (আয়েশা জুলকার সঙ্গে) অভিনয় করেছেন। পরবর্তীকালে নানা পাটেকরের বিকল্প হিসেবে আশুতোষ রানা তাঁর পরিবর্তে অভিনয় করেছিলেন।
- নাটি-গতি
- এই নাটকের বিষয় ছিল এক মধ্য বর্গীয় দম্পতির তাঁদের মানসিক প্রতিবন্ধী পুত্র সন্তানকে ঘিরে জীবনের বিভিন্ন চাহিদা অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়ার যুদ্ধ। দিলীপ প্রভাবলকর এই নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে নাট্যদর্পণ পুরস্কার লাভ করেন। অশোক শর্মা এই নাটকের হিন্দি রূপান্তর 'রিস্তে-নাতে' নাম দিয়ে প্রস্তুত করেন।
- সন্ধ্যা ছায়া[৪]
- এই নাটকের মূল উপজীব্য বিষয় হল ভারতে বর্তমান কালে বয়স্ক ব্যক্তিদের নানা সমস্যা।
- সূর্যাস্ত
- নীলু ফুলে এই নাটকের এক প্রধান চরিত্র হিসেবে একজন মোহমুক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।
- ব্যারিস্টার
- এই নাটকে বিশ শতকের প্রথম পঁচিশ বছরে মারাঠি ব্রাহ্মণ সমাজের ঐতিহ্যগত এবং পরিবর্তনবাদী বর্গের মধ্যে সংঘর্ষের এক ছবি ফুটে ওঠে। এই নাটকটা জয়বন্ত দলবির নিজস্ব উপন্যাস অন্ধারচ্যা পারাম্ব্য থেকে নেওয়া হয়েছে।[৫]
- সভ্য গ্রুহাস্তাহো
- মহাসাগর
- পরায়া
চলচ্চিত্রসমূহ
সম্পাদনা- চক্র (১৯৮১)
- এই চলচ্চিত্রের পটভূমি একজন ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা এবং ছোটো ছোটো ভালো লাগা খোঁজার কাহিনি নিয়ে গঠিত। এই 'চক্র' চলচ্চিত্রের দুই মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্মিতা পাতিল এবং নাসিরুদ্দিন শাহ।
- রাও সাহেব (১৯৮৫)
- জয়বন্ত দলবি এই চলচ্চিত্রের পটভূমি তাঁর নিজের লেখা নাটক ব্যারিস্টার থেকে গ্রহণ করেছেন। বিজয় মেহতা এই চলচ্চিত্রের পরিচালক, এই চলচ্চিত্রের প্রধান দুই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অনুপম খের এবং বিজয় মেহতা।
- উত্তরায়ন (২০০৫)
- জয়বন্ত দলবির লেখা দুর্গি নাটকের ওপর ভিত্তি করে এই চলচ্চিত্রের পটভূমি তৈরি করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের উপজীব্য হল বর্তমানে ষাটের কোঠায় পৌঁছানো এক দম্পতি, যারা তাঁদের প্রারম্ভিক বিবাহিত জীবন থেকে পরস্পর মানসিকভাবে বোঝাপড়ায় একরকম দূরত্বে অবস্থান করে, এবং সাম্প্রতিককালে তাঁদের বিবাহের মধ্যে সুখ অন্বেষণ করছেন। চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক এবং চিত্রনাট্য রচনাকারী ছিলেন বিপিন নাদকার্নি; শিবাজি সাতাম এবং নীনা কুলকার্নি প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চলচ্চিত্রের মুক্তির বছরে জাতীয় পুরস্কার কমিটি একে শ্রেষ্ঠ মারাঠি চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত করেছিল।
- কাবাদাসে - (২০০৫)
কাবাদাসে উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে এই চলচ্চিত্রের পটভূমি তৈরি করা হয়েছিল। এটা হল একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত বর্গের পরিবারের বাঁচার সংগ্রাম সম্পর্কে এক কাহিনি; সময়টা ছিল পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক নাগাদ। আর এই বিয়োগান্তক কাহিনি হল এর নায়ক জনার্দনকে নিয়ে। এই চলচ্চিত্রের অনেক মনোনয়ন আছে, এবং অম্রুতা সুভাষ 'জি গৌরব' এবং 'স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড' এগুলোর জন্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। চরিত্র চিত্রণে ছিলেন: দিলীপ প্রভাবলকর, নীনা কুলকার্নি, সুবোধ ভাবে, অম্রুতা সুভাষ এবং এক বিশেষ চরিত্রে মর্কন্দ আনাসপুরে। এই চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন রাজু ফির্কে। মহান সাহিত্যিক বিজয় তেন্ডুলকর এই চলচ্চিত্রে দিলীপ প্রভাবলকরের শ্রেষ্ঠ কাজ দেখে মি. প্রভাবলকরকে তাঁর কাজের জন্যে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
নগণ্য বস্তু
সম্পাদনাজয়বন্ত দলবি কলেজে প্রবেশের আগে মুম্বই শহরের চিকিৎসক সমূহ শিরোলকর হাই স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছিলেন।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ https://www.indianetzone.com/29/jaywant_dalvi_indian_theatre_personality.htm
- ↑ https://www.hindustantimes.com/tv/hasratein-a-story-about-infidelity-and-complicated-relationships/story-oJRyze947qoXW0kbfExxFO.html
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২০।
- ↑ https://www.mumbaitheatreguide.com/dramas/hindi/sandhyachaya.asp#
- ↑ https://timesofindia.indiatimes.com/city/pune/vikram-gokhale-supports-caa-remembers-lagoo/articleshow/73281112.cms
- ↑ https://www.veethi.com/india-people/jaywant_dalvi-profile-8608-25.htm