জগৎ সুন্দর মল্ল

নেপালি লেখক

জগৎ সুন্দর মল্ল (১৮৮২ - ১৯৫২) (দেবনাগরী: जगत सुन्दर मल्ल) হলেন একজন নেপালি শিক্ষক ও লেখক, যিনি সাধারণ মানুষের শিক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।[][]

জগৎ সুন্দর মল্ল
জগৎ সুন্দর মল্ল কৃত নেপাল ভাষায় ঈশপের গল্প এর অনুবাদ, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত

জগৎ সুন্দর সরকারি বাধা উপেক্ষা করে তার গৃহে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নেপালের তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাণা রাজারা দেশে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের বিরোধী ছিলেন।[][][] তিনি ইংরেজি শিক্ষায় জোর দেন এবং সেই সাথে নেপালি ভাষাগুলোয় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করেন। কেননা, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শিশুদের তাদের মায়ের ভাষায় কিছু শেখানো হলে তারা খুব দ্রুত শিখে নেয়।[][] এছাড়া নেপাল ভাষার চার স্তম্ভের অন্যতম হিসেবেও তাকে সম্মানিত করা হয়।[]

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

জগৎ সুন্দর ভক্তপুরের খৌমায় মল্ল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বিষ্ণু ধর এবং মায়ের নাম জগৎ লক্ষ্মী। ১০ বছর বয়সে তারা কাঠমান্ডুর অসনে স্থানান্তরিত হন এবং জগৎ সুন্দর দরবার হাই স্কুলে ভর্তি হন। এটি তৎকালে নেপালের একমাত্র আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। দশম শ্রেণি পাশ করার পর মল্ল কলকাতায় যান। সেখানে স্কটিশ চার্চ স্কুল থেকে প্রবেশিকা শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। জগৎ সুন্দর জনক লক্ষ্মী মল্লের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

জগৎ সুন্দর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ভক্তপুরের খৌমায় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তিনি ইংরেজি এবং নেপাল ভাষা শিক্ষা দিতেন।[] ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে মল্ল ও তার ছোট ভাই পদ্ম সুন্দর মল্ল উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপানে যান। কেননা তৎকালীন নেপালে উচ্চ শিক্ষা উপলব্ধ ছিল না। দুইজনের সংস্থানের জন্য যথেষ্ট অর্থ না থাকায় জগৎ সুন্দর ছোট ভাই পদ্ম সুন্দরকে জাপানে রেখে দেশে ফিরে আসেন।[]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশে এসে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারের গুপ্তচর সন্দেহে জগৎ সুন্দরকে আটক করা হয়। তাকে দ্বারভাঙ্গায় প্রায় দেড় বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে নেপাল সরকার কর্তৃক তার নেপালি নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে জগৎ সুন্দর দেশে ফিরে আসেন। তবে অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগের কারণে নেপাল সরকারের রোষের মুখে পড়েন।[] মানসিক চাপ সত্ত্বেও জগৎ সুন্দর শিক্ষকতা ও পাঠ্যবই লেখা চালিয়ে যান।

সাহিত্যকর্ম

সম্পাদনা

জগৎ সুন্দর মল্লের উল্লেখযোগ্য কর্ম হলো:

  • ইংরেজি-নেপাল ভাষা-ইংরেজি অভিধান
  • ঈসপন দয়েকাতগু বাখন (নেপাল ভাষা ঈশপের গল্প এর অনুবাদ, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত)
  • পার্বটিয়ায় ইংরেজি ব্যাকরণ
  • গোর্খালি আংরেজি ফার্স্ট বুক
  • নেপালি আংরেজি ফার্স্ট বুক (নেপাল ভাষা)[১০]

সম্মাননা

সম্পাদনা

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ভক্তপুর পৌরসভা শহরে জগৎ সুন্দর মল্লের সম্মানে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করে।[] ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে কাঠমান্ডুতে তার নামে নেপাল ভাষা মাধ্যমের বিদ্যালয় "জগৎ সুন্দর বৌনেকুঠি" প্রতিষ্ঠা করা হয়।[১১] কাঠমান্ডু মহানগরপালিকা শহরের ঐতিহাসিক অংশে তার সম্মানে "জগৎ সুন্দর মার্গ" নামে একটি সড়কের নামকরণ করে।[১২]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Don Messerschmidt (জুন ২০০৯)। "A Piece of Charcoal and the Makings of a Poet: Kesar Lall"ECS Nepal। ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
  2. Adams, Barbara (২০০৪)। "Master Jagat Sundar Malla: A prophet before his time"Barbara's Nepal। Adroit Pub। আইএসবিএন ৮১৮৭৩৯২৪৪৪.
  3. Savada, Andrea Matles, সম্পাদক (১৯৯১)। "Education under Rana Rule"Nepal: A Country Study। U.S. Library of Congress। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
  4. Hoek, Bert van den; Shrestha, Bal Gopal (জানুয়ারি ১৯৯৫)। "Education in the Mother Tongue: The Case of Nepal Bhasa" (পিডিএফ)CNAS Journal। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১২  Page 74.
  5. Hridaya, Chittadhar (1982, third ed). Jheegu Sahitya ("Our Literature"). Kathmandu: Nepal Bhasa Parisad. Page 84.
  6. "Contributions to Nepalese Studies, Volume 22"। Institute of Nepal and Asian Studies, Tribhuvan University। ১৯৯৫।  Page 74.
  7. Tuladhar, Prem Shanti (2000). Nepal Bhasa Sahityaya Itihas: The History of Nepalbhasa Literature. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬-০০-X. Page 88.
  8. Hridaya, Chittadhar (1982, third ed). Jheegu Sahitya ("Our Literature"). Kathmandu: Nepal Bhasa Parisad. Page 85.
  9. Tuladhar, Kamal Ratna (২৬ এপ্রিল ২০০৯)। "The first Nepali in America"The Kathmandu Post। পৃষ্ঠা 6। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. Shrestha, Bal Gopal (জানুয়ারি ১৯৯৯)। "The Newars: The Indigenous Population of the Kathmandu Valley in the Modern State of Nepal)" (পিডিএফ)CNAS Journal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১২  Page 88.
  11. Gellner, David N. (২০০৪)। "Children's Voices from Kathmandu and Lalitpur, Nepal"Journal of Asian and African Studies। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২ . Page 8.
  12. "Addressed Road Network Map"। Kathmandu Metropolitan City। ৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২