জওহর মুসায়েভিচ দুদায়েভ (রুশ: Джоха́р Муса́евич Дуда́ев; ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ – ২১ এপ্রিল ১৯৯৬) ছিলেন সোভিয়েত বিমানবাহিনীর একজন জেনারেল এবং একজন চেচেন জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীন চেচেন রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

জওহর দুদায়েভ
দুদিন মুসা-খান্ত জওহর
Дудин Муса-кӀант Джохар
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্রের ১ম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
৯ নভেম্বর ১৯৯১ – ২১ এপ্রিল ১৯৯৬
উপরাষ্ট্রপতিসেলিম-খান ইয়ান্দারবিয়েভ
উত্তরসূরীসেলিম-খান ইয়ান্দারবিয়েভ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মজওহর মুসায়েভিচ দুদায়েভ
Дудин Муса-кIант Жовхар

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪[]
ইয়ালখোরি, সোভিয়েত চেচেন–ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন
মৃত্যু২১ এপ্রিল ১৯৯৬(1996-04-21) (বয়স ৫২)
চেচনিয়া, রাশিয়া
জাতীয়তাচেচেন
রাজনৈতিক দলসোভিয়েত ইউনিয়নের সাম‍্যবাদী দল (১৯৬৮)
চেচেন জনগণের নিখিল-জাতীয় কংগ্রেস (১৯৯০)
দাম্পত্য সঙ্গীআল্লা দুদায়েভা
সন্তান
জীবিকাসামরিক বৈমানিক
ধর্মসুন্নি ইসলাম
পুরস্কারঅর্ডার অফ দ্য রেড স্টার
অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যসোভিয়েত ইউনিয়ন সোভিয়েত ইউনিয়ন
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র
শাখাসোভিয়েত বিমানবাহিনী
ইচকেরিয়ার সশস্ত্রবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৬২–১৯৯০
১৯৯১–১৯৯৬
পদমেজর জেনারেল
কমান্ড৩২৬তম ভারী বোমারু বিমান ডিভিশন (১৯৮৭–১৯৯১)
সকল বাহিনী (সর্বাধিনায়ক, ১৯৯১–১৯৯৬)
যুদ্ধসোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ
প্রথম চেচেন যুদ্ধ

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা
 
ফিনল্যান্ডের তার্তু শহরে দুদায়েভের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ

দুদায়েভ সোভিয়েত ইউনিয়নের সোভিয়েত চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রের ইয়ালহোরয়তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মুসা দুদায়েভ এবং রাবিয়াত দুদায়েভার ১৩তম সন্তান। তার জন্মের কয়েকদিন পরই সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের নির্দেশে অপারেশন লেন্টিল পরিচালিত হয়, এবং এর মাধ্যমে ককেশাস থেকে সকল চেচেনইঙ্গুশকে নির্বাসিত করা হয়। দুদায়েভ তার জীবনের প্রথম ১৩ বছর সোভিয়েত কাজাখস্তানে অতিবাহিত করেন। ১৯৫৭ সালে তার পরিবারকে চেচনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের অনুমতি প্রদান করা হয়[]। ১৯৫৭ সালে চেচেন ও ইঙ্গুশদের পুনর্বাসনের পর দুদায়েভ চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রের একটি সান্ধ্য বিদ‍্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং একজন বিদ্যুৎমিস্ত্রী হিসেবে গড়ে ওঠেন। ১৯৬২ সালে ভ্লাদিকাভকাজ শহরে ইলেকট্রনিক্সের ওপর দুই বছর পড়াশোনার পর তিনি তামবোভ উচ্চ সামরিক বৈমানিক বিদ‍্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালে দুদায়েভ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম‍্যবাদী দলে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সম্মানজনক ইউরি গ্যাগারিন বিমানবাহিনী আকাদেমিতে পড়াশোনা করেন। তিনি আল্লা নামক একজন রুশ কবি (এবং একজন সোভিয়েত সেনা কর্মকর্তার মেয়ে)-কে বিয়ে করেন। তাদের দু'জনের এক কন্যা ও দুই পুত্রসহ মোট তিনজন সন্তান ছিল[]

সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৬২ সালে দুদায়েভ সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ক্রমে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। দুদায়েভ সাইবেরিয়াইউক্রেনে একটি কৌশলগত বোমাবর্ষণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, এবং আফগান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য অর্ডার অফ দ্য রেড স্টারঅর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার পদক লাভ করেন[] ১৯৮৬–৮৭ সালে দুদায়েভ পশ্চিম আফগানিস্তানে বিমান হামলায় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দুদায়েভের অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদিন বাহিনীর বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেন[][][][]। দুদায়েভ নিজে অবশ্য এই অভিযোগটি অস্বীকার করেন[]। সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে দুদায়েভ দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন, এবং এস্তোনিয়ার তার্তুতে সোভিয়েত লং রেঞ্জ এভিয়েশনের ৩২৬তম হেভি বম্বার এভিয়েশন ডিভিশনের কমান্ডার নিযুক্ত হন। সেখানে অবস্থানকালে ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত দূরপাল্লার কৌশলগত বোমারু বিমান বহরের কমান্ডার ছিলেন[][]

তিনি তার্তুর সেনানিবাসেরও কমান্ডার ছিলেন। তিনি এস্তোনীয় ভাষা শেখেন এবং এস্তোনীয় জাতীয়তাবাদের প্রতি বিশেষ সহনশীলতা প্রদর্শন করেন। ১৯৯০ সালের শরৎকালে তিনি এস্তোনীয় টেলিভিশন ও আইন পরিষদ বন্ধ করে দেয়ার জন্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করেন[][]। এজন্য ১৯৯০ সালে তার ডিভিশনকে এস্তোনিয়া থেকে প্রত্যাহার করা হয়, এবং দুদায়েভ সোভিয়েত সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।

তার্তুতে ৮ উলিকোলি স্ট্রিটের যে বাড়িটিতে দুদায়েভ কর্মরত ছিলেন সেখানে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি গ্রানাইট-নির্মিত ফলক রয়েছে[১০]। বাড়িটিকে এখন 'হোটেল কারক্লে'তে রূপান্তরিত করা হয়েছে, এবং দুদায়েভের ব্যবহৃত ঘরটিকে 'দুদায়েভের কক্ষ' নামকরণ করা হয়েছে[১১]

চেচেন রাজনীতি

সম্পাদনা

১৯৯০ সালের মে মাসে দুদায়েভ চেচেন রাজধানী গ্রোজনিতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি সেখানকার অনানুষ্ঠানিক বিরোধী দল অল-ন্যাশনাল কংগ্রেস অফ দ্য চেচেন পিপল (এনসিসিএইচপি)-এর কার্যনির্বাহী কমিটির প্রধান নির্বাচিত হন। এই দলটি সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি পৃথক ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্র হিসেবে সার্বভৌমত্ব লাভে পক্ষপাতী ছিল (সেসময় চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রটি ছিল সোভিয়েত রুশ প্রজাতন্ত্রের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র)।

১৯৯১ সালের আগস্টে চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রের কমিউনিস্ট নেতা ডোকু জাভগায়েভ ১৯৯১ সোভিয়েত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন নি। অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যেতে আরম্ভ করে এবং এর গঠনকারী প্রজাতন্ত্রগুলো পতনোম্মুখ ইউনিয়নটি থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সুযোগে দুদায়েভ ও তার সমর্থকরা জাভগায়েভ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এনসিসিএইচপি-র যোদ্ধারা স্থানীয় সুপ্রিম সোভিয়েতের বৈঠকের সময় আক্রমণ করে এবং চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সরকারের পতন ঘটায়। গ্রোজনি টেলিভিশন স্টেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনও তারা দখল করে নেয়।

চেচনিয়ার রাষ্ট্রপতি

সম্পাদনা

১৯৯১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত একটি বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে দুদায়েভ ইচেকরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং এককভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রজাতন্ত্রটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। ১৯৯১ সালের নভেম্বরে তৎকালীন রুশ রাষ্ট্রপতি বোরিস ইয়েলৎসিন গ্রোজনিতে সৈন্য প্রেরণ করেন, কিন্তু দুদায়েভের সৈন্যরা তাদেরকে বিমানবন্দর ত্যাগে বাধা দিলে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। রাশিয়া প্রজাতন্ত্রটির স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে আরো বলপ্রয়োগ করতে দ্বিধান্বিত হয়। এই সময় থেকে চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্র কার্যত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

প্রথমদিকে জর্জিয়ার সঙ্গে দুদায়েভের সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল এবং জর্জিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি জভিয়াদ গামসাখুর্দিয়া দুদায়েভকে নৈতিক সমর্থন প্রদান করেন। ১৯৯১ সালে গামসাখুর্দিয়া ক্ষমতাচ্যুত হলে তাকে চেচনিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করা হয়, এবং তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুদায়েভের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। গ্রোজনিতে অবস্থানকালে তিনি প্রথম "নিখিল ককেশীয় সম্মেলন" আয়োজনে সহায়তা করেন। ওই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো এই সম্মেলনে যোগদান করে। দুদায়েভের ইচকেরিয়া জর্জিয়া ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি লাভ করে নি।

১৯৯২ সালের জুনে ক্রমবর্ধমান ইঙ্গুশ-ওসেটীয় সংঘর্ষের মধ্যে চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৯১ সালে চেচনিয়া সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করলে ইঙ্গুশেতিয়া রুশ ফেডারেশনে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ইঙ্গুশেতিয়া নামে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালে দ্বিখণ্ডিত ইচকেরিয়া (চেচনিয়া) রাষ্ট্রটি পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। একই বছর চেচেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রুশ ভাষায় শিক্ষা প্রদান বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘোষণা করা হয় যে, চেচেন ভাষা ১৯৩০-এর দশক থেকে প্রচলিত সিরিলীয় লিপির পরিবর্তে লাতিন লিপিতে লেখা হবে। রাষ্ট্রটি নিজস্ব মুদ্রা ও ডাকটিকেটও ছাপতে আরম্ভ করে। দুদায়েভের প্রথম অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে একটি অধ্যাদেশ রাষ্ট্রের সকলকে অস্ত্র বহনের অধিকার প্রদান করে।

দুদায়েভের অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষভাবে পরিচালিত অর্থনৈতিক নীতিসমূহ শীঘ্রই চেচনিয়ার অঅর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলে এবং অঞ্চলটিকে অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত করে। ইচকেরিয়ার অ-চেচেন অধিবাসীরা প্রজাতন্ত্রটিতে ক্রমবর্ধমান অপরাধ এবং স্থানীয় সরকারের সে সম্পর্কে উদাসীনতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে প্রজাতন্ত্রটি ত্যাগ করে[১২]। ১৯৯৩ সালে চেচেন আইনসভা দুদায়েভ চেচনিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন এই অভিযোগে তার জনসমর্থন পরীক্ষা করার জন্য একটি গণভোট আয়োজনের চেষ্টা করে। প্রত্যুত্তরে দুদায়েভ আইনসভা ও অন্যান্য ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করেন। ১৯৯৪ সালের গ্রীষ্মকালের প্রথমদিকে সশস্ত্র চেচেন বিরোধী দলসমূহ রুশ আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় বলীয়ান হয়ে দুদায়েভকে বলপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েকটি প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়।

প্রথম চেচেন যুদ্ধ

সম্পাদনা

১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর রুশ বাহিনী গ্রোজনি বিমানবন্দরে বোমাবর্ষণ করতে আরম্ভ করে এবং চেচেন বিমানবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। জবাবে ইচকেরিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং সৈন্যসমাবেশ আরম্ভ করে। ৬ ডিসেম্বর দুদায়েভ এবং রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাভেল গ্রাচেভ আর বলপ্রয়োগ না করার বিষয়ে একমত হন। এর পাঁচ দিন পরেই ১১ ডিসেম্বর রুশ সৈন্যরা চেচনিয়া আক্রমণ করে। দুদায়েভের দুই ছেলের মধ্যে একজন যুদ্ধের প্রথমদিকে নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হলেও তা ছিল ভ্রান্তিজনক (উভয়েই এখনো বেঁচে আছেন)[১৩]

গ্রোজনির পতনের আগে দুদায়েভ রাষ্ট্রপতি ভবন ত্যাগ করে তার বাহিনীর সঙ্গে দক্ষিণ দিকে চলে যান এবং ১৯৯৫ সাল জুড়ে চেচেনদের প্রাচীন রাজধানী ভেদেনোর একটি ক্ষেপণাস্ত্ররোধী আশ্রয়ে থেকে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন। প্রচলিত যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও তিনি জোর দিতে থাকেন যে, তার বাহিনী বিজয়ী হবে, এবং চেচেন গেরিলারা পুরো দেশজুড়ে রুশ সৈন্যদের ওপর বিক্ষিপ্ত আক্রমণ পরিচালনা করে তাদের মনোবল ভেঙে ফেলে। দুদায়েভ কর্তৃক নিযুক্ত ইচকেরিয়ার মুফতি আখমাদ কাদিরভ রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। প্রতিবেশী দাগেস্তানসহ উত্তর ককেশীয় মুসলিম প্রজাতন্ত্রগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রসমূহ ও ইরান থেকে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকরা দলে দলে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য চেচনিয়ায় আসতে থাকে।

মৃত্যু

সম্পাদনা

১৯৯৬ সালের ২১ এপ্রিল দুদায়েভ স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারকালে একটি রুশ পরিদর্শন বিমান তার ফোনকলটি ইন্টারসেপ্ট করে এবং তার অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। এরপর দুইটি রুশ যুদ্ধবিমান (১টি এসইউ-২৪এমআর ও ১টি এসইউ-২৫) থেকে নিক্ষিপ্ত দুইটি লেজার-চালিত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনি নিহত হন[১৪]। ধারণা করা হয়, সেসময় দুদায়েভ মস্কোর দুমার একজন উদারপন্থী সদস্যের (সম্ভবত কনস্তান্তিন বোরোভয় সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন[১৫]। এই অভিযানের পূর্ণ বিবরণ রুশ সরকার কখনোই প্রকাশ করে নি। বেশ কিছুদিন ধরেই রুশ পরিদর্শন বিমান ওই অঞ্চলের স্যাটেলাইট যোগাযোগের ওপর নজর রাখছিল এবং দুদায়েভের প্রকাশিত বক্তৃতাগুলো থেকে তার কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে সেই নমুনার সদৃশ কন্ঠস্বর খুঁজে বেড়াচ্ছিল। মৃত্যুর সময় দুদায়েভের বয়স হয়েছিল ৫২ বছর[১৬]

চেচেন গেরিলা নেতা শামিল বাসায়েভ টেলিভিশনে দুদায়েভের মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করেন[১৭]। চেচেন উপ-রাষ্ট্রপতি সেলিম-খান ইয়ান্দারবিয়েভ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুদায়েভের স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৯৯৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর দুদায়েভের যুদ্ধকালীন প্রধান সেনাপতি আসলান মাসখাদভ তার স্থলাভিষিক্ত হন।

প্রভাব

সম্পাদনা
 
লাতভিয়ার রিগায় জওহর দুদায়েভ এভিনিউতে বাড়ির নম্বর
  •   ইউক্রেন – ১৯৯৬ সালে ইউক্রেনের লভিভ শহরের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় вулиця Джохара Дудаєва (জওহর দুদায়েভ স্ট্রিট), এবং পরবর্তীতে আইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক[১৮][১৯]খেমেলনিতস্কি[২০] শহরের দুইটি রাস্তারও তার নামে নামকরণ করা হয়। ২০১৪ সালে দনবাসের যুদ্ধ আরম্ভ হলে দুদায়েভের নামে প্রাক্তন চেচেন জেনারেল ইসা মুনায়েভের নেতৃত্বাধীন একটি ইউক্রেনপন্থী স্বেচ্ছাসেবক ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয়[১৮]
  •   ইচকেরিয়া – চেচনিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজধানীকে ১৯৯৭ সালে চেচেনরা কার্যত স্বাধীনতা লাভের পর জওহর-গালা (পরবর্তীতে জওহর) নামকরণ করে। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের পর রুশ কর্তৃপক্ষ শহরটির নাম পরিবর্তন করে আবার 'গ্রোজনি' রাখে।
  •   এস্তোনিয়া – এস্তোনিয়ার তার্তু শহরে বারক্লে হোটেলের একটি বৃহৎ কক্ষের (যেটি একসময় দুদায়েভের কার্যালয় ছিল) নামকরণ করা হয়েছে দুদায়েভ স্যুইট
  •   জর্জিয়া – জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসিতে জওহর দুদায়েভের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে[২১]
  •   তুরস্ক – দুদায়েভের মৃত্যুর পর তুরস্কের বেশ কয়েকটি স্থানের নাম পরিবর্তন করে তার নামে রাখা হয়েছে, যেমন- ইস্তাম্বুলের Şehit Cahar Dudaev Caddesi (শহীদ জওহর দুদায়েভ স্ট্রিট) এবং Şehit Cahar Dudayev Parki (শহীদ জওহর দুদায়েভ উদ্যান), আঙ্কারার Cahar Dudayev Meydanı (জওহর দুদায়েভ স্কয়্যার), আদাপাজারিতে Şehit Cahar Dudaev Parkı (শহীদ জওহর দুদায়েভ উদ্যান) এবং সিভাসের Şehit Cevher Dudaev Parkı (শহীদ জওহর দুদায়েভ উদ্যান)[২২]
  •   পোল্যান্ড – ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে একটি মোড়ের নামকরণ করা হয় Rondo Dżochara Dudajewa (জওহর দুদায়েভ মোড়)[২৩]
  •   বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা – বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার গোরাদজে শহরে দুদায়েভের স্মরণে একটি রাস্তার নাম Ulica Generala Džohara Dudajeva (জেনারেল জওহর দুদায়েভ স্ট্রিট) রাখা হয়েছে।
  •   লাতভিয়া – ১৯৯৬ সালে লাতভিয়ার রাজধানী রিগায় একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে Džohara Dudajeva gatve (জওহর দুদায়েভ এভিনিউ)।
  •   লিথুয়ানিয়া – লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের ভেরিনাস জেলায় একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে Džocharo Dudajevo skveras (জওহর দুদায়েভ স্কয়্যার)[২৪]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Конец мятежного генерала Джохара Дудаева | KM.RU
  2. Biography of Dzokhar Dudaev, Kavkazy Uzel, 25 June 2007
  3. James Hughes, Chechnya: from nationalism to jihad p. 22
  4. Christopher Marsh, Nikolas K. Gvosdev, Civil Society and the Search for Justice in Russia, p 148
  5. John B. Dunlop, Russia Confronts Chechnya: Roots of a Separatist Conflict, p. 110
  6. John B. Dunlop, Russia Confronts Chechnya: Roots of a Separatist Conflict, p 111
  7. Shireen T. Hunter (২০০৪)। Islam in Russia: The Politics of Identity and security (illustrated সংস্করণ)। M.E. Sharpe। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 0-7656-1283-6 
  8. "Interview with Alla Dudaeva, Sobesednik.ru 2006"। ৭ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  9. Valeriĭ Aleksandrovich Tishkov (২০০৪)। Chechnya: Life in a War-Torn Society (illustrated সংস্করণ)। University of California Press। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 0-520-23888-5। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১১ 
  10. "Džohhar Dudajevi mälestustahvel"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  11. Postimees, 8 May 1996: "Nimeline tänav ja orden Dzhohhar Dudajevile" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ জুন ২০০৭ তারিখে
  12. Refugees and Diaspora ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জুন ২০১৪ তারিখে Chechnya Advocacy Network
  13. Семья Джохара Дудаева нашлась в Литве[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (Kommersant, 25 May 2006)
  14. "Archived copy"। ৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৪ 
  15. Robert Young Pelton (২ মার্চ ২০১২)। "Kill the messenger"Foreign Policy। ১৬ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  16. 'Dual attack' killed president, BBC News, 21 April 1999
  17. Chechen leader confirmed dead; Supporter says freedom fight unaffected ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে CNN, 24 April 1996
  18. Chechen fighter transfers struggle against Kremlin to Ukraine, Chechen fighter transfers struggle against Kremlin to Ukraine], Kyiv Post (27 May 2014)
  19. Головатий М. 200 вулиць Івано-Франківська. — Івано-Франківськ: Лілея-НВ, 2010. — С. 144—145
  20. Як у Хмельницькому Джохара Дудаєва вшановували at khm.depo.ua (ukrainian)
  21. "ვაკე-საბურთალოს რაიონი"। ১১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  22. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  23. Warsaw's Dudaev move irks Moscow BBC News, 21 March 2005
  24. [১]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা