জংলি যশ

কীটপতঙ্গের প্রজাতি

জংলি যশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Thaumantis diores(Doubleday))[] হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় দেখতে পাওয়া একটি প্রজাপতি যেটি নিমফ্যালিডি পরিবারের মরফিনি উপপরিবারের অন্তর্ভুক্ত বৃহদাকার প্রজাতি। ইভান্স-এর মতানুসারে ভারতীয় পরিমণ্ডলে এই প্রজাতি দুর্লভ নয়, আবার উইন্টার ব্লাইথ জানিয়েছেন ভারতে এদের সাধারণত খুব বেশি দেখা যায় না।[]

জংলি যশ
Jungle Glory
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Nymphalidae
গণ: Thaumantis
প্রজাতি: T. diores
দ্বিপদী নাম
Thaumantis diores
Doubleday, 1845

জংলি যশ প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৯৫-১১৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[][]

উপপ্রজাতি

সম্পাদনা

ভারতে প্রাপ্ত জংলি যশের উপপ্রজাতি হল-[]

  • Thaumantis diores diores Doubleday, 1845 – Assam Jungleglory

বিস্তৃতি

সম্পাদনা

জংলি যশ ভারত (সিকিম[] থেকে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত)[],[] মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি উপপ্রজাতিকে তাইওয়ানে পাওয়া যায় এবং এটিকে উত্তর থাইল্যান্ড এবং উত্তর ভিয়েতনামে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হয়।[][][] এটিকে বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।[]

বর্ণনা

সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই ডানার উপরিতল কালচে বাদামি (dusky brown)। সামনের ডানার শীর্ষ (apex) ও টারমেন্ প্রায় গোলাকৃতি। সামনের ডানায় কোস্টার নিচে ৮ নং শিরা থেকে উৎপন্ন হয়ে একটি চিত্রাভ ও উজ্জ্বল (iridescent) চওড়া, তির্যক নীল ডিসকাল বন্ধনী ডরসাম-এর দিকে খানিকটা নেমে গেছে যার উপরিভাগ চ্যাপ্টা ও নিম্নভাগ গোলাকার। উক্ত বন্ধনীটি বাইরের দিকে উজ্জ্বল চকচকে রুপালি আভাযুক্ত। পিছনের ডানার মধ্যভাগে অনুরূপ একটি গোলাকার ঝলমলে নীল পটি বর্তমা। সদ্যোজাত তাজা নমুনাতে পিছনের ডানার গোলাকার ঝলমলে নীল পটিটি ডানার গোড়ার (base) দিক পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। পুরুষ নমুনায় পিছনের ডানার উপরিতলে গোড়ার (base) কাছাকাছি সেল থেকে একটি টিকি-র (tuft) মতো অংশ দেখা যায়।

স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই ডানার নিম্নতল উজ্জ্বল রেশমি-বাদামি (silky brown) ও কালচে বাদামি। উভয় ডানায় টার্মিনাল, সাব-টার্মিনাল ও পোস্ট-ডিসকাল অংশজুড়ে শীর্ষ থেকে টরনাস অবধি চওড়াভাবে ফ্যাকাশে বাদামি। পোস্ট-ডিসকাল সাদা প্রান্তরেখা বা মার্জিন ও আঁকাবাঁকা ঢেউখেলানো সাব-টার্মিনাল রেখার মধ্যবর্তী অংশ নীলচে-রুপালি আঁশে ঘনভাবে ছাওয়া। সামনের ডানায় দু-জোড়া তির্যক, আঁকাবাঁকা কালচে পুরু মার্কা বা দাগ (brand) সেলের মধ্যে দিয়ে গেছে। কোস্টা থেকে ১ নং শিরমধ্য (interspace) পর্যন্ত অনুরূপ ডিসকাল মার্কা বা দাগ (brand) দেখা যায়। পিছনের ডানায় বেসাল (গোড়ার) ও ডিসকাল অংশে উপরের ডানার অনুরূপ দুটি আঁকাবাঁকা মার্কা বা দাগ (brand) কোস্টার নিচ থেকে উৎপন্ন হয়ে ডরসাম-এর উপরে ১b নং শিরা পর্যন্ত বিস্তৃত। শিরামধ্য (interspace) ২ ও ৬ এ দুটি ডিম্বাকৃতি ছোপ চোখে পরে; ২ নং শিরামধ্যের ছোপটি হলদে-সাদা এবং ৬ নং শিরামধ্যের ছোপটি অপেক্ষ্যাকৃত বড় ও কালচে-নীল। টরনাল ছোপটি ছোট ও কালচে-নীল।

স্ত্রী নমুনা পুরুষ অপেক্ষা আকারে বড়, অধিকতর ফ্যাকাশে ও অনুজ্জ্বল বর্ণযুক্ত। শুঙ্গ লাল; মাথা, বক্ষদেশ (thorux) ও উদর বাদামি বর্নের।[][১০]

এই বৃহদাকার প্রজাতির উড়ান ধীর ও বিশালাকার ডানা ঝাপটে ভূমির কাছাকাছি নিচ দিয়ে উড়ে বেড়ায়। ছায়াচ্ছন্ন ঘন ঝোপঝাড় দিনের বেলায় এদের ভীষণ পছন্দের বাসস্থান, তবে সন্ধ্যার সময় খোলা জায়গায় গাছের গুড়িতে বা ডালে মাঝেমাঝে এদের ডানা বন্ধ অবস্থায় বসে থাকতে লক্ষ্য করা যায়। ডানা মেলা অবস্থানে এই প্রজাতির দর্শন মেলে খুবই কদাচিৎ। সকালের দিকে প্রথমভাগে, গোধূলিবেলায় বা সায়াহ্নে এবং মেঘলা দিনে ইহারা সক্রিয় থাকে ও পাতায় বা সরু ডালে বসে রসপান করে। ছায়াচ্ছন্ন অঞ্চলে মাটির ভিজে ছোপ ও পচা ফলে এদের বসতে দেখা যায় এবং প্রচুর পরিমানে খ্যাদরস গ্রহণ করে (huge feeder)। পার্বত্য জঙ্গলে ও জঙ্গলের পথে ৮০০ থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতার মধ্যে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এদের বিচরণ চোখে পরে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Marrku Savela's Website on Lepidoptera Page on Thaumantis genus.
  2. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg 134.
  3. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩২০। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  4. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 357। আইএসবিএন 9789384678012 
  5. "Thaumantis diores Doubleday, 1845 – Jungleglory"। ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৯ 
  6. Sonam, Wangchuk Lepcha (২০২৩)। Thamblyok- A Guide to the Butterflies of Dzongu-Sikkim Himalaya। Sikkim: Noom Panang। পৃষ্ঠা 135। আইএসবিএন 9789356273757 
  7. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 159। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  8. Evans, W.H. (1932) The Identification of Indian Butterflies, pg 132-133.
  9. ১৩২ বছর পর সৌর প্রজাপতি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে দৈনিক সমকাল, প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
  10. Bingham, C.T. (১৯০৫)। The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma Butterflies1 (1st সংস্করণ)। London: Taylor and Francis, Ltd.।