শিবাজী
শিবাজী ভোঁসলে অথবা ছত্রপতি শিবাজী রাজে ভোঁসলে (১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬৩০ - ৩ এপ্রিল, ১৬৮০), (মারাঠি : छत्रपती शिवाजीराजे भोसले) হলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। শিবাজী বিজাপুরের আদিলশাহি সালতানাতের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং হেরে যান।[৩] তিনি স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের পত্তন করেন, যার রাজধানী ছিল রায়গড়ে।[৪] তিনি ১৬৭৪ সালের ৬ জুন মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজা 'ছত্রপতি' হিসেবে মুকুট ধারণ করেন।[৩][৪]
শিবাজী রাজে ভোঁসলে | |||||
---|---|---|---|---|---|
ছত্রপতি | |||||
রাজত্ব | ১৬৬৪ - ১৬৮০ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ৬ জুন, ১৬৭৪ | ||||
উত্তরসূরি | শম্ভোজী | ||||
স্ত্রীগণ | |||||
বংশধর | সম্ভাজী, রাজারাম এবং ছ'টি কন্যা | ||||
| |||||
পিতা | শাহজি | ||||
মাতা | জিজাবাঈ | ||||
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
শিবাজী হিন্দাভী স্বরাজ্যের (স্বাধীনতা) মতবাদকে সমর্থন দান করেন। তিনি মুুুঘল ও মুসলমানদের ওপর গুপ্ত হামলা করে মারাঠা শাসন পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তিনি তার সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনী এবং সুগঠিত শাসন কাঠামোর মাধ্যমে একটি দক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন।[৫] তিনি একজন কুশলী সামরিক কৌশলবিদ ছিলেন এবং গেরিলা যুদ্ধের ধারণার সূচনা করেন।
প্রথম জীবন
সম্পাদনাশিবাজি ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে শিবনেরি পার্বত্য দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শাহজী ভোঁসলে ও মাতা জীজাবাঈ। শিবাজির পিতা শাহজী বিজাপুরের সুলতানের অধীনে কার্যভার গ্রহণ করায়, শিশুপুত্র শিবাজীসহ জীজাবাঈ দাদাজী কোণ্ডদেব নামে এক বিচক্ষণ ব্রাহ্মণের তত্ত্বাবধানে পুনায় থেকে যান। ধর্মপরায়ণ মায়ের প্রভাব শিবাজীর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল। মায়ের কাছে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী শুনে শিশুকালেই শিবাজীর মনে বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঞ্চার হয়েছিল। মায়ের মতো কোণ্ডদেবও শিবাজীর চরিত্র গঠনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।[৬]
শিবাজীর রাজ্যজয়
সম্পাদনাবাল্যকালেই মহারাষ্ট্র দেশ সম্পর্কে এবং স্থানীয় পার্বত্য মাওয়ালি জনগোষ্ঠীরর সাথে শিবাজীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। এই মাওয়ালিদের নিয়েই তিনি সর্বপ্রথম বিশ্বস্ত এক সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। ১৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কোণ্ডদেবের মৃত্যুর পর, শিবাজী রাজ্যজয়ে মনোনিবেশ করেন। রোলিনসন (Rawlinson) মনে করেন যে, বিদেশী শাসন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করাই শিবাজীর রাজ্যজয়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। সম্পদের লোভে লুঠতরাজ করা তার অভিপ্রেত ছিল না। সরদেশাই বলেন, সারা ভারতে হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপন করাই শিবাজীর লক্ষ্য ছিল।[৬]
আফজল খাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
সম্পাদনাবিজাপুর রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে শিবাজী ১৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম তোরণা দুর্গটি দখল করে নেন। এরপর তিনি একে একে বড়মতি, রায়গড়, পুরন্দর, প্রভৃতি স্থানের দুর্গগুলি দখল করে নেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং শিবাজীকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিজাপুরের সুলতান শিবাজীর পিতা শাহজীকে কারারুদ্ধ করেন। এই অবস্থায় শিবাজী দাক্ষিণাত্যের মোঘল শাসককর্তা মুরাদের সাহায্য চান। বিজাপুরের সুলতান ভীত হয়ে শাহজীকে মুক্ত করে দেন। কিছুকাল শিবাজী নিশ্চুপ থাকেন। ১৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা ঔরাঙ্গজেবের সঙ্গে বিজাপুরের সুলতানের সংঘাতের সুযোগ নিয়ে শিবাজী জাওলি নামে এক অঞ্চল দখল করেন। ইতোমধ্যে ঔরাঙ্গজেব শাহজাহানের অসুস্থতার সংবাদে দিল্লী চলে গেলে, বিজাপুরের সুলতান শিবাজীকে দমন করার জন্য সেনাপতি আফজল খাঁকে পাঠান। আফজল খান শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেন। তাই আফজল খাঁ শিবাজীকে শান্তিচুক্তির জন্য শান্তি শিবিরে আমন্ত্রণ জানান। শিবাজি সন্দেহ করেছিলেন যে আফজল খাঁ তাকে গ্রেপ্তার বা আক্রমণ করতে পারে,[৭][ক] তাই তিনি তার পোশাকের নিচে বর্ম পরিধান করেছিলেন, তার বাম হাতে একটি বাঘনখ (ধাতব "বাঘের নখর") লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং ডান হাতে একটি খঞ্জর ধারণ করেছিলেন।[৯] তিনি আফজল খাঁকে আক্রমণ করেন।যা ঘটেছিল তা ঐতিহাসিক নিশ্চয়তার সাথে জানা যায় না, মূলত মারাঠা কিংবদন্তিগুলিই এই কাহিনি বলে; তবে, এটি নিশ্চিত যে দুজনের মধ্যে শারীরিক সংঘর্ষ হয়েছিল, যা আফজল খানের জন্য প্রাণঘাতী প্রমাণিত হয়।[খ] খানের খঞ্জর শিবাজির বর্ম ভেদ করতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু শিবাজি তাকে বিদীর্ণ করেন; এরপর শিবাজি তোপ দাগেন যা তার লুকিয়ে থাকা সৈন্যদের বিজাপুর সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণের সংকেত ছিল।[১১]
পরবর্তী প্রতাপগড়ের যুদ্ধে শিবাজির বাহিনী বিজাপুর সুলতানাতের সৈন্যদের নিরঙ্কুশভাবে পরাজিত করে। বিজাপুর সেনাবাহিনীর ৩,০০০-এরও বেশি সৈন্য নিহত হয়; এবং এক উচ্চপদস্থ সরদার, আফজল খাঁর দুই পুত্র এবং দুইজন মারাঠা প্রধান বন্দি হন।[১২] জয়ের পর, প্রতাপগড় দুর্গের নিচে শিবাজির নেতৃত্বে একটি মহা সমাবেশে বন্দি শত্রু কর্মচারী ও সৈন্যদের মুক্ত করে অর্থ, খাদ্য ও অন্যান্য উপহারসহ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়। মারাঠাদেরও যথাযথ পুরস্কৃত করা হয়।[১২]
শিবাজীর চরিত্র
সম্পাদনাশিবাজী ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সামান্য এক জায়গিরদারের অবহেলিত পুত্র শিবাজী নিজের প্রতিভাবলে স্বাধীন হিন্দু রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি শতধা বিভক্ত ও পারস্পরিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব-এ লিপ্ত মারাঠাদের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে এক শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। তার শাসননীতির লক্ষ্য ছিল ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতা। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের মতে-[৬]
“ | শিবাজী যে শুধুই মারাঠা জাতির স্রষ্টা ছিলেন এমন নয়, তিনি ছিলেন মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান জাতীয় স্রষ্টা | ” |
কিংবদন্তি
সম্পাদনারবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শিবাজী উৎসব কবিতায় বলেছিলেন:
“ | মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো 'জয়তু শিবাজি'। |
” |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Chhatrapati Shivaji। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 8128808265। অজানা প্যারামিটার
|authorname=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Shivaji the Great। পৃষ্ঠা 193। আইএসবিএন 8190200003। অজানা প্যারামিটার
|authorname 2=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|authorname 1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ক খ url=http://www.jstor.org/pss/2053980
- ↑ ক খ url=http://www.jstor.org/pss/4407933
- ↑ Purandare, Babasaheb। Raja Shivachhatrapati।
- ↑ ক খ গ ভারতের ইতিহাস। ১৮, ডঃ কার্তিক বোস স্ট্রীট, কলকাতা- ৭০০০০৯: প্রান্তিক। পুনঃ মুদ্রণ- মার্চ, ২০০২। পৃষ্ঠা ১৮৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Sarkar 1920, পৃ. 70।
- ↑ Gordon 2007, পৃ. 67।
- ↑ Haig & Burn 1960, পৃ. 22।
- ↑ Kulkarni, A. R. (২০০৮)। The Marathas (ইংরেজি ভাষায়)। Diamond Publications। আইএসবিএন 978-81-8483-073-6।
- ↑ Haig & Burn, The Mughal Period 1960।
- ↑ ক খ Sarkar, Shivaji and His Times 1920, পৃ. 75।
- ↑ সঞ্চয়িতা, পৃ:৩১২
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি