চৌর্যবৃত্তি

অনুমতি ব্যতীত অন্যের জিনিস নেয়া

চুরি (চৌরকার্য, হরণ, আত্মসাৎ) যে করে সে চোর (সংস্কৃত: চৌর, তস্কর)। চৌর্যবৃত্তি যার পেশা সে পেশাদার চোর। সমাজের চোখে চুরি অপরাধ এবং চোর অপরাধী

Paul-Charles Chocarne-Moreau, The Cunning Thief, 1931

চুরি মানে না বলে পরদ্রব্য নেওয়া। যেসব চোর চুরিকে জীবন ধারণের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে তাদেরকে পেশাদার চোর বলা হয়। চুরি দণ্ডণীয় অপরাধ। স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে চুরির দণ্ড(শাস্তি)দণ্ডদাতা বিভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় মালিকানা বিতর্কিত হলে চুরি প্রমাণ করা শক্ত। সাধারণতঃ দ্রব্যের মালিক নয়, হয় রাজা, নতুবা সরকারী শাসক, বা বিচারালয়ে বিচারপতি আইন অনুসারে চুরি প্রমাণিত (সব্যস্ত/সাবিত) হলে দণ্ড বিধান করেন।

অর্থ প্রসারণের ফলে চুরি মানে হতে পারে ছলে, বলে বা কৌশলে মালিকের বা তত্বাবধায়কের অজ্ঞাতে অথবা ব্যক্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে দ্রব্য গ্রহণ, ব্যবহার, বিক্রয়, বিলোপ(লোপাট) বা কুক্ষিগত/বেদখল করা (অনধিকার নিয়ন্ত্রণ)। কিন্তু কিছু শব্দের বিশেষ প্রাতিবেশিক অর্থ আছে:

সাধারণতঃ দ্রব্যের মালিকের বা তত্বাবধায়কের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে আত্মসাৎ করলে তাকে চুরি বলে।

সিঁধেল চোর

সম্পাদনা

সিঁধকাঠি দিয়ে সিঁধকেটে চুরি করে এমন চোর। এ পদ্ধতিতে চুরি করা সবচেয়ে কঠিন। অনেক দিন ধরে ভক্তি সহকারে একজন গুরুর কছে এ 'বিদ্যা' অর্জন করতে হয়। সিঁধকাঠি মানে; শাবল বা খুন্তির মত দণ্ড বিশেষ। সিঁধেল চোররা সিঁধকাঠি দিয়ে মাটির কাঁচাবাড়ি দেওয়ালেও গর্ত/সুড়ঙ্গ করে, অতঃপর ভিতরে গোপনে প্রবেশ করে চুরি করে। সিঁদকেটে চুরি করা খুবই বুদ্ধিমত্তার কাজ। সাহস এবং শিল্প দুটোই খুব বেশি পরিমাণ লাগে এই কাজে।

বর্তমানে কাঁচা বাড়ির পরিবর্তে পাকা বাড়ি, মানুষের (চোর) গুরু ভক্তি কমে যাবার সাথে সাথে এবং ডাকতি বেশি পরিমাণ লাভ জনক হবার কারণে সিঁধেল চোরদের বিলুপ্তি ঘটেছে।

ছ্যাঁচোর/ছিচকে চোর

সম্পাদনা

হয়তো "সিঁদকাটা" থেকে "ছিচকে" হয়ে গেছে। তবে শব্দটি ছোটখাট চুরি অর্থে ব্যবহার হয়। চুরির করতে ব্যর্থ হয়ে ভাঙচুর ইত্যাদি ক্ষতি করলে তাকেও ছ্যাঁচড়ামি বা ছ্যাঁচড়ামো বলে।

বাটপাড়

সম্পাদনা

এক চোরের চোরাই মাল অরেকজন চুরি (বাটপাড়ি) করলে দ্বিতীয়জনকে বাটপাড় বলে। কথায় বলে: "চোরের উপর বাটপাড়ি"। বাটপার সরাসরি চুরি না করেও বাটপার হতে পারে।যেমন বলা যায়, একজন লোক কিছু একটা বিক্রি করবে,সেই জিনিসের ত্রুটিগুলো গোপন করে বাড়তি গুণাগুণ যোগ করে সেই দ্রব্য বিক্রি করাও বাটপারি।

ছিনতাই

সম্পাদনা

অচকিতে অথবা বলপূর্বক হাত ধরা (বা অঙ্গে পরিহিত) দ্রব্য কেড়ে নিয়ে বাধা দেবার আগেই পলায়ন (চম্পট)। ছিনতাই যে করে সে ছিনতাইবাজ বা ছিনতাইকারী।

ডাকাতি

সম্পাদনা

ডাকাতি, বা ডাকেইতি (সাধারণতঃ দলবদ্ধভাবে) ভয় দেখিয়ে বা বাধা অগ্রাহ্য/অতিক্রম করে দ্রব্য অধিগ্রহণ। যারা ডাকাতি করে তারা "হারে রে রে" ইত্যাদি ভয় দেখানো "ডাক" ছেড়ে আসত তাই নাম ডাকাত বা ডাকাইত। তাদের সুসংগঠিত দল ও সুপরিকল্পিত কর্মপ্রণালী থাকে। যেমন ছদ্মবেশে অকুস্থল পরিদর্শন। টিকটিকি(চর) মোতায়েন। পুলিশকে ভূয়ো খবর দিয়ে বিভ্রান্ত করা। অতর্কিতে আক্রমণ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ। গাড়ি বা ঘোড়ায় পলায়ন ব্যবস্থা। পলায়নপথ পাহারা। পলায়নের পর ডেরায় আত্মগোপন ইত্যাদি।

আগেকার দিনে কিছু ডাকাতরা আগে থেকে হুমকি চিঠি দিয়ে আসত। খুব গর্বিত ডাকাতরা তাতে দিনক্ষণ ঘোষণা করে চ্যালেঞ্জ করত। অনেক ডাকাতরা কালী সাধক ছিল। তাদের পূজিত কালীকে ডাকাতে কালী বলা হয়। অনেক ডাকাতে কালীর সামনে কাপালিক ডাকাতরা নরবলি দিত।

রবিনহুডের মত জনপ্রিয়তাও অনেক ডাকাতের ছিল। এরা সমাজের এক অংশের কাছে দেবতার মত ভক্তি বা আনুগত্য পেত। যেমন চম্বলের ডাকু মান সিং

নানান কারণে সমাজে ডাকাত দলের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। দেশ অরাজক হলে এরকম হওয়া স্বাভাবিক। কিংবা, রাজপ্রতিনিধি অত্যাচারী হলে তার প্রতিবাদে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের চেষ্টায় কিছু মানুষ সংঘবদ্ধ হলে সরকার তাদের ডাকাত আখ্যা দেয়।

লুণ্ঠন/ লুট/ লুটপাট/ লুঠ/ লুঠতরাজ

সম্পাদনা

(সাধারণতঃ অতি শক্তিশালী বা দলবদ্ধ দস্যু/গুণ্ডার দ্বারা) জনসমক্ষে বলপ্রদর্শণ-পূর্বক চুরি বা সম্পত্তি নষ্ট করা।

রাজপথে রাহাযানি

সম্পাদনা

দিনে ডাকতি

যে অন্যকে ঠকায়।

ঠেঙাড়ে

সম্পাদনা

ফাঁসুড়ে

সম্পাদনা

কথার মার প্যাঁচে অথবা বিভিন্ন ছলে অন্যকে ফাসায়। বা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বিপদে ফেলে নিজের গা বাঁচানো ।

জোচ্চুরি

সম্পাদনা

"জুয়াচোর" থেকে শব্দটি এলেও শুধু জুয়াখেলায় নয় যেকোন প্রতারণাকে জোচ্চুরি বল।

আইন অনুসারে অপহরণ একটি অপরাধ যেখানে শিকারকে যথেষ্ট দূরত্ব থেকে নজর রাখা হয় ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেওয়া হয়। অপহরণ সংক্রান্ত আইনগুলি অপহরণের জন্য কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়িত করে। যেমন: মুক্তিপণ সংগ্রহ করা, কোনও অপরাধের কমিশনকে সহজতর করা, শারীরিক আঘাতের আঘাত দেওয়া বা কাউকে আতঙ্কিত করা।

ছেলেধরা

সম্পাদনা

শিশু বা কিশোর বয়সী ছেলেদের অপহরণ করাকে ছেলেধরা বলে। অসাধু ব্যক্তি বা চক্র অপহরণকৃত ছেলেদের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে সচেতন সমাজে অপরাধটি তেমন চোখে পড়ে না।

নারীপাচার চক্র

সম্পাদনা

হাইজ্যাক

সম্পাদনা

অন্যের সম্পদ বা কাউকে জোর জবরদস্তি করে তুলে নিয়ে যাওয়াকে বুঝায়। অনেক ক্ষেত্রে হাইজ্যাক করা বস্তুর বিনিময়ে মুক্তিপন চাওয়া হয়ে থাকে।

প্লেজিয়ারিজম

সম্পাদনা

অন্যের সৃষ্টিকে নিজের বলে চালানো (কুম্ভীলক)।

কর (ট্যাক্স) ফাঁকি

সম্পাদনা

কর ফাঁকি দেয়া অর্থাৎ প্রকৃত সম্পত্তিকে কম দেখিয়ে কর মওকুফ করার প্রচেষ্টা করা এক ধরনের চুরি।

সই চুরি

সম্পাদনা

সই (সাক্ষর) নকল করা।

হ্যাকিং

সম্পাদনা

ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্যের কম্পিউটার বা সিস্টেমের নিরাপত্তাকে ভেঙে (বা ফাঁকি দিয়ে) প্রবেশ করা।

নকল টাকা

সম্পাদনা

জাল টাকা নামে পরিচিত । আসল টাকার হুবুহু আরেক টাকা বানানোকে বুঝায়।

ক্লেপ্টোম্যানিয়া

সম্পাদনা

দরকার না থাকলেও চুরি করার অদম্য ইচ্ছার মানসিক রোগ